ঢাকা : সরকারের মেগা প্রকল্পে অর্থায়ন করবে ইসলামী ব্যাংক। এখন থেকে প্রকৃত ইসলামী দর্শনে চলবে ব্যাংকটি। পর্ষদে পরিবর্তন আনা হলেও ছোট পদের কর্মকর্তাদের চাকরি হারানোর ভয় নেই বলে জানিয়েছে ইসলামী ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদ। গতকাল (০৮ জানুয়ারি) রবিবার মতিঝিলে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান আরাস্তু খান এসব কথা বলেন। এদিকে ব্যাংকটিতে নারীকর্মীসহ হিন্দুদের চাকরির সুযোগ করে দেয়া হবে। একই সঙ্গে ১০ লাখ নারী উদ্যোক্তার এসএমই ঋণ, গরিব মানুষকে দেয়া ঋণ ৪ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছে নতুন পর্ষদ।
এ সময় ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান আরাস্তু খান বলেন, ইসলামী ব্যাংকের সম্পদের পরিমাণ অনেক। এই ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারের বড় বড় প্রকল্পে অর্থায়ন হবে। কারণ সরকার কখনো ঋণখেলাপি হয় না। তাই মুনাফা কম হলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এসব প্রকল্পে অর্থায়ন হবে। পরিবর্তন দেশে হয়, সমাজে হয়। তেমনিভাবে ইসলামী ব্যাংকের ম্যানেজমেন্টেও পরিবর্তন হয়েছে। তবে এটি শরিয়াহসম্মতভাবে চলবে। এর আইনকানুন কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে। এত দিন একটি বিশেষ দলের লোকদের কেবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখন থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া আরো স্বচ্ছ করা হবে। দেশের সব শ্রেণির মেধাবীরা যেন এই ব্যাংকে নিয়োগ পেতে পারেন, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হবে।
এ ছাড়া সিএসআরের অর্থ-অপব্যবহার রোধে কঠোর নীতি গ্রহণ করা হবে। অনুমোদন ছাড়া কোনো অর্থই ছাড় করা হবে না। তবে ব্যাংকের দর্শন বা মৌলিক নীতির কোনো পরিবর্তন হবে না। আগের মতোই শরিয়াহ অনুযায়ী এই ব্যাংক পরিচালিত হবে। এ ছাড়া নতুন নেতৃত্ব আসায় ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন হলেও ব্যাংক আগের নিয়মেই পরিচালিত হবে। যারা এই ব্যাংকে নিচের পদে কর্মরত রয়েছেন, তাদের কারো চাকরি যাবে না। এ কারণে এই ব্যাংকের প্রতি দেশের জনগণের আস্থাও অটুট থাকবে। এ ছাড়া এখন থেকে হিন্দু ও নারী কর্মীরা এ ব্যাংকে কাজের সুযোগ পাবে বলে জানান ব্যাংকের নতুন এ চেয়ারম্যান।
অনুষ্ঠানে ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসানুল আলম বলেন, সিএসআরের একটি টাকাও আর চোখ বুজে ব্যয় করা হবে না। অপব্যবহার রোধে আরো উদ্যোগ নেয়া হবে। এখন থেকে দেশের কল্যাণে সিএসআরের অর্থ ব্যয় করা হবে। তবে তিনি আট মাস আগে ব্যাংকে যোগ দেয়ার পর তদন্ত করে সিএসআরের কোনো অর্থই অপব্যবহার হয়নি বলে দাবি করেন। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আহসানুল আলম বলেন, আগে পরিচালনা পর্ষদ ভালো ছিল, তবে তাদের দিকে তীর্যক প্রশ্ন ছিল সবার। তারা ছিলেন প্রশ্নবিদ্ধ।
এদিকে কোনো অবস্থাতেই এই ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করা হবে না। ইসলামী ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে দর্শন বা মৌলিক নীতির কোনো পরিবর্তন করা হবে না বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, এখন থেকে প্রকৃত ইসলামী দর্শনে চলবে এই ব্যাংক। এই ব্যাংককে গরিব মানুষের ব্যাংক বলা হলেও মাত্র ৪ শতাংশ অসহায় গরিব মানুষ এই ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়েছেন। এখন থেকে ১০ শতাংশ গরিব মানুষ এই ব্যাংক থেকে ঋণ পাবেন। ১০ লাখ নারী উদ্যোক্তাকে এসএমই ঋণ দেয়া হবে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা আনোয়ারকে অপসারণ করে নতুন পরিচালক আরাস্তু খানকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়। ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদেও আসে নতুন মুখ। সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকের পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মতিন, অধ্যাপক ডা. কাজী শহিদুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :