• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পেয়ে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু


সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭, ০৫:২৪ পিএম
মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পেয়ে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু

সাতক্ষীরা: একাত্তরের রণাঙ্গনে সরাসরি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেও স্বীকৃতি মেলেনি আব্দুল করিম গাজীর। স্বীকৃতি না পেয়ে যাচাই বাছাই কমিটির কাছে অপমানিত হয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলেন আব্দুল করিম গাজী। সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এই অভিযোগ করেন সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর গ্রামের আব্দুল করিম গাজীর মেয়ে ফতেমা খাতুন।

লিখিত অভিযোগে তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালের মে মাসে আমার পিতা আব্দুল করিম গাজী মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। টাকির আমবাগানে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। তাকে দেয়া হয় থ্রি নট থ্রি রাইফেল। এরপর তিনি ৯নং সেক্টরের আওতায় শোভনালী/কেয়ারগাতী/গোয়ালডাঙ্গা/ব্যাংদহা এলাকায় সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সে সময় তার যুদ্ধকালীন কমান্ডার অধিনায়ক ছিলেন, মো. আবুল খায়ের ও সন্তোষ কুমার দাশ। ৯নং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর এম এ জলিল। তার সহযোদ্ধা ছিলেন, আবুল খায়ের (লাল মুক্তিবার্তা নং-০৪০৪০১০১১৪), সন্তোষ কুমার দাশ (লাল মুক্তিবার্তা নং ০৪০৪০১০১১৩) ও আবু বক্কর ছিদ্দিক (লাল মুক্তিবাতা নং ০৪০৪০৭০৩১৬)।

এছাড়াও বিভিন্ন দপ্তরে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তার নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। এসব দালিলিক প্রমাণ থাকার পরও অজানা কারণে আমার পিতা মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে অন্তর্ভূক্ত না হাওয়ায় তিনি হতাশ ছিলেন। অভাবের কারণে তিনি খুলনায় রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তার কঠোর পরিশ্রমের টাকা দিয়ে আমাদের ৫ ভাই বোনকে মানুষ করেছেন। এত পরিশ্রমের মধ্যে তিনি ভেবেছিলেন এইবার যাচাই-বাছাইয়ে তিনি অবশ্যই স্বীকৃতি পাবেন। ১৭/২/১৭ তারিখে কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ হলরুমে এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সেখানেও ঘটল ভিন্ন ঘটনা। যাচাই-বাছাই কমিটির নেতৃবৃন্দ তাকে তো স্বীকৃতি দিলেন না বরং তাদের অপমান জনক বিভিন্ন মন্তব্যে আমার পিতার মন বিষিয়ে উঠেছিল। আর এ ব্যথা সহ্য করতে না পেরে পরদিন ১৮/২/১৭ তারিখে হার্ট অ্যার্টাকে মৃত্যু বরণ করেন।

ফতেমা খাতুন বলেন, গত ৯ ফেব্রুয়ারি আমরা জানতে পারি মুক্তিযোদ্ধাদের সরাসরি আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। এ খবর পেয়ে আমরা উপজেলা থেকে ফরম তুলে তা পূরণ করে বিকাল ৪টার মধ্যে জমা দেই। এছাড়া কর্তৃপক্ষ আমাদের অবগত করেন ১১/২/১৭ তারিখে সকাল ১০টায় উপজেলায় হাজির হতে হবে। সে মোতাবেক আমরা ১১/২/১৭ তারিখে সেখানে হাজির হই। সেদিন যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শেষে আমাদের ডেকে ডেপুটি কমান্ডার হাকিম সাহেব বলেন, ১৩/২/১৭ তারিখে চাম্পাফুল ইউনিয়নের যাচাই-বাছাই শুরু হবে। আমরা সেখানেও হাজির হই। কিন্তু সেখানে বলা হয় অনলাইনে আবেদন করা হয়েছে কি না। যদি করে থাকেন তাহলে তার কপি নিয়ে আসেন। সেখান থেকে ফিরে এসে ১৭/২/১৭ তারিখে সকল কাগজপত্র ও ৩ জন স্বাক্ষী নিয়ে উপজেলায় হাজির হই।

কিন্তু তারা আমার পিতার কাছে কোন প্রশ্ন না করে বলেন, যাচাই-বাছাই শেষ। আপনারা চলে যান। এ কথা শোনার পর আমার পিতা বলেন, আমার শরীরটা খারাপ লাগছে। তখন আমার পিতা এবং পিতার সহযোগি সন্তোষ দাশ তাদের হাত ধরে কান্নাকাটিও করেছেন। কিন্তু নেতৃবৃন্দ কোন কর্ণপাত না করে সময় শেষ বলে চলে যান। এই কথা শুনে কালিগঞ্জ থেকে আমরা উজিরপুরের উদ্দেশ্যে বের হই। কালিগঞ্জ থেকে উজিরপুর পর্যন্ত আমার পিতা অঝোরে কান্নাকাটি করেন এবং বলেন, ‘গরিবের জন্য কেউ নেই, আল্লাহ গরিবের জন্য কেউ নেই’। আমরা তাকে অনেক সান্তনা দেই। এ সময় তাকে অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি নিয়ে আসলে পরদিন রাতে তিনি মারা যান।

তিনি আরও বলেন, আমার পিতা আর কখনো ফিরে আসবেন না। তিনি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেও স্বীকৃতি না পেয়ে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি আর কখনো বলবেন না আমি মুক্তিযোদ্ধা। আজ আমার একটাই দাবি আমি যেন জাতির কাছে মাথা উচু করে পরিচয় দিতে পারি, আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার পর যাচাই-বাছাই কমিটির নেতৃবৃন্দের হাত পা ধরেও কোন লাভ হয়নি। তারা আমার পিতার সাথে খারাপ আচরণ করেন। আমি পিতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়ার দাবিতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ ব্যাপারে যুদ্ধকালীন কমান্ডার আবুল খায়ের ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ সরকার দু’জনই বলেন, একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে আব্দুল করিম গাজী আমাদের সহযোদ্ধা ছিলেন। কি কারণে তিনি তালিকাভুক্ত হতে পারেননি তা বোধগম্য নয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!