• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মেয়রকে হকারদের হুমকি!


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৭, ২০১৭, ০৯:২৯ পিএম
মেয়রকে হকারদের হুমকি!

ঢাকা: পুনর্বাসনের উদ্যোগ না নিয়েই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাণিজ্যিক এলাকা থেকে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ, মিছিল ও সমাবেশ করেছে হকারদের বিভিন্ন সংগঠন। মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হকারদের ১৬ সংগঠনের জোট ‘হকার সমন্বয় পরিষদ’-এর এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে হকারদের জন্য পুনর্বাসন নীতিমালা তৈরির দাবি জানানো হয়।

গত দুই দিনে গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টনসহ আশপাশের এলাকায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদ জানিয়ে পরিষদের সমন্বয়ক আবুল হোসেন বলেন, ‘মেয়র সাঈক খোকন ‘তুঘলকি পদক্ষেপ’ নিয়েছেন। এর ফল ভালো হবে না। আপনার বাবাও এই নগরের মেয়র ছিলেন। তিনি কখনো হকারদের উচ্ছেদ করেননি। আশা করি আপনিও এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেবেন না।’

গত ১১ জানুয়ারি নগর ভবনে এক বৈঠক শেষে মেয়র সাঈদ খোকন ঘোষণা দেন, রোববার (১৫ জানুয়ারি) থেকে সাপ্তাহিক কোনো কর্মদিবসে আর গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকায় দিনের বেলায় ফুটপাতে হকার বসতে দেয়া হবে না। হকাররা দোকান নিয়ে বসতে পারবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পরে। তবে ছুটির দিনে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।

এরপর রোববার (১৫ জানুয়ারি) ও সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল, দিলকুশা ও পল্টন এলাকায় চালানো হয় হকার উচ্ছেদ অভিযান। সোমবার (১৬ জানুয়ারি) উচ্ছেদের পর হকারদের একটি দল মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দিয়ে আসে। পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ না করা, হকারদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া, চাঁদাবাজি বন্ধ করা, হকারদের ওপর ‘দমন-পীড়ন’ বন্ধ এবং প্রকৃত হকারদের তালিকা করে পরিচয়পত্র দেয়াসহ ১০ দফা দাবির কথা সেখানে তুলে ধরেন তারা।

অন্যদিকে নিজের অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে মেয়র সোমবার (১৬ জানুয়ারি) বলেন, জনগণের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে করপোরেশন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। মঙ্গলবারের (১৭ জানুয়ারি) সমাবেশে মেয়রের ওই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে হকার সমন্বয় পরিষদের নেতা আবুল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী হকারদের উচ্ছেদ করতে বলেননি। প্রধানমন্ত্রী একনেক বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার আলোকে ব্যবস্থা নিন। মেয়র একা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী (বিদেশ থেকে) ফিরে আসুন, স্থানীয় সংসদ সদস্যও বিদেশে আছেন। তারা আইন প্রণেতা। আপনার হকার উচ্ছেদের এ সিদ্ধান্ত অমানবিক।’ সুইজারল্যান্ড সফরশেষে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে তার সঙ্গে দেখা করে হকার উচ্ছেদের প্রতিবাদে স্মারকলিপি দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয় সমাবেশে।

কর্মসূচির একপর্যায়ে হকার সমিতির নেতা নুরুল ইসলাম বলেন, গুলিস্তান এলাকায় তালিকাভুক্ত হকারের সংখ্যা ১৬শ, বাকিরা হকার নয়। হকারদের একাধিক সংগঠন থাকাও তাদের দুর্দশার একটি কারণ বলে মন্তব্য করেন তিনি। তার এ বক্তব্যের পর হকারদের একটি অংশ তাকে মারতে উদ্যত হলে অন্য নেতারা নুরুল ইসলামকে সমাবেশস্থল থেকে সরিয়ে দেন।

বাংলাদেশ জাতীয় হকার্স ইউনিয়নও মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে পল্টনের মুক্তিভবনের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে। দৈনিক বাংলা, দিলকুশা, রাজউক এভিনিউ, গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম ও জিরো পয়েন্ট হয়ে পল্টনে এসে শেষ হয় তাদের মিছিল।

মিছিল শেষে সমাবেশে হকার্স ইউনিয়ন নেতা হযরত আলী অভিযোগ করেন, সোমবার (১৬ জানুয়ারি) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের সঙ্গে বৈঠকে হকার উচ্ছেদ না করতে অনুরোধ জানানো হলেও মেয়র তা শোনেননি। উচ্ছেদের কারণে হকাররা কেউ ভালো নেই, আর হকাররা ভালো না থাকলে মেয়রও ‘ভালো থাকবেন না’ বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি। ‘মেয়র সাহেব, আপনি আমাদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। আমাদের না খাইয়ে রাখলে, আমাদের অনাহারে রাখলে আমরা কাউকে ভালো থাকতে দেব না। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা ফুটপাতে দোকান করতে না পারব, ততক্ষণ আমরা ঘরে ফিরে যাব না।’ হকারদের পুনর্বাসন না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন এ সমাবেশের বক্তারা।

সমাবেশে বক্তারা জানান, বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় পল্টনের মুক্তি ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!