• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুঠোফোন আমদানিতে কোটি কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৬, ০৫:৫৭ পিএম
মুঠোফোন আমদানিতে কোটি কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি

বিশেষ প্রতিনিধি


বিদেশ থেকে মুঠোফোন আমদানিতে রাজস্ব ফাঁকির মচ্ছব চলছে। মিথ্যা ঘোষণায় কম মূল্য দেখিয়ে বিদেশ থেকে মুঠোফোন আমদানিতে কোটি কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীর চারটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ওকাপিয়া, উইনম্যাক্স, উইনস্টার ও ম্যাক্সিমাস ব্র্যান্ডের মুঠোফোন আমদানি করে বিপুল অংকের রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা ধরা পড়েছে। ওসব প্রতিষ্ঠানের ফাঁকি দেয়া শুল্কের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা। শুল্কায়ন করার সময় আমদানিকারকরা ওসব মুঠোফোনের প্রকৃত মূল্যের চেয়ে কম দেখিয়ে প্রাপ্য শুল্ক-কর দেয়নি। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীর মোতালিব প্লাজার তাহসিন এন্টারপ্রাইজ, নামিরা এন্টারপ্রাইজ, গুলশানের কোয়ারটেল ইনফোটেক লিমিটেড ও উত্তরার অ্যান্ড বি ট্রেডিং নামের চারটি প্রতিষ্ঠান চীন ও হংকং থেকে মুঠোফোন আমদানি করে কোটি কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে। সম্প্রতি শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেটের এক তদন্ত প্রতিবেদনে শুল্ক ফাঁকির এ চিত্র বেরিয়ে এসেছে। ওই কমিশনারেটের কর্মকর্তারা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতবছরের জানুয়ারি মাসে ওই ৪টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। সম্প্রতি তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে দাখিল করা ওই ৪টি প্রতিষ্ঠানের ২৩২টি বিল অব এন্ট্রি (বিই) পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তদন্ত দল। ওসব বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে ২৫ লাখ ৬৬ হাজার ৫৪৫টি মুঠোফোন সেট খালাস করা হয়। ওসব সেটের প্রকৃত মূল্য গোপন করে ১৮ কোটি ২৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকার শুল্ক-কর ফাঁকি দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, উইনমিক্স ব্র্যান্ডের মুঠোফোন আমদানিতে সবচেয়ে বেশি ১৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়েছে আমদানিকারক তাহসিন এন্টারপ্রাইজ। তাছাড়া ওকাপিয়া ব্র্যান্ডের আমদানিকারক অ্যান্ড বি ট্রেডিং ৭৭ লাখ টাকা, উইনস্টার ব্র্যান্ডের আমদানিকারক নামিরা এন্টারপ্রাইজ ১ কোটি ৭ লাখ টাকা এবং ম্যাক্সিমাস ব্র্যান্ডের আমদানিকারক ৩ কোটি ১৪ লাখ টাকার শুল্ক-কর না দিয়ে মুঠোফোন খালাস করেছে। চলতি অর্থবছর থেকে মুঠোফোনের ওপর আমদানি শুল্কের হার ৫ শতাংশ। গত বছর এ হার ছিল ১২ শতাংশ।

সূত্র আরো জানায়, শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেটের তদন্ত প্রতিবেদনটি সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই এনবিআর থেকে ফাঁকি দেয়া রাজস্ব আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসকে নির্দেশ দেয়া হবে। শুল্ক ফাঁকি ধরতে তদন্ত দল বিশেষ পদ্ধতি বা অবরোহী পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। প্রথমে বাজার থেকে ওসব ব্র্যান্ডের মুঠোফোনের বিক্রয়মূল্য সংগ্রহ করা হয়। তারপর ধাপে ধাপে বিক্রয়মূল্য থেকে খুচরা বিক্রেতার সাড়ে ১২ শতাংশ, পাইকারি বিক্রেতার ৫ শতাংশ ও আমদানিকারকের ৮ শতাংশ বাদ দেয়া হয়। তারপর শুল্ক-কর, আমদানিকারকের বন্দর খরচ ১ শতাংশ, বৈদেশিক মুদ্রার প্রিমিয়াম বাদ দেয়া হয়। এরপর ২৩২টি বিল অব এন্ট্রির মধ্যে যেগুলোর শুল্কায়ন মূল্যের সাথে অবরোহী পদ্ধতিতে প্রাপ্ত মূল্যের পার্থক্য ১০ শতাংশ বেশি হয়েছে সেগুলোতে শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেটের কমিশনার এসএম হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মুঠোফোন আমদানিতে শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়ে আসছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ফাঁকি কাগজে-কলমে ধরা পড়েছে। এখন ফাঁকি দেয়া শুল্ক-কর আদায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ফাঁকি দেয়া শুল্ক আদায় করা হলে অন্য আমদানিকারকের কাছে তা শিক্ষণীয় হবে।

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!