• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মেঘনায় বিষ দিয়ে চলছে অতিথি নিধন!


ফয়সল বিন ইসলাম নয়ন, প্রতিনিধি জানুয়ারি ৩, ২০১৮, ০৫:১৯ পিএম
মেঘনায় বিষ দিয়ে চলছে অতিথি নিধন!

ভোলা: ভোলার মধ্য মেঘনা, চারদিকে জলরাশি। শীতের উষ্ণ রোদেলা আলোতে ঝলমল করছে পানি। ভেসে আসছে কিচিরমিচির শব্দ। চরের কাছাকাছি যেতেই চোখে পড়ে বিভিন্ন রংয়ের পারিযায়ী অতিথি পাখি। একদল ডানা মেলে মুক্ত আকাশে উড়ছে। আর একদল চরের পানিতে ডুব দিয়ে খাবার খাচ্ছে, কেউ সাঁতার কাটছে। নয়ন জুড়ানো এক অপরূপ মনোমুগ্ধ দৃশ্য। যা দেখে চোখ ও মন জুড়িয়ে যায়। কিন্তু এই অপরূপ দৃশ্য বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। কিছু সময় পরেই ভেসে আসতে থাকে অসংখ্য মৃত পাখি।

সরেজমিনে ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের মাঝামাঝি মেঘনা নদীতে চোখে পড়ে এ দৃশ্য। সামান্য টাকার লোভে বিষাক্ত টোপ দিয়ে পাখি শিকার করতে গিয়ে মারা পড়ছে শত শত পাখি। নদীর চরে ভাসছে অসংখ্য মৃত্যু পাখি। এভাবে নির্বিচারে পাখি শিকার করার ফলে পাখিদের আগমন যেমন কমে যাচ্ছে, তেমনি নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসম্য। সৌন্দয্য হারাচ্ছে মনমুগ্ধকর চরগুলো। এছাড়া অতিথি পাখি শিকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় শিকারীদের দৌরাত্ম আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।  

শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে দ্বীপ জেলা ভোলার উপকূল ও দুরবর্তী বিভিন্ন চরে  প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও  সাইবেরিয়াসহ শীত প্রধান দেশ থেকে কুইন আই ল্যান্ড ভোলায় পাখি আসতে শুরু করেছে। এসব পরিযায়ী অতিথি পাখি উপকূলীয় জেলা ভোলার মাঝের চর, মদনপুর, মেদুয়া, নেয়ামতপুর চরে, চরফ্যাশনের তারুয়া, কুকরী-মুকরী, সাগর কন্যা মনপুরার ঢালচর, চর পালিতাসহ অর্ধশতাধিক ছোট বড় চরে বিভিন্ন প্রজাতির লাখ লাখ অতিথি পাখির আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। পাখিদের কলতানে মুখর হয়ে উঠেছে চরগুলো।

কিন্তু এসব দূর্গম চরাঞ্চলে পাখির জন্য নিরাপদ আবাসস্থল হওয়ার কথা থাকলেও পাখি শিকারীদের কারণে তাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। খাদ্যের সন্ধানে পাখা মেলা এসব পাখি উড়তে গিয়েই মারা পড়ছে শিকারীদের হাতে। ধানের সঙ্গে বিষাক্ত রাসয়ানিক দ্রব্য, চেতনা নাশক দ্রব্য ও জাল ফেলে নির্বিচারে চলছে পাখি শিকার।

স্থানীয় জামাল মাজি জানান, প্রতিদিন নদীতে মাছ ধরতে গেলে মেঘনায় অসংখ্য মরা অতিথি পাখি ভাসছে। এছাড়া চরাঞ্চলে অতিথি পাখি মরে পড়ে থাকে। কতিপয় অসাধু জেলে ভাটার সময় নদীতে কীটনাশক জাতীয় দ্রব্য ধানের সঙ্গে মিশিয়ে ছিটিয়ে দেয়। ওই ধান খেয়ে পাখি উড়ে পড়ে যায়। অনেক পাখি উড়ে অন্যত্র গিয়ে নদীতে মরে পড়ে যায়। পাখি শিকারী দল অসুস্থ ও মৃত পাখি জবাই করে বাজারের ব্যাগে করে বিভিন্ন হোটেলে ও বাসাবাড়িতে ফেরি করে বিক্রি করে। এসব পাখি গোপনে প্রতি পিস বিক্রি হয় ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা করে।  

ভোলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সামস উল আলম মিঠু বলেন, পাখি শিকারে প্রশাসনের দুর্বল অভিযান ও নজরদারী না থাকায় এ বছর পাখির আগমন কমে গেছে। এতে নষ্ট হচ্ছে চরাঞ্চলের সৌন্দর্য্য। শিকারীদের হাত থেকে পাখি শিকার বন্ধ না করলে ভোলাতে কোনো পাখির আগমন ঘটবে না বলে মনে করে এলাকাবাসী। একই সঙ্গে পাখি শিকার বন্ধে আরো সচেতনতা বাড়ানো উচিত বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

এ বিষয়ে ভোলা সিভির সার্জন ডা. রথিন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য খাইয়ে নিধন করা এসব অতিখি পাখি মানব দেহের খাদ্য নালিতে প্রদাহ হবে। বার বার এসব খাবার খেলে লিভার কিডরি আক্রান্তসহ ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ভোলা কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের অপারেশন অফিসার লে. নাজিউর রহমান বলেন, শিকারীদের হাত থেকে পাখি রক্ষায় নিয়মিত টহলের পাশাপাশি বিশেষভাবে তৎপর রয়েছে কোস্টগার্ড সদস্যরা। অভিযানের জন্য তাদের সকল ষ্টেশনকে ইতিমধ্যে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

স্থানীয়দের মতে, ভোলার জীব বৈচিত্র সংরক্ষণে এসব পাখি লালন জরুরি। পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তোলা সম্ভব না হলে শিগগিরিই এ অঞ্চলটি পাখি শুন্য হয়ে পড়বে বলে মনে করছে এলাকাবাসী।

সোনালীনিউজ/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!