• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মেঘের জন্মদিন ও বাবা দিবস


সৌধ ইসলাম জুন ১৮, ২০১৭, ০৯:১৮ পিএম
মেঘের জন্মদিন ও বাবা দিবস

মেঘ সোনা, গেল ১৬ জুন তুমি ১১ বছরে পা দিয়েছো। তোমার জন্য এক সমুদ্র শুভকামনা। তবে খানিকটা দেরিই হলো এ শুভকামনা জানাতে। কী করবো বলো? চারদিকে কেমন শূন্যতার ছড়াছড়ি। শত ব্যস্ততার মধ্যে নাভিঃশ্বাস উঠছে সবার। কেউ কাউকেই মনে রাখতে পারছে না। সবাই সবার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছি নিত্যদিন।

এই যেমন তোমার জন্মদিনের কথা বেমালুম ভুলে গেছি। যদি না আজ বিশ্ব বাবা দিবস হতো, ভুলেই যেতে হতো। তারপরেও তোমার জন্য অনেক- অনেক ভালবাসা। আজ বিশ্বে যত ফুল ফুটেছে সব তোমার জন্য! বিশ্বে যত ভালবাসার আবেগ উঠেছে, সবই তোমার। প্রথম বর্ষার যত কদম ফুটেছে শুধুই তোমার জন্য।

ওই দেখো, তোমার জন্মদিনে কত মেঘ জমা হয়েছে আকাশে। তোমার কথা শুনেই বুঝি দাবদাহ পালিয়ে গিয়েছে। বর্ষা এসেছে কদম ফুলে ফুলে। ঝির-ঝির, ঝম-ঝম বর্ষণের গান বাজিয়ে। তোমার জন্মদিনের আগে থেকেই দেখছি আকাশে মেঘের কামাই নেই। তোমার জন্মদিনের সকালেও ছিল বেশ বৃষ্টি!

যখন ছোট্ট

কিন্তু কী জানো বাবা? আজ কেমন মনে হচ্ছে, অঝোর বৃষ্টিতে সবার মনে যখন অপার শান্তি, তখন তোমার মতই আমাদের মনটাও ভীষণ খারাপ। আজও আমাদের নিরাপত্তার শঙ্কা কাটছে না। তোমার বাবা আ মা চলে যাওয়ার পর আরো কয়েকজন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। এখনও ঝুলে আছে বিচার।

আজ বিশ্ব বাবা দিবসে নিশ্চয়ই তোমার বুকটা জুড়ে হাহাকার। তোমার বাবা নেই। শুধু কি বাবা দিবসেই এমন হয় তোমার, মা দিবসেও তো এমন হয়। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারির সকালটি ছিল রক্তমাখা। এমন সকাল যেন কারো জীবনেই না আসে। আগের বছর ছিল তোমার পঞ্চম জন্মদিন। সেদিন প্রিয় আব্বু আম্মুকে কাছে পেয়েছিলে। কত রঙীন ছিল সে মুহূর্ত।

আরো বড়

আর আজকের বাবা দিবসে তোমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ট সেই মানুষ দুজন নেই। শুধু কি নেই, আজও সেই নরাপিচাশদের শনাক্ত করতে পারেনি আইন-শঙ্খলারক্ষা বাহিনী। কারা কেন হত্যা করেছে তোমার আব্বু আম্মুকে, একথা গেল পাঁচ বছরেও জানা হলো না।

মেঘ সোনা, তুমি তো একদিন এদেশের প্রথম শ্রেণীর নাগরিক হয়ে উঠবে। তোমার আব্বু আম্মুর চেয়েও আরো বেশি সমাজ সচেতন হয়ে উঠবে। সেদিন কি তোমার আব্বু-আম্মুর কমিউনিটির মানুষের কাছে প্রশ্ন ছুঁড়বে না। জানতে চাইবে আমরা তোমার জন্য কী করেছি?

সত্যি, তোমার এ প্রবল মন খারাপ হয়ে যাওয়া বাবা দিবসে তোমার জন্য জলভরা মেঘের কান্না ছাড়া কিছুই দিতে পারছি না সোনা। তবে বাবা তুমি নিষ্পাপ, সীমাহীন সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত। তোমার জন্য অনেক কিছুই পারি। আমাদের বিভেদ ভুলতে চেয়েছি, সবাই এককাতারে এসে দাঁড়িয়েছি। হাতে হাত রেখে শপথ নিয়েছি।

বাবার স্মৃতি

আজ বিশ্ব বাবা দিবসে তোমার কাছে নেই বাবা, নেই প্রাণপ্রিয় আম্মুও। আজ বলার মত কোনো ভাষা পাচ্ছি না সোনা। কারণ আমাদের ভাষা বড় জটিল। মজার কথা কি জানো, আমরা ছোটদের জন্য আলাদা ভাষা আর বড়দের জন্য আলাদা ভাষা তৈরির চেষ্টা করছি।

‘বড়দের কথায় নাক গলিয়ো না’ একথা বলে ছোটদের আমরা কাছ থেকে তাড়িয়ে দেই। বড় ভয় হয় ছোটদের। কারণ ওরা তো পৃথিবীর সব সত্য সহজে বুঝতে পারে। কিন্তু আমরা তো সত্যের পৃথিবীকে আড়াল করে রাখি। তাই আমাদের ভাষা বড় জটিল। আমরাও কতটা জটিল তোমাকে বুঝাতে পারবো না। বাবা, আমাদের রাজনীতিও বড় নোংরা। রাজনীতিতে মানুষের কোনো মূল্য নেই।

বলতে কি, পৃথিবীর সব সভ্যদেশেই ছোটদের সম্মান করা হয়। আর আমাদের দেশে ছোটদের মানুষ হিসাবই ধরা হয় না। হয় উপেক্ষা করা হয়, নয়তো অবজ্ঞা করা হয়। কারণ তোমাদের নিয়েই যতো ভয়।

বাবা-মার কবর ছুঁয়ে

মেঘ সোনা, এমনি আর্থ-সামাজিক অবস্থার মধ্যে তোমার আব্বু আম্মু সাংবাদিকতার দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। রেখে গেছেন পেশাদারিত্বের চমৎকার উদাহরণ। কত অল্প সময়ে তাই তোমার মেধাবী আব্বু অনেক বড় সম্মান পেয়েছিলেন। কিন্তু তাকেই ওই হায়েনারা কেড়ে নিয়েছে। আজ আমরা যারা তোমার আব্বুর মত সাংবাদিকতাকেই জীবনের ফিলোসফি ভাবি তারাই আজ অন্ধকারে। আমাদের নেই কোনো নিরাপত্তা।

কেননা, আমাদের হাত সচল থাকলে ওদের পথ অচল হয়ে যায়। তাই আমাদের থেমে দিতে চায় ওরা। নিশ্চয়ই ‘ফিলোসফি’ আর ‘ওরা’ এ শব্দ দুটো সম্পর্কে জানতে ইচ্ছে করছে। বাবা এসব শব্দ নিয়ে আমরাও বেশিদূর ভাবতে পারি না। আজ বিশ্ব বাবা দিবসে আমরা অনেকেই আছি তোমার পাশে। তুমি হয়তো দেখতে পাচ্ছ না। কিন্তু সত্যি বাবা তোমার জন্য আমরা সব করতে পারি। এ অঙ্গীকার আমাদের সবার। কারণ, তুমিই আমাদের সামনে চলার প্রেরণা। তুমিই আমাদের স্বপ্ন।

সোনালীনিউজ/এন

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!