• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ম্যারাডোনার ইন্ধনেই ৪ ম্যাচ নিষিদ্ধ মেসি!


ক্রীড়া ডেস্ক মার্চ ৩০, ২০১৭, ১০:৫১ এএম
ম্যারাডোনার ইন্ধনেই ৪ ম্যাচ নিষিদ্ধ মেসি!

ঢাকা : লাপাজের সান হোটেলে বসে সতীর্থদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। হয়তো বলিভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটা নিয়েই। তখনই বন্ধুদের কেউ একজন ফোনে খবরটা দিল লিওনেল মেসিকে। হাসিমুখটা হঠাৎ গোমড়া হয়ে গেল মেসির। একটু পর আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের জাতীয় দল কমিটির প্রধান মার্সেলো তিনেল্লি এসে নিশ্চিত করলেন- খবরটা সত্যি। ফিফা আনুষ্ঠানিকভাবেই জানিয়েছে। কোচ এদগার্দো বাউজাসহ দলের বাকিরাও তিনেল্লির কাছ থেকেই খবরটা পেলেন- চার ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়েছে মেসিকে! গোটা দল তখন থমথমে নীরবতা।

এ ঘটনাটা পরশুর। বলিভিয়ার বিরুদ্ধে প্রাক বিশ্বকাপের ম্যাচে নামার মাত্র ৬ ঘণ্টা আগের। এ রকম সময়ে দলের সেরা খেলোয়াড়কে হারানোর খবর বিশাল ধাক্কা হয়ে এল আর্জেন্টিনার জন্য। ভেতরের যন্ত্রণা চেপে রেখে মেসি অবশ্য তারপরও হাসিমুখেই দলের সঙ্গে গেছেন লাপাজের হার্নান্দো সাইলস স্টেডিয়ামে। আর অধিনায়ক মেসিকে ছাড়া বলিভিয়ার বিরুদ্ধে খেলতে নেমে ২-০ ম্যাচে হেরে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে পুরোপুরি বিপাকে আর্জেন্টিনা।  

অপরাধ করলে যেকোনো ফুটবলার নিষেধাজ্ঞা পেতেই পারেন। এমনকি লিওনেল মেসিও। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার বলে তো আর তিনি ছাড় পাবেন না। কিন্তু তারপরও মেসিকে দেওয়া ফিফার এই নিষেধাজ্ঞাটা নিয়ে অনেক বিতর্ক। কেউ বলছেন, এটা লঘু পাপে গুরু দণ্ড হয়ে গেছে। কারও মতে, ম্যাচের ঘণ্টা ছয়েক আগে কোনো দলের সেরা খেলোয়াড়কে নিষিদ্ধ করে দেওয়া অন্যায়।

এদিকে এবার চাঞ্চল্যকরভাবে মেসি বিতর্কে নাম জড়িয়েছে দিয়েগো ম্যারাডোনার।  আর্জেন্টাইন সাংবাদিক গনসা স্তুপেনজোর টুইট, ‘ফিফায় কাজ করে এমন একজনের সঙ্গে কথা হয়েছে আমার। ও নিশ্চিত করেছে এই শাস্তি দেওয়ার পেছনে ইন্ধন আছে ম্যারাডোনার। ’ এর পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলাধোনা করা হয় ফিফার শুভেচ্ছা দূত ও ফিফা সভাপতির সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা ম্যারাডোনার। আর্জেন্ট্নার স্থানীয় কিছু কাগজে দাবি করা হয়েছে, ম্যারাডোনার সম্মতি নিয়েই মেসিকে ৪ ম্যাচ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিফা। যার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইনফান্তিনো আবার দিয়েগো-ঘনিষ্ঠ। ম্যারাডোনা নিজেও ফিফার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। তাই গোটা বিতর্কে ম্যারাডোনার ভূমিকাই এখন আতসকাচের তলায়। ম্যারাডোনার উদ্দেশে সাবেক ফুটবলার চিলাভার্টের তোপ, ‘এই সময় ম্যারাডোনা কোথায়? ওর তো মেসির পাশে থাকা উচিত ছিল। ’

মেসি বনাম ম্যারাডোনা : ফুটবল সম্রাটের সঙ্গে ফূটবল রাজপুত্রের দ্বৈরত্ত্ব অজানা নয়। দুই তারকার বৈরিতা বিভিন্ন সময়েই ফুটবল দুনিয়ার শিরোনামে ছিল। যুদ্ধে প্রথম আক্রমণ করে ম্যারাডোনা’র মন্তব্য ছিল, ‘মেসিকে বড্ড বেশি আরামে রাখা হয়। মনে রাখতে হবে, ও বাকিদের মতোই। ওকে আলাদা করে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে কেন?’ গত বছর ফ্রান্সে প্রদর্শনী ম্যাচে খেলার পর পেলের সঙ্গে আড্ডায় মেসিকে তীব্র কটাক্ষ করেছিলেন ম্যারাডোনা। কিন্তু, জানতেন না মাইক্রোফোনে ধরা পড়েছে তার সমস্ত মন্তব্য। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের মতে, পেলে ম্যারাডোনাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘মেসিকে মানুষ হিসেবে তোমার কি ভালো মনে হয়?’ প্রশ্নের উত্তরে ক্ষোভ উগরে ম্যারাডোনা বলেন, ‘আরে, ওর তো ভালো লিডার হওয়ার মতো মশলাই নেই। ওর কোনো ব্যক্তিত্বই নেই। নেতা হিসেবে ওকে ভাবা যায় না। ’

প্রচারের আলো : গরমাগরম শিরোনাম সৃষ্টির জন্য বিখ্যাত ম্যারাডোনার মুখে মেসি-নিন্দা আর্জেন্টিনায় তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করেছিল। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও ওই মন্তব্যের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চিলির বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন মেসি। এবার ৪ ম্যাচের জন্য মেসিকে ফিফা নিষিদ্ধ করার পর কাকতালীয়ভাবে ফের প্রশ্ন উঠেছে দিয়েগো ম্যারাডোনার ভূমিকা নিয়ে। আর্জেন্টিনা ফুটবলের একাংশ এই দাবিও করেছে, যতই ৪ ম্যাচের নির্বাসন থাকুক। ম্যারাডোনার হস্তক্ষেপে তা কমবেই। এবং এভাবেই প্রচারের আলো নিজের দিকে টানছেন ফুটবল রাজপুত্র।

মেসির ভবিষ্যৎ : অন্যদিকে, রাশিয়া বিশ্বকাপের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে মেসির ভবিষ্যৎ নিশ্চিত নয়। এই বিশ্বকাপই সম্ভবত মেসির শেষ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। বিশ্বের সেরা ফুটবলারের তকমা পেলেও কোনোদিন বিশ্বকাপ না ছোঁয়ার আপশোস যে মেসির রয়েছে, তা অজানা নয়। রাশিয়ার পর কাতার বিশ্বকাপে তাই মেসিকে না দেখার সম্ভাবনাই বেশি। এমন অবস্থায় মেসিহীন আর্জেন্টিনা যোগ্যতা বাছাই পর্বে ধাক্কা পাওয়ায় মেসির বিশ্বকাপ স্বপ্ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

মেসি-শূন্য আর্জেন্টিনা : এদিকে, মেসি-শূন্যতায় ভুগতে থাকা আর্জেন্টিনা যখন বলিভিয়ার কাছে পরাজিত হল, তখন ৩-০’এ প্যারাগুয়েকে হারিয়ে বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন পর্বে জায়গা নিশ্চিত করে ফেলল ব্রাজিল। এদিন ম্যাচে ব্রাজিলের হয়ে নিজের ৫২তম আন্তর্জাতিক গোল করেন নেইমার। এদিকে, বলিভিয়ার বিরুদ্ধে হারের পর আর্জেন্তিনার সামনে এবার উরুগুয়ে, ভেনিজুয়েলা এবং পেরু। এই ম্যাচগুলোতেও খেলতে পারবেন না লিও মেসি। নীল-সাদা ব্রিগেডের চিন্তার আরও কারণ রয়েছে। কারণ দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলির গ্রুপে কলম্বিয়া, ইকুয়েডর ও চিলি ৬টি করে ম্যাচ জিতে ভালো অবস্থানেই রয়েছে।

শাস্তি নিয়ে প্রশ্ন : খবরটা শুনে ম্যাচের আগেই মেসিসহ পুরো আর্জেন্টিনা দলকে সহমর্মিতা জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মাউরিসিও মাকরি। ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা দলের ফরোয়ার্ড হোর্হে ভালদানোর কাছেও শাস্তিটা বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে, ‘প্রথম কথা হচ্ছে, মেসি যখন নিয়ন্ত্রণ হারায়, তখনো তার শান্ত ভাবটা হারায় না। চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা তো অবিশ্বাস্য। এটা আর্জেন্টিনার বাছাইপর্বের পথচলা খুব কঠিন করে ফেলবে।’ সাবেক আর্জেন্টাইন কোচ সিজার লুইস মেনোত্তি তো দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলার সংস্কৃতি বিবেচনায় মেসির গালিটাকে খুব বড় অপরাধ হিসেবেই দেখছেন না, ‘ও যেটা করেছে, সেটা তো খুব গুরুতর কিছু নয়। বরং শাস্তিটা বাড়াবাড়ি লাগছে। হ্যাঁ, তাকে শাস্তি দেওয়া উচিত। কিন্তু চার ম্যাচ নয়।’

মেসিকে ৪ ম্যাচে নির্বাসন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী কোচ সিজার মেনোত্তি বলেছেন, ‘অনিচ্ছাকৃত ফাউল করে যেখানো মাত্র ২টি ম্যাচ সাসপেন্ড হয়। সেখানে রেফারির সঙ্গে হাত না মেলানোর জন্য ৪ ম্যাচ নির্বাসন মানা যায় না। ’

আর্জেন্টাইন অধিনায়ক পাশে পাচ্ছেন তাঁর ক্লাব-সতীর্থদেরও। বার্সা ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকে বলেছেন, ‘ওকে চার ম্যাচ নিষিদ্ধ করাটা উদ্ভট সিদ্ধান্ত।’ প্রশ্ন তুলেছেন আরেক সতীর্থ লুইস সুয়ারেজও, ‘এটা ভীষণ বাড়াবাড়ি। ওরা (ফিফা) কি এখন খারাপ ভাষা ব্যবহার করার জন্য সবাইকেই চার ম্যাচ নিষিদ্ধ করবে?

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার চিলির বিরুদ্ধে ম্যাচের সময়। ব্রাজিলিয়ান লাইন্সম্যানকে গালিগালাজ করার অভিযোগ ওঠে লিওনেল মেসির বিরুদ্ধে। গোটা ম্যাচেই রেফারিদের ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন মেসি। তাই ম্যাচ শেষে তাদের সঙ্গে হাত মেলাতেও অস্বীকার করেন তিনি। ভিডিও ফুটেজে এই ঘটনা দেখার পর মেসির বিরুদ্ধে শাস্তির সিদ্ধান্ত নেয় ফিফা। ১০ হাজার সুইস ফ্রাঁ জরিমানার সঙ্গে ৪ ম্যাচে নির্বাসিত করা হয় মেসিকে। যদিও মেসিকে এতবড় শাস্তি দেওয়া নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে বিভিন্ন মহলে। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যমের অভিযোগ, রেফারির রিপোর্টে গালি দেয়ার অভিযোগ ছিল না। তা সত্ত্বেও এত বড় অভিযোগ কেন? তবে কি এর পিছনে কোনো অদৃশ্য হাত রয়েছে?

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!