• ঢাকা
  • বুধবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৪, ২৭ চৈত্র ১৪৩০

মুন্সীগঞ্জে শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ


মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি আগস্ট ২, ২০১৬, ০১:৫২ পিএম
মুন্সীগঞ্জে শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ

আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা। সেই শাপলা এখন বেশ জনপ্রিয় তরকারি। বর্ষার এই মৌসুমে শাপলার যেমন হাট বসছে, তেমনি বাড়ি বাড়ি ফেরি করে বিক্রি হচ্ছে শহরসহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। আর সেই শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান ও শ্রীনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কয়েক শতাধিক পরিবার। চার থেকে পাচ মাস কৃষি জমি পানির নিচে থাকায় এ মৌসুমে কৃষকের তেমন কোনো কাজ নেই। তাই এলাকার অনেক কৃষক এ পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। কোনো পুঁজির প্রয়োজন না হওয়ায় বিভিন্ন বয়সের লোক এ পেশায় অংশ নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। শাপলা সাধারণত তরকারি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

Shapla

লতব্দী ইউনিয়নের চর নিমতলার বিল থেকে শাপলা সংগ্রহকারী মো. কাউসার জানান জানান, এ সময় একেকজন কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ মুঠো সংগ্রহ করতে পারে। পাইকাররা আবার সংগ্রহকারীর কাছ থেকে এসব শাপলা সংগ্রহ করে একত্রে করে। সিরাজদীখানের রসুনিয়া, ইমামগঞ্জ তালতলায়, হাসাড়া, ছনবাড়ীর মোড় ও আড়িয়াল বিলের পাশে শাপলার পাইকারি ক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। পাইকাররা এখান থেকে শাপলা ক্রয় করে ঢাকার যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজারে বিক্রি করে থাকে।

পাইকার জাকির হোসেন জানান, শাপলা সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে এক মুঠো শাপলা ২০ টাকা দরে ক্রয় করা হয়। তারপর গাড়ি ভাড়া গড়ে ৩ টাকা, লেবার ১ টাকা, আড়ত খরচ ২ টাকাসহ মোট ২৭ থেকে ২৮ টাকা খরচ পড়ে। যাত্রাবাড়ী আড়তে শাপলা বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা মুঠো। কোন রকম পুঁজি ছাড়াই শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন সিরাজদিখানসহ জেলার কয়েকশ’ পরিবার। বর্ষার এই মৌসুমে কৃষক ও অভাবী লোকজন বেকার হয়ে শাপলা কুড়িয়ে তা বিক্রির পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন।

সূত্র মতে, বর্ষায় ডুবে যাওয়া ধান, পাট ও ধঞ্চে ক্ষেতে শাপলা বেশি জন্মায়। এছাড়া জেলার খাল-বিলগুলোতেও শাপলা ফুল জন্মে থাকে। আষাঢ় থেকে শুরু করে ভাদ্র মাস পর্যন্ত পাওয়া যায় শাপলা।

শাপলা সংগ্রহকারীরা ভোরে নৌকা নিয়ে ডুবে যাওয়া জমিতে ও বিলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে শাপলা তুলতে থাকেন। কয়েকজন শাপলা সংগ্রহকারী জানান, এ সময়ে একেকজন কমপক্ষে ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ মোঠা (৭০-৮০টি শাপলায় ১ মোঠা ধরা হয়) সংগ্রহ করতে পারে। পাইকাররা আবার এসব শাপলা সংগ্রহকারীর কাছ থেকে সংগ্রহ করে একত্রে করেন। দিন শেষে ৪০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা আয় করে থাকেন। বছরের ৪ মাস এ কাজ করেন। সিরাজদিখানের রসুনিয়া, ইমামগঞ্জ, লতিব্দী ও তালতলায় আর শ্রীনর উপজেলার হাসাড়াও আড়িওল বিলের  পাইকারি ক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। পাইকাররা পরে ঢাকার যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন।

উপজেলার রসুনিয়া গ্রামের পাইকার সালাম মিয়া জানান, শাপলা সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মোঠা শাপলা ক্রয় করে থাকেন। সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে এক মোঠা শাপলা ২০-৩০ টাকা দরে ক্রয় করেন তিনি। তারপর ট্রাক ভাড়া গড়ে ৩ টাকা, লেবার ১ টাকা, আড়ত খরচ ২ টাকাসহ পায় ৩০ টাকার মতো খরচ পড়ে।

এই বিষয়ে জেলার কৃষি কর্মকর্তা জানান শাপলা আসলে কোন কৃষি পণ্য আওয়তাভুক্ত নয় এটি প্রাকৃতিক ভাবে কৃষি জমি ও পুকুর কিংবা ডোবাতে জন্ম নেয়, এই বিষয়ে আমাদের কোন পরামর্শ দেয়ার সুযোগ হয়ে উঠে না তবে আমরা চেষ্টা করি কৃষক দের সহায়তা করার এছাড়া ও আমারা কৃষকদের শাপলা বেশি দিন সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে বেশির ভাগ শাপলা ঢাকাতে বক্রি হয়ে থাকে।

শাপলা তরকারি হিসাবে খুবই মজাদার খাবার হওয়ায় এর চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলছে বলে জানা গেছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!