• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মোবাইল অপারেটরদের বিরক্তিকর মেসেজ, অযাচিত কল ঠেকাবে কে?


সোনালী বিশেষ আগস্ট ৪, ২০১৭, ১১:৫৫ এএম
মোবাইল অপারেটরদের বিরক্তিকর মেসেজ, অযাচিত কল ঠেকাবে কে?

ঢাকা : প্রতি মুহুর্তে মোবাইলে নানা প্রমোশনাল জানিয়ে বার্তা পাঠাচ্ছে মোবাইল ফোন অপারেটগুলো। রাত নেই দিন নেই মেসেজে ভরপুর মোবাইল। আবার গভীর রাতেও বিরক্তিকর এসব মেসেজে ঘুম ভাঙে গ্রাহকের!

নিজের টাকায় মোবাইল আর সংযোগ নিয়েও অপারেটরদের দৌরাত্ম্যে নাভিশ্বাস সবার। যেন টাকা দিয়ে সেবা নয়, কিনতে হচ্ছে যন্ত্রণা। ভোক্তা অধিকারে নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কাই করছে না অপারেটররা।

নির্দিষ্ট কলসেন্টারে নালিশ করেও এ থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছে না গ্রাহক। রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেসরকারি একটি কলেজের শিক্ষক বিকাশ মজুমদার। সকাল ৮টা বাজতেই তার মুঠোফোনে ভেসে আসে একটি এসএমএস। নতুন কোনো অফার জানাতে এ এসএমএস পাঠিয়েছে এক মুঠোফোন অপারেটর কোম্পানি।

ঠিক তার পাঁচ মিনিট পর অন্য অপারেটরের ফের এসএমএস। ৩০ মিনিট পর আবারও বেজে ওঠে মুঠোফোন। রিসিভ করতেই ও প্রান্ত থেকে ভেসে আসে ‘প্রিয় গ্রাহক, আপনি কোনো সেলিব্রেটির সঙ্গে সময় কাটাতে চান.... তাহলে কল করুন এই নম্বরে...।’

ফোন কোম্পানিগুলো তাদের নিজেদের নানা অফার জানাতে এ কল। স্বয়ংক্রিয় এসব ফোন কল আসে যখন তখন। কখনো কখনো মানুষের বিশ্রাম আর ঘুমের সময়। প্রতিদিনই মুঠোফোনে এমন অনাকাক্সিক্ষত এসএমএস গ্রাহকের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত এসএমএস পাঠানোর নজির নেই বলে জানান অনেক গ্রাহক।

গ্রামীনফোনের গ্রাহক দেশ পাবলিকেশনের সত্ত্বাধিকারী গল্পকার হিরণ্ময় হিমাংশু বলেন, ‘অসময়ে মুঠোফোনের বিজ্ঞাপন দিয়ে মেসেজ বা কল কাজের বিঘ্ন ঘটায়। বিশেষ করে গভীর রাত আর ভোরে শব্দ করে বেজে ওঠা ঘুম নষ্ট করে। আর জরুরি কাজে এসব মেসেজ বা কল বিরক্তির কারণ হয়। এমন করা উচিত যেন গ্রাহকের অনুমতি ছাড়া এসব বিজ্ঞাপন মুঠোফোনে না আসতে পারে।

পণ্য প্রচারের এই মাধ্যমে এখন অতিষ্ঠ গ্রাহকরা। বিলবোর্ড, সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিজ্ঞাপনের উৎপাত বেড়ে গেছে মোবাইল গ্রাহকের মুঠোফোনেও।

গ্রাহকরা জানায়, দিন-রাত নেই, যে কোন সময় বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত এসএমএস আসে। ক্লাসে থাকার সময় জরুরি ফোন মনে করে রিসিভ করার পর দেখা যায় অহেতুক সেটা। যখনই মনে আসছে তখনই এসএমএস পাঠাচ্ছে। এমনও হয় দিনে তিন চার বার করে এসএমএস পাঠাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা জানায়, টেলি মার্কেটিং এ কোটি টাকার ব্যবসা হলেও দেশে এ সংক্রন্ত কোন আইন নেই। অথচ একজন গ্রাহক হিসেবে ব্যক্তিগত বিষয় থাকতে পারে। কখনো জিজ্ঞাসা করা হয়না গ্রাহকের কাছে এই প্রোডাক্টটি পাঠাতে পারবে কিনা।

রবির গ্রাহক লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেডের কর্মকর্তা মাহিদুল ইসলাম মাহি বলেন, ‘সারাদিনে অনেক কল আসে, এর মধ্যে দিনে কয়েকবার বিভিন্ন অপারেটরের বিজ্ঞাপনি কলে অতিষ্ঠ। এ ধরনের কল বন্ধে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, নীতিমালা করা উচিত।’

এয়ারটেলের গ্রাহক শিক্ষার্থী রনি রেজা বলেন, ‘প্রতিদিন প্রত্যেক মোবাইল কোম্পানির একাধিক অপ্রয়োজনীয় এসএমএস আসে। যা অফারের নামে বিরক্তই করে। এমনকি এসকল এসএমএসের মাধ্যমে অন্যসব কোম্পানির বিজ্ঞাপনও প্রচার করা হয়। বিরক্ত হয়ে এখন এসব এসএমএস ওপেন করা হয় না। ফলে অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ এসএমএসও এদের ভিড়ে আনসিন থেকে যায়।’

ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির বিবিএ শিক্ষার্থী রকি গৌরি বলেন, ‘এখন অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। অ্যাপ চালাতে গিয়ে ব্যবহারকারীদের সমস্যায় পড়তে হয় বাধ্যতামূলক বিজ্ঞাপন প্রদর্শন নিয়ে। ইন্টারনেট চালু থাকলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পপ-আপ অ্যাড প্রদর্শিত হয়। যা খুবই বিরক্তিকর। বিশেষ করে জরুরি কাজের মাঝখানে বিজ্ঞাপন চলে আসলে তা ঝামেলা তৈরি করে।’

ব্যবসায়ী কায়সার আলম বলেন, ‘মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের বিভিন্ন অফারসমৃদ্ধ এসএমএস নিয়ে আমি খুবই বিরক্ত। একসময় মোবাইল ফোনে দিনে একটি-দুটি এসএমএস আসত। সেটি পাঠাত পরিচিত জনরা। এখন নানা ধরনের অফারযুক্ত এসএমএস আসতে শুরু করেছে। আমি বুঝতে পারি না প্রতিষ্ঠানগুলো আমার মোবাইল নম্বর কীভাবে পেলো। আর এমন সব পণ্যের এসএমএস আসে যেগুলোর প্রতি আমার ন্যূনতম আগ্রহ নেই।’

মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান রাহাত একজন চিকিৎসক। রোগীদের কথা ভেবে মোবাইল ফোনের রিংটোন সবসময় চালু করে রাখেন। তিনি চান না কোন রোগী যেন সংকটকালে তাকে না পেয়ে বিপাকে পড়ুক। কিন্তু প্রতিনিয়ত মোবাইল অপারেটরগুলোর বিজ্ঞাপন বা প্রমোশনাল কলের জন্য তার বিরক্তির সীমা থাকে না।

অফার, খুদে বার্তা বা এসএমএস নিয়ে বিরক্ত গ্রাহকদের অভিযোগ প্রসঙ্গে একাধিক মোবাইল ফোন কোম্পানির কর্মকর্তারা বলেন, ‘এর সঙ্গে অপারেটররা জড়িত নয়। তারা কখনোই কোনো গ্রাহকের নম্বর বাইরের কাউকে দেয় না।’

কীভাবে এসব এসএমএস আসে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘অনেকেই বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নিজেদের নম্বর দেন। সেখান থেকে অনেক এসএমএস আসে। বিভিন্ন ডিরেক্টরিতে অনেকের নম্বর থাকে, যা থেকে অনলাইন বিপণনকারী নম্বর সংগ্রহ করে। এটা বন্ধ করার বিষয়ে অপারেটরদের পক্ষ থেকে কিছুই করার নেই বলে জানান তারা। এটা বিটিআরসির এখতিয়ারে পড়ে।’

তবে প্রতিটি মোবাইল অপারেটরের আছে কাস্টমার কেয়ার সার্ভিস, মোবাইল হেল্পলাইন। এগুলো থেকে সহজেই অনুসন্ধান করে জেনে নেওয়ার সুবিধা থাকলে তা ঠিকমতো জানানো বা গ্রাহকদের সেই সেবা দেওয়া হয় না। আর এই প্রমোশনাল এসএমএসগুলো যেন না আসে সে সম্পর্কিত কোন সুবিধা বাংলালিংক, রবি কিংবা গ্রামীণফোন অপারেটর থেকে দেওয়া হয় না।

এয়ারটেলে নির্দিষ্ট এসএমএস পাঠিয়ে এই বিজ্ঞাপন সম্বলিত এসএমএসগুলো বন্ধ করার সুযোগ রয়েছে। তবে এর স্থায়িত্ব হয় মাত্র এক সপ্তাহ। আবার নিজের পয়সা খরচ করে এমএসএম পাঠাতে হয় বা ফোন করতে হয়।

গ্রামীণফোনের ক্ষেত্রে কাস্টমার কেয়ার থেকে এই ধরনের সেবা দেওয়া হয় না, বরং কাস্টমার কেয়ার থেকে বলা হয় এ বিষয়ে আপনার তরফ থেকে একটি অভিযোগ রেখে দেওয়া হচ্ছে কিন্তু তাদের এই অভিযোগ শুধু বলা পর্যন্তই শেষ। কিছুদিন পর থেকে আবার বিজ্ঞাপন আসা শুরু হয়। আরেক বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংকেও একই অবস্থা। আর রবিতেতো এমন কোন সুবিধা নেই বললেই চলে।

রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত মোবাইলে বিজ্ঞাপন দেয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অপারেটরগুলো তা মানেছে না বলে জানায় বিটিআরসি। এদিকে অপারেটরগুলোর এমন বিরামহীন বিজ্ঞাপন বন্ধে আইন করা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!