• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর

মুক্তির সংগ্রামে উত্তাল ছিল বাংলার মাটি


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২, ২০১৬, ০৫:১৭ পিএম
মুক্তির সংগ্রামে উত্তাল ছিল বাংলার মাটি

১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর। এদিন মুক্তির সংগ্রামে উত্তাল ছিল বাংলার মাটি। মুক্তিবাহিনীর গেরিলা আক্রমণ সম্মুখযুদ্ধের গতি পায়। আর অপ্রতিরোধ্য বাঙালির বিজয়ের পথে পাকিস্তানি বাহিনীর নিষ্ঠুর সব পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে থাকে।

বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে থাকে। আর অবরুদ্ধ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনেক মুক্তাঞ্চলের সৃষ্টি হয়। এদিকে পাকিস্তানি বাহিনী পঞ্চগড়ে রিংয়ের আকারে প্রথম ও দ্বিতীয় ডিফেন্স লাইন তৈরি করে। মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সহায়তায় গভীর রাতে পঞ্চগড় আক্রমণ করায় তারা পঞ্চগড় ছেড়ে চলে যায়।

এদিন চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনী উত্তরে ফটিকছড়ি ও রাউজান থানা এবং দক্ষিণে আনোয়ারার অধিকাংশ স্থান তাদের দখলে আনতে সক্ষম হয়। মুক্তিবাহিনী ঘোড়াশালে পাকবাহিনীর অবস্থানের ওপর চারদিক থেকে আক্রমণ করে ২৭ হানাদারকে হত্যা করতে সক্ষম হয়। এখান থেকে বেশকিছু গোলাবারুদও উদ্ধার করে মুক্তিবাহিনী। এদিকে আখাউড়া, পঞ্চগড়, ভুরুঙ্গামারী, কমলাপুর, বনতারা, শমশেরনগর ও পার্বত্য চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে প্রচণ্ড সংঘর্ষে হনাদার বাহিনী পিছু হটে যায়। এতে মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্ব দেন লে. মাসুদ, সুবেদার খালেক, লে. মতিন, মেজর সদরুদ্দিন ও ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার।

বোমা বিস্ফোরণে ঢাকার রামপুরা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র, চট্টগ্রামের পাঁচটি বিদ্যুৎ সাবস্টেশন ও দুটি পেট্রল পাম্প বিধ্বস্ত হয়। আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এলেও হানাদার বাহিনী তাদের বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে উঠে মুক্তিবাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে মুক্তিবাহিনী আবার তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করে তিন দিক থেকে শত্র“কে আক্রমণ করলে হানাদার বাহিনী আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে পালিয়ে যায়।

এদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেসের এক কর্মিসভায় বলেন, ‘সময় বদলেছে, তিন-চার হাজার মাইল দূর থেকে বর্ণের প্রাধান্য দিয়ে তাদের (পাকিস্তান) ইচ্ছামতো হুকুমনামা জানাবেন, তা মেনে নেয়া যায় না। ভারত আর নেটিভ রাজ্য নয়। আজ আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থের জন্য দেশের সর্বোচ্চ প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করব, ওইসব বৃহৎ দেশের ইচ্ছানুযায়ী নয়।’ তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
অপরদিকে পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থানরত জামায়াত নেতা গোলাম আযম সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় সরকার গঠিত হলে সে সরকারের নেতা অবশ্যই নুরুল আমিন হবেন। তিনি জাতীয় সরকারের পররাষ্ট্র, শিক্ষা এবং অর্থ দফতরের ভার পূর্ব পাকিস্তানিদের হাতে দেয়ার দাবি জানান। কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, এতে করে পূর্ব পাকিস্তানিদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি হবে। তাছাড়া পররাষ্ট্র দফতরের দায়িত্বে কোনো পূর্ব পাকিস্তানি থাকলে শত্রুদের বাংলাদেশ তামাশার উপযুক্ত জবাব দিতে পারবে।

আমেরিকায় পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত আগাশাহী নিউইয়র্কে এক টিভি সাক্ষাৎকারে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পাকিস্তানি সৈন্য সরিয়ে নেয়ার ভারতীয় দাবিকে অদ্ভুত বলে উল্লেখ করেন। অপরদিকে এক সরকারি মুখপাত্র বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক মোতায়েনের প্রস্তাব করে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতিসংঘ মহাসচিব উ থান্টের কাছে যে চিঠি দিয়েছেন, তা নিরাপত্তা পরিষদে বিবেচনাধীন।

এদিন পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর পূর্ব পাকিস্তান শাখার নেতারা পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায় অবিলম্বে পশ্চিম পাকিস্তান সীমান্ত থেকে ভারত আক্রমণ করার জন্য ইয়াহিয়া খানের প্রতি আবেদন জানায়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!