• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মেক্সিকোর কারাগারে বন্দি কয়েক হাজার বাংলাদেশি


নিউজ ডেস্ক মে ১৯, ২০১৭, ১১:৫৬ এএম
মেক্সিকোর কারাগারে বন্দি কয়েক হাজার বাংলাদেশি

ঢাকা: সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ এশিয়া থেকে মেক্সিকোয় অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশি রয়েছেন। উন্নত ও সচ্ছল জীবনের আশায় স্বপ্নভূমি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশের সময় মেক্সিকোর ভূখণ্ড থেকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আটক হয়েছেন কয়েক হাজার বাংলাদেশি। বর্তমানে তারা মেক্সিকোর বিভিন্ন কারাগারে আটক।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের আগে কয়েকটি দেশ হয়ে মেক্সিকোয় আসেন বাংলাদেশিরা। কখনও কখনও ১০-১২টি দেশ পার হওয়ার ঘটনা ঘটে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মাইগ্রেশন, মেক্সিকো (আইএনএম) এবং ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন এজেন্সি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে যথাক্রমে ১৪৯, ১৬৭, ৩২৮, ৬৯০, ৬৪৮, ৬৯৭ ও ১২০ বাংলাদেশি আটক হন। তারা বর্তমানে মেক্সিকোর জেলে বন্দি।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। দেশটিতে বাংলাদেশি বন্দির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলেও জানা গেছে।

সম্প্রতি এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দেশটির জাতীয় অভিবাসন সংস্থার (আইএনএম) কর্মকর্তারা। তারা এ বিষয়ে সে দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে উদ্বেগ জানিয়েছেন।

বৈঠকে জানানো হয়, অভিবাসীদের মূল লক্ষ্য হলো সুযোগ বুঝে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা। অবৈধ এ মানবপাচারের সঙ্গে দূতাবাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ দেশটির। উন্নত ও সচ্ছল জীবনের আশ্বাস দিয়ে স্বপ্নভূমি যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে গরিব ও খেটে খাওয়া গ্রামের মানুষগুলোর কাছ থেকে ২৫-৩০ হাজার ডলার পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি।

অন্যদিকে ইউএস বর্ডার প্রটেকশন এজেন্সির হাতে গত ছয় বছরে আটক হয়েছেন দুই হাজার চারশর বেশি বাংলাদেশি।

মানবপাচারের রুট হিসেবে প্রথমে বাংলাদেশ থেকে প্লেনে দুবাই/ইস্তাম্বুল/তেহরান এরপর ভেনিজুয়েলা/বলিভিয়া অথবা স্প্যানিশ গায়ানা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার রুট রয়েছে আরও কয়েকটি।

ভেনিজুয়েলা, ব্রাজিল, গায়ানা ও বলিভিয়া থেকে দুর্গম পথে যাত্রা করে কলম্বিয়া-পানামা-কোস্টারিকা-নিকারাগুয়া-এল সালভাদর-গুয়াতেমালা হয়ে মেক্সিকো। এরপর মেক্সিকো থেকে সুযোগ বুঝে সীমানা অতিক্রম করে স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানো সম্ভব হয়। পাচারকারীরা সাধারণত জনবহুল এলাকা এড়িয়ে মরুভূমি, পাহাড় কিংবা জঙ্গল পথে যেখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি কম; সেসব রুট ব্যবহার করেন।

দুর্গম এসব পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। আবার কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন। মার্কিন সীমান্তরক্ষী বাহিনী ১৯৯০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ছয় হাজারেরও বেশি মরদেহ উদ্ধার করেছেন। তবে এর মধ্যে কতজন বাংলাদেশি, তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তারা।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি জমানো মানুষগুলো আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের কবলে পড়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন, অনেক ক্ষেত্রে তারা মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছেন- এটিই সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়।

ভুক্তভোগীরা এক পরিবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ছেলেকে আমেরিকা পাঠাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হতে হয়েছে। ছেলেকে দালালদের হাত থেকে মুক্ত করতে প্রায় কোটি টাকা দিয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

মেক্সিকোর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের হিসাব মতে, প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার অভিবাসী অপহরণের শিকার হন। পরবর্তীতে মুক্তিপণের দাবিতে তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশিদের অবৈধভাবে মেক্সিকো আনতে যে চক্রটি কাজ করছে তাদের মূল হোতা হিসেবে আতিক হোসেইন, দুলাল হালদার ও দিদার হালদারের নাম জানা গেছে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তাদের গ্রেপ্তার করে মেক্সিকান পুলিশ। পরবর্তীতে আতিকের বাড়ি থেকে পাঁচ বাংলাদেশি, দুই ভারতীয় ও ছয়জন নেপালের নাগরিককে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। পরে অভিযুক্তদের তিন বছরের জেল হয়।

মানবপাচারের বিশাল সিন্ডিকেট মেক্সিকো ছাড়াও লাতিন আমেরিকার অনেক দেশে বিস্তৃত। নিকারাগুয়ার আবদুর রহমান সেলিম এ চক্রের মূল হোতা। বলিভিয়া থেকে এ অপরাধের নিয়ন্ত্রণ করেন শাহীন; যিনি ইন্টারপোল ও বলিভিয়া পুলিশের তালিকাভুক্ত অপরাধী।

এছাড়া বলিভিয়া থেকে জয়নাল আবেদিন, ইকুয়েডর থেকে কামরুল হাসান ও তৌহিদ ইবনে শামীম, ব্রাজিল থেকে ডন মানবপাচারের নেটওয়ার্ক পরিচালনা করেন।

অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে বিভিন্ন সময়ে মেক্সিকোতে জেলখাটা বাংলাদেশি, মধ্য ও লাতিন আমেরিকায় বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর অভিবাসন সংস্থা, ইন্টারপোলের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে অবৈধভাবে সীমানা অতিক্রমের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে এখন জেল খাটছেন অনেক বাংলাদেশি। আবার অনেকেই আত্মসমর্পণ করে সেদেশে আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন করেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশে বিরোধী দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এমন অনেকে ‘অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন’- এমন অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের সুযোগ নিচ্ছেন।

তবে পরিসংখ্যান বলছে, মার্কিন অভিবাসন আদালত বাংলাদেশিদের প্রতি তেমন সদয় নয়। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে মাত্র ১৩ শতাংশ বাংলাদেশির আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ৩৮ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। তাদেরও অপরাধ ‘অবৈধ অনুপ্রবেশ’।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!