• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
ফুটবল-২০১৬

মেয়েদের জয়ের উল্লাসে ছেলেদের বিষাদ উধাও


এম জাফিউল ইসলাম জানুয়ারি ১২, ২০১৭, ০৫:১৪ পিএম
মেয়েদের জয়ের উল্লাসে ছেলেদের বিষাদ উধাও

ঢাকা: ১৯৭৩ সাল থেকে ফিফাভুক্ত দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ খেলে আসছে বাংলাদেশ। এদেশের ফুটবল ঐতিহ্য একসময় গর্ব করার মতোই ছিলো। ঢাকার ঘরোয়া লিগের আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ মানেই ছিল দেশজুড়ে যুদ্ধ-যুদ্ধ রব। আশির দশকে এই দেশটার জাতীয় ফুটবল দল এশিয়ার সর্বোচ্চ পর্যায়ের দলগুলোর সাথে খেলে মোটামুটি মানের দল হিসেবেও স্বীকৃত ছিল। এক যুগ আগেও ছিল দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের পরাশক্তি। মাঠে দর্শকের জায়গা দেওয়া ছিল সত্যিই কষ্টকর। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে বাংলাদেশ ফুটবলে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা। মামুনুল-এমিলিদের খেলার মান দিনকে দিন নিম্নমুখী। ফলে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন দর্শক। ছেলেদের ভরাডুবি হলেও ব্যাতিক্রম নারী ফুটবলাররা। দেশের হয়ে একের পর এক সাফল্য বয়ে নিয়ে আসছেন তারা। এএফসি অনুর্ধ্ব-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে অপরাজিত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশের কিশোরীরা। এর আগে নেপালে ও তাজিকিস্তানে গিয়ে তারা জয় করেছে এএফসি অনুর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা। সর্বশেষ সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্স আপ হয়েছে তারা। সাফল্যের মানদন্ডে গত বছর দুর্দান্ত কেটেছে সাবিনা, সানজিদা আর কৃঞ্চাদের।

গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ভারতের শিলিগুড়িতে অনুষ্ঠিত সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তানকে ৬-০ গোলে বিধ্বস্ত করে সেমিফাইনালে নাম লেখায় বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা দল। অধিনায়ক সাবিনা খাতুন একাই করেন ৫টি গোল। এরপর বছরের শেষদিন ৩১ ডিসেম্বর গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে শক্তিশালী ও স্বাগতিক ভারতের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে গ্রুপসেরা হয় বাংলাদেশের মেয়েরা। এরপর নতুন বছরের ২ জানুয়ারি শেষ চারের লড়াইয়ে মালদ্বীপকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়ে সাবিনারা। ৪ জানুয়ারি ফাইনালে ভারতের কাছে ৩-১ গোলে হেরে রানার্সআপ হয় বাংলার বাঘিনীরা। সেমিফাইনালে খেলার লক্ষ্য নিয়ে দেশ ছেড়ে ছিল মেয়েরা। কিন্তু অসাধারণ নৈপুন্য প্রদর্শন করে ফাইনালে জায়গা করে নেয় তারা। তাই বলা যায় প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশিই পায় ছোটনের শিষ্যারা। যদিও ভারতের জয়ে অবদান ছিল রেফারির। তার দেয়া একটি ‘অন্যায়’ পেনাল্টির সিদ্ধান্ত যায় ভারতের পক্ষে। যাহোক, যাদের প্রাথমিক লক্ষ্যই ছিল সেমিফাইনাল খেলা, সেখানে রার্নাসআপ হতে পারাটা ছিল নিঃসন্দেহে বাড়তি অর্জন। ২৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত ফিফা র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দলের উন্নতি হয় সাত ধাপ (১২১ থেকে ১১৪ নম্বরে)।

অপরদিকে ছেলেদের জন্য গত বছরটি ছিল লজ্জা আর অপমানের। বিশেষ করে ২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর ছিল এদেশের ফুটবলের জন্য চরম লজ্জার। ভুটানের কাছে হেরে ওইদিন শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের সব আশা। যে কারণে আগামী তিন বছর বাংলাদেশ ফিফা ও এএফসি স্বীকৃত কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ বা টুর্নামেন্ট খেলতে পারবে না লাল সবুজের দেশ।

এই ক্ষোভে ফুঁসে উঠেন দেশের ফুটবলপ্রেমীরা। ক্ষমাহীন ব্যর্থতার জন্য বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিনসহ কমিটির সবাইকে পদত্যাগের আহ্বান জানান সবশ্রেণীর ফুটবলপ্রেমীরা। সেই সঙ্গে সালাউদ্দিন ও বাফুফের সমালোচনা মুখর হন সাবেক জাতীয় ফুটবলাররা। তবে এসব কোন কিছুকেই পাত্তা দেননি বাফুফে বস। বরং তিনি আরেকবার দেশের ফুটবলকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দেয়ার সাফাই গান!

এর আগে গত এপ্রিলে বাফুফে সভাপতি হিসেবে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন সালাউদ্দিন। ব্যক্তিগত অর্জনে নিজেকে ভাস্বর করলেও দেশের ফুটবলের অধঃপতন ঠেকাতে পারেননি তিনি। এসবেরই প্রভাব পড়ে ফিফা র‌্যাংকিংয়ে। টানা ব্যর্থতায় রেকর্ড অবনমন হয় লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। অক্টোবর মাসে প্রকাশিত ফিফা র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান হয় ১৮৫তম। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে এটাই সর্বনিম্ন র‌্যাংকিং।

গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভারতে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসেও ভরাডুবি হয় বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত গৌহাটিতে মালদ্বীপকে টাইব্রেকারে হারিয়ে বাংলাদেশ জেতে তাম্রপদক। আর এর দায় মাথায় নিয়ে কোচের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করে মারুফুল হক। অভিযোগ রয়েছে খেলোয়াড়রা কোচের নির্দেশনা মত চলেনি। দেশে ফিরে বাফুফেকে দেয়া রিপোর্টে সেটিই জানান কোচ। পরে ৩ মার্চ ন্যাশনাল টিমস্ কমিটির সিদ্ধান্তে জাতীয় দল থেকে মামুনুল ও জাহিদ এক বছর, ইয়াসিন-সোহেল রানাকে নিষিদ্ধ করা হয় ছয় মাসের জন্য। গোলরক্ষক সোহেল, ইয়ামিন ও মিশুকে সতর্ক করা হয়। অভিযুক্তদের কোন অর্থদন্ড না দেয়াতে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল এই রায়।

মারুফুল পদত্যাগ করায় দীর্ঘদিন কোচবিহীন ছিল জাতীয় দল। পরে বছরের ১২ জুন বেলজিয়ামের টম সেইন্টফিটকে জাতীয় দলের প্রধান কোচ নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। তবে তার সঙ্গে কোন চুক্তি করেনি বাফুফে। অবশ্য খুব বেশিদিন টিকতে পারেননি এই বেলজিয়ান। ভুটানের বিপক্ষে এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বে ওঠার প্লে-অফের দ্বিতীয় লেগে হেরে নিজ দেশে ফিরে যান তিনি।

বছরের শেষ দিকে বয়স ভিত্তিক দল কিছুটা সাফল্য পায়। ১৮ ডিসেম্বর কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত সুপার মক কাপের প্লেট পর্বের ফাইনালে জাপানের শোনান বেলমারেকে ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জেতে বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৪ বালক দল।

ফুটবল এই দেশের মানুষের প্রানের খেলা। তাই গত বছর যাই ঘটুক না কেন, নতুন বছরে দেশের ফুটবল আলোকিত হোক, সাফল্যে উদ্বাসিত হোক, ফিরে আসুক আশি-নব্বইয়ের দশকের সেই সোনলী দিন এটাই প্রত্যাশা ফুটবলপ্রেমী তথা দেসবাসীর।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআই

Wordbridge School
Link copied!