ঢাকা: বিশ্বে এমন কিছু রীতি প্রচলন আছে যা আমাদের অবাক করে দেয়। সে সবের ভয়াবহতা মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়, তবুও সেই সব রীতি মেনে চলে মানুষ। এর কারণ ধর্ম, নয় কুসংস্কার।
তেমনি একটি মেয়েদের খাতনা। হ্যাঁ আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য হলেও আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও আমাদেরই এশিয়ার কিছু দেশে এর প্রচলন বেশ রয়েছে ।
মূলত মুসলিমরা পুরুষদের খাতনা করাসহ আল্লাহর নবী ও মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর সুন্নাত হিসেবে বেশ কয়েকটি সুন্নাত পালন করে থাকে। কোনো কোনো মুসলিম দেশে একে (সুন্নতে খাতনা বা মুসলমানি) বলা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (এইচডাব্লিও) হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় ২০ কোটি নারী যৌনাঙ্গ ছেঁদন বা খাতনার (Female Genital Mutilation) শিকার হয়েছে। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ওই সব নারী চরম যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছে।
সম্প্রতি, আল জাজিরার ফ্রিল্যান্সার সংবাদিক ফাতিমা নাইব সোমাল্যান্ড ও কেনিয়া ঘুরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি ওই সব দেশের খানতার শিকার নারীদের দুর্দশা দেখিয়েছেন।
শুধু সোমাল্যান্ডেই ৯৫ শতাংশ নারী খাতনার শিকার হয়েছেন। তারা ফাতিমা কাছে বর্ণনা করেছেন, পিরিয়ড ও সন্তান প্রসবকালীন মারাত্মক ব্যথায় ভোগেন। শুধু তাই নয় অনেকেই ইনফেকশনের শিকার হয়ে বেঁচে থেকেও মৃত্যু প্রায়।
১৮ বছর বয়সী তরুণী সাত্তু ফারাহ। তিনি এখন অন্তঃসত্ত্বা। দশ বছর বয়সে তাকে খাতনা করানো হয়। তিনি বলছিলেন, ‘আমি তখন সেঁলাইয়ের কাজ করছিলাম, হঠাৎ আমাকে নিয়ে গিয়ে খাতনা করে দেয়া হয়। সে যে কি কষ্ট বলে বুঝাতে পারবো না।’
‘এখন পিরিয়ডের সময় খুব ব্যথা হয়, তাছাড়া এখন আমি অন্তঃসত্ত্বা সামনে কী হবে সেটা ভেবেই ভয় পাচ্ছি।’ এমন সব অভিজ্ঞতা রয়েছে হাজারো তরুণীর।
তবে এখনো দেশটির প্রবীনদের মধ্যে এটা নিয়ে গোড়ামি রয়েছে। তাদের কাউকে FGM এর বিরোধী কিছু বুঝাতে গেলে তারা সমাজকর্মীদের অপমান করে বের করে দেয়।
FGM কোনো ধর্মেয় নিয়ম বা রীতি নয়, এটা মানুষে নিজেরই তৈরি করে নিয়েছে। তবে এই প্রথা থেকে বেরিয়ে আনার জন্য অনেক সংস্থা ও মানুষে নিজ উদ্যোগে কাজ করছেন।
অনেক দেশেই FGM কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এইচডাব্লিও জানিয়েছে, বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশে মেয়েদের খাতনা করানো হয়। এর ভয়াবহতা আরো বাড়ছে। এই বিভৎস প্রথা চালু রয়েছে শুধু মুসলিমদের মধ্যে নয় রয়েছে খ্রিস্টানদের মধ্যেও।
সোজিল্যান্ড ছাড়াও আফ্রিকার দেশ সুদান, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, চাদ, বুরকিনা ফাসো, সেনেগাল, মিসরসহ আরো মধ্যপ্রাচ্যে ও এশিয়ার কোথাও কোথাও FGM এর চর্চা রয়েছে। শুধু আফ্রিকাতেই প্রতি বছরে তিরিশ লক্ষ মেয়েকে এই নারকীয় প্রথার শিকার হতে হয়।
মুসলিম আলেমরা দাবি করেন, এই প্রথার সঙ্গে ইসলামের কোনও সম্পর্ক নেই। এই প্রক্রিয়ায় মেয়েদের মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে ৫৫ শতাংশ।
শুধু অফ্রিকার বা এশিয়াতেই নয় ব্রিটেন ও আমেরিকাতেও রয়েছে মেয়েদের খতনা দেয়ার প্রথা। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এর ভয়াবহতা যুক্তরাষ্ট্রেও বেড়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে অফ্রিকার দেশগুলো থেকে আসা অভিবাসীরা এর প্রথার প্রাচালন ঘটাচ্ছে।
ব্রিটিশ দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথাটি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও ব্রিটেনের মুসলমানরা গোপনে এর চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০০৯ সালের সংবাদমাধ্যমদের খবর অনুযায়ী, প্রতি বছর পাঁচশোরও বেশি মেয়েকে খতনা দেয়া হয়েছে। অথচ এ বছরে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার।
উল্লেখ্য, মুসলিমরা পুরুষদের খাতনা করাসহ আল্লাহর নবী ও মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর সুন্নাত হিসেবে বেশ কয়েকটি সুন্নাত পালন করে থাকে।
সোনালীনিউজ/জেএ
আপনার মতামত লিখুন :