• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘মৃত্যুর জন্য আমরা প্রস্তুত’


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১৪, ২০১৮, ০১:৫৬ পিএম
‘মৃত্যুর জন্য আমরা প্রস্তুত’

ঢাকা : আজ ১৪ মার্চ। অগ্নিঝরা ১৯৭১ সালের এই দিনটি ছিল রোববার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ের শেষ দিন। সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে তখন অকেজো। সেনাবাহিনী ছাড়া সর্বত্র আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত।

এই দিন সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ন্যাপ নেতা খান আবদুল ওয়ালী খান আলোচনায় বসেন। বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে রুদ্ধদ্বার কক্ষে প্রায় দেড় ঘণ্টার আলোচনায় জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি দলের উপনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এএইচএম কামরুজ্জামানসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘স্বাধীন দেশে স্বাধীন নাগরিক হিসেবে জীবন-যাপনের জন্যই আমাদের সংগ্রাম।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাতে এক বিবৃতিতে অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে নতুন নির্দেশ দেন। বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির আকাক্সক্ষাকে নির্মূল করা যাবে না। আমরা অজেয়, কারণ আমরা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত।’ এ ছাড়া আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাজউদ্দিন আহমদ এ দিন সরকার পরিচালনার জন্য ৩৫ দফা নির্দেশনামা জারি করেন।

বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে সংবাদপত্র প্রেস-কর্মচারী ফেডারেশনের উদ্যোগে সকালে বায়তুল মোকাররমের সামনে সমাবেশ করে। পরে মিছিলসহ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গিয়ে তার হাতে একটি আবেদনপত্র দেয়। তাতে যেকোনো নির্দেশ পালনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে অবিলম্বে একটি জাতীয় সরকার গঠন ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ঘোষণার জন্য বঙ্গবন্ধুর প্রতি অনুরোধ জানান।

করাচিতে এই দিন নিশাত পার্কে পিপলস পার্টির উদ্যোগে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জনসভায় পিপিপির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো পাকিস্তানের দুই অংশের দুই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তাব দেন। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে তার সঙ্গে সংলাপ শুরুর জন্য বঙ্গবন্ধুর প্রতি আহ্বান জানান। ভুট্টোর এই দুই সংখ্যাগরিষ্ঠতার তত্ত্বের সমালোচনা করে নূরুল আমীন, আবুল হাশিম, ওয়ালী খান প্রমুখ মন্তব্য করেন, এ দাবি বাস্তবায়িত হলে পাকিস্তান ভাগ হয়ে যাবে। এদিকে বরিশালে এক জনসভায় বাংলা জাতীয় লীগ প্রধান আতাউর রহমান খান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি অস্থায়ী সরকার গঠন করার আহ্বান জানান।

সাবেক গভর্নর আযম খান, ন্যাপ নেতা ওয়ালী খান, জমিয়াতুল উলেমা-ই- ইসলাম নেতা মুফতি মাহমুদ, কাউন্সিল লীগ নেতা মিয়া মমতাজ দৌলতানা, সরদার শওকত হায়াত খান, মওলানা শাহ আহমদ নূরানী, কনভেনশন লীগের জামাল মোহাম্মদ কোরেজা, জামায়াতে ইসলামীর আবদুল গফুর, সরদার মওলা বক্স সুমরো প্রমুখ পশ্চিম পাকিস্তানি নেতারা শেখ মুজিবকে সমর্থন করে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান। তবে মুসলিম লীগের আবদুল কাইয়ূম খান আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেন।

সামরিক নির্দেশের প্রতিবাদে দেশরক্ষা বিভাগের বেসামরিক কর্মচারীরা এ দিন ঢাকায় বিক্ষোভ করে। পরে তারা বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাসভবনে গিয়ে দেখা করে বর্তমান আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ত্বতা ঘোষণা করেন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সম্পদ পাচার রোধের অংশ হিসেবে ঢাকার কয়েকটি স্থানে চেকপোস্ট বসায়। ঢাকার পত্রিকাগুলো ‘আর সময় নেই’//‘Time is Running Out’ শিরোনামে যৌথ সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। এ ছাড়া জাতীয় পরিষদ অধিবেশনে যোগদানের প্রশ্ন বঙ্গবন্ধুর চার দফা শর্ত মেনে নেওয়ার দাবিতে রাজধানী ঢাকায় এই দিন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র-শ্রমিক-পেশাজীবী সংগঠন এবং যুব মহিলা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে সভা-সমাবেশ ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

‘ওসান এন্ডুরাস’ নামের সমরাস্ত্রবাহী একটি জাহাজ এই দিন চট্টগ্রাম বন্দরের ১০ নম্বর জেটিতে নোঙর করে। এর আগে বন্দর শ্রমিকদের অসহযোগিতার কারণে ৯ মার্চ ১৬ নম্বর জেটিতে নোঙর করা সমরাস্ত্রবাহী অপর জাহাজ ‘সোয়াত’ থেকে সমরাস্ত্র খালাসের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া বাংলাদেশের জন্য খাদ্যশস্যবাহী ‘মন্টেসেলো ভিক্টরি’ নামের আর একটি জাহাজের গতিপথ পরিবর্তন করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে করাচি নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি দলের নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এক বিবৃতিতে ১১ মার্চ খাদ্যবাহী জাহাজ ‘ভিটেজ হরাইজন’-এর গতিপথ পরিবর্তনের ঘটনা অবিলম্বে তদন্ত করার দাবি জানান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!