• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়র ও কাউন্সিলরদের তথ্য প্রকাশ


নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ১১, ২০১৬, ০৫:৫০ পিএম
মেয়র ও কাউন্সিলরদের তথ্য প্রকাশ

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়া মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, আয় ও ব্যায়ের হিসেব, মামলার পরিসংখ্যান, কর প্রদানসহ আনুসাঙ্গিক তথ্যাদি উপস্থাপন করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

রোববার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে সুজনের প্রধান সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। উপস্থিত ছিলেন সুজনের কেন্দ্রীয় আঞ্চলিক বিষয়ক সমন্বয়ক মাসুকুর রহমান শিমুল, সহ সমন্বয়ক বিপাশা, নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আব্দুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল, সহ-সাধারণ সম্পাদক শাহেদুল ইসলাম টিটু প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৭ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৩ জনের (৪২.৮৫%) শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর ও ২ জনের (২৮.৫৭%) স্নাতক। অন্য ২ জনের মধ্যে ১ জন (১৪.২৮%) এসএসসি’র নিচে এবং ১ জন ১৪.২৮% এসএসসি। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ৩ জনের মধ্যে দুই জনের সরকারি স্বীকৃতি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, কেন না তারা কওমী মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণ উল্লেখ, মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘরে দাওরা এবং মুফতি এজহারুল হক শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘরে কওমী উল্লেখ করেছেন। ৭ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ফৌজদারি মামলা সংশ্লিষ্ট রয়েছে ২ জন (২৮.৫৭%) মাহবুবুর রহমান ইসমাইল ও মো. সাখাওয়াত হোসেন খানের বিরুদ্ধে বর্তমানে ২টি করে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। অতীতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা ছিল যথাক্রমে ৪টি ও ২টি করে। অন্য ৫ জন মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে অতীত বা বর্তমানে মামল সংশ্লিষ্টতার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। ৭ জন মেয়র প্রার্থীর সকলেই ১০০% করদাতা। ১৫৬ জন সাধারণ আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ১১২ জন (৭১.৭৯%) করদাতা। ৩৮ জন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ২৯ জন (৭৬.৩১%) করদাতা। এই ২৯ জনের ২৬ জনই (৮৯.৬৫%) কর প্রদান করেন ৫ হাজার টাকার কম।

মোট ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের ১৫৬ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৯৫ জনের (৬০.৮৯%) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি’র নিচে। ১৮ জনের (১১.৫৩%) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি এবং ২০ (১২.৮২%) জনের  এইচএসসি। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ১৬ (১০.২৫%) ও ৩ জন (১.৯২%)। ৭ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৩ জন (৪২.৮৫%) ব্যবসায়ী, ২জন (২৮.৫৭%) আইনজীবী, ১জন (১৪.২৮%) চিকিৎসক এবং ১জন (১৪.২৮%) চাকরিজীবি। ৭ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে বছরে ৫ লাখ টাকার নিচে আয় করেন ৫ জন (৭১.৪২%) এবং ৫লাখ টাকার অধিক আয় করেন ২জন (২৮.৫৭%)। সেলিনা হায়াৎ আইভীর বার্ষিক আয় ১১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা এবং সাখাওয়াত হোসেন খানের ৮ লাখ ৬৯ হাজার ১শ’ টাকা।

উল্লেখ্য, সেলিনা হায়াৎ আইভী পেশায় ঘরে চিকিৎসক উল্লেখ করলেও, তাঁর আয়ের উৎস হচ্ছে জনপ্রতিনিধি হিসেবে প্রাপ্ত বেতন-ভাতা। ৭ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৩ জনের (৪২.৮৫%) সম্পদ ৫ লাখ টাকার নিচে, ২ জনের (২৮.৪৭%) ৫ থেকে ২৫ লাখ টাকার মধ্যে, ১ জনের (১৪.২৮%) ২৫ থেকে ৫০ লাখ টাকার মধ্যে এবং অবশিষ্ট ১ জনের ৫০ লাখ টাকার অধিক। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদ সাখাওয়াত হোসেন খানের ৭৪ লাখ ৪৫ হাজার ৬৫৯ টাকা।

মোট ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ৩৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে এসএসসির গন্ডি অতিক্রম না করা প্রার্থীর সংখ্যা ২৪জন (৬৩.১৫%)। ৫ (১৩.১৫%) জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি এবং ৩ (৭.৮৯%) জনের এইচএসসি। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ৫ (১৩.১৫%) ও ১ জন (২.৬৩%)।

বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, সর্বমোট ২০১ জন প্রার্থীর মধ্যে সিংহভাগের শিক্ষাগত যোগ্যতাই (১৪৪ জন বা ৭১.৬৪%) এসএসসি বা তার নিচে। পক্ষান্তরে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী প্রার্থীর সংখ্যা মাত্র ৩০ জন (১৪.৯২%)। শতকরা ৫৯.৭০% (১২০ জন) প্রার্থী বিদ্যালয়ে গন্ডি অতিক্রম করেননি। ৪ জন প্রার্থী শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘর পূরণ করেননি। তাদের সহ হিসেব করলে বিদ্যালয়ের গন্ডি না পেরুনোর হার দাঁড়ায় ৬১.৬৯% (১২৪ জন)

১৫৬ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর দশ ভাগের নয় ভাগেরও আধিক (১৪১ জন বা ৯০.৩৮%) পেশায় ব্যবসায়ী। চাকরি ও কৃষির সাথে সম্পৃক্ত আছেন যথাক্রমে ৪ (২.৫৬%) ও ৩ জন (১.৯২%)। ১জন (০.৬৪%) আইনজীবি ও রয়েছে।

৩৮ জন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যকের (১৭ জন বা ৪৪.৭৩%) পেশা ব্যবসা এবং দ্ভিতীয় সর্বোচ্চ (১৫ জন বা ৩৯.৪৭%) গৃহিনী। ৩জন (৭.৮৯%) চাকরিজীবিও রয়েছেন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে।

তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সর্বমোট ২০১ জন প্রার্থীর মধ্যে শতকরা ৮০.০৯% ভাগই ১৬১ জন ব্যবসায়ী।

৩৮জন সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীর মধ্যে ২জনের (৫.২৬%) বিরুদ্ধে বর্তমানে এবং ৩ জনের (৭.৮৯%) বিরুদ্ধে অতীতে এবং ১ জনের (২.৬৩%) বিরুদ্ধে উভয় সময়ে মামলা আছে বা ছিল।

৩৮ জন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে চার পঞ্চমাংশেরই (৩১ জন বা ৮১.৫৭%) আয় বছরে ৫ লাখ টাকা বা তার নিচে। ৫ লাখ টাকার অধিক আয় করেন ২ জন ৫.২৬%। তারা হচ্ছেন সংরক্ষিত ৬নং ওয়ার্ডের আফসানা আফরোজ (৬ লাখ ৩ হাজার টাকা) এবং ওয়ার্ডের ফারজানা হক (৫ লাখ ২০ হাজার টাকা)।

৩৮ জন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ২৯ জনের (৭৩.৩১%) সম্পদ ৫ লাখ টাকার কম। বিশ্লেষণে দেখা যায় ২০১ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৩০ জনই (৬৪.৬৭%) ৫ লাখ টাকার কম সম্পদের মালিক। কোটিপতি রয়েছেন মোট ৪ জন (১.৯৯%) সাধারণ আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী। ৭ জন মেয়র প্রার্থীর মমধ্যে শুধুমাত্র মাহবুবুর রহমান ইসমাইলের ৫ কোটি ৮১ হাজার টাকা ঋণ রয়েছে।

তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ২০১জন প্রার্থীর মধ্যে ১৫৯ জনের (৭৯.১০%) বার্ষিক আয় ৫ লাখ টাকার কম এবং ২জনের (০.৪৯%) ২৫ লাখ টাকার অধিক। উল্লেখ্য, মোট ৯ জন (৮.৪৯%) প্রার্থীর আয়ের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি; যার মধ্যে সংরক্ষিত আসনের ৫ জন।

প্রার্থীদের সম্পদের হিসাবের যে চিত্র উঠে এসেছে, তাকে কোনোভাবেই সম্পদের প্রকৃত চিত্র বলা যায় না। কেননা প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই প্রতিটি সম্পদের মূল্য উল্লেখ করেন না। আবার উল্লেখিত মূল্য বর্তমান বাজার মূল্য না; এটা অর্জনকালীন মূল্য।

১৫৬জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৪২ জনের (২৬.৯২%) বিরুদ্ধে বর্তমানে, অতীত এবং ২০ জনের (১২.৮২%) উভয় সময়ে মামলা ছিল বা আছে। ৩০২ ধারায় ৭ জনের (৪.৪৮%) বিরুদ্ধে বর্তমানে এবং ৯ জনের (৫.৭৬%) বিরুদ্ধে অতীতে এবং ২ জনের (১.২৮%) বিরুদ্ধে উভয় সময়ে মামলা আছে বা ছিল।

১৫৬ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ১২৩ জন (৭৮.৮৪%) বছরে ৫ লাখ টাকার কম আয় করেন। বছরে ২৫ লাখ টাকার অধিক আয় করেন ১জন (০.৬৪%) এবং ২৫ লাখ টাকার অধিক। তারা হলেন ৬ নং ওয়ার্ডের সিরাজুল ইসলাম (২৬ লাখ ৫১ হাজার ৩৯৮ টাকা) এবং ৫ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম (৬০ লাখ টাকা)।

১৫৬ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশই ৯৮ জন অথবা (৬২.৮২%) স্বল্প সম্পদের অর্থাৎ ৫ লাখ টাকার কম মূল্যমানের সম্পদের মালিক। ৪ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর কোটি টাকার অধিক সম্পদ রয়েছে। তারা হচ্ছেন- ১নং ওয়ার্ডের হাজী মো. আরোয়ার ইসলাম ৩ কোটি ১১ লাখ টাকা, ৫নং ওয়ার্ডে গোলাম মুহাম্মদ সাদরিল ২ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৩৭৮ টাকা ও গোলাম মুহাম্মদ কায়সার ২ কোটি ৫২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা এবং ১১ নং ওয়ার্ডের অহিদুল ইসলামের ১ কোটি ২২ লাখ ৮৪ হাজার ৩৭০ টাকা।

সাধারণ আসনের কউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ১৫ জন (৯.৬১%) এবং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে মাত্র ২ জন (৫.২৬%) ঋণ গ্রহীতা। সর্বমোট ২০১ জন প্রার্থীর মধ্যে ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা মাত্র ১৮ জন (৮.৯৫%)।

২০১ জন প্রার্থীর মধ্যে ৩ জন (২.০৯%) কাউন্সিলর প্রার্থীর কোটি টাকার উপরে ঋণ রয়েছে। তারা হলেন- ২নং ওয়ার্ডের সোহরাব হোসেন ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ৫নং ওয়ার্ডের গোলাম মুহাম্মদ কায়সার ১ কোটি ৪২ লাখ ৯ হাজার ৪৮৪ টাকা এবং ৬ নং ওয়ার্ডে সিরাজুল ইসলাম ১ কোটি ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৪৩২ টাকা।

বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, সর্বমোট ২০১ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৪৮ জন (৭৩.৬৩%) কর প্রদান করেন। এই ১৪৮ জনের মধ্যে ১০৬ জন (৭১.৬২%) কর প্রদান করেন ৫ হাজার টাকার কম। লক্ষাধিক টাকা কর প্রদানকারী ১০ জনই (৬.৭৫%) সাধারণ আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!