• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, বন্ধের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ১৪, ২০১৬, ১২:৫৬ পিএম
যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, বন্ধের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার

রাজধানী ঢাকায় যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধে কঠোর হচ্ছে সরকার। বর্তমানে রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে রাস্তার দু’পাশে ব্যাপকভাবে গাড়ি পার্কিং করায় রাজপথে সৃষ্টি হচ্ছে চরম যানজট। নষ্ট হচ্ছে কর্মঘন্টা এবং তীব্র হচ্ছে মানুষের দুর্ভোগ। মূলত রাজধানীতে পরিকল্পিত গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে না ওঠাতেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

যার প্রভাবে দিন দিন যানজট বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে ডিএসসিসি সম্প্রতি ডিসি ট্রাফিককে (দক্ষিণ/পূর্ব) আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করেছে। পাশাপাশি যানজট নিরসনে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধে ইতিমধ্যে কিছু প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ম্যাকানাইজড কারলিফট ও অনস্ট্রিট পার্কিংয়ের সুপারিশ করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে রাজধানীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল ও দিলকুশা এলাকার রাস্তাগুলোতে একাধিক সারিতে গাড়ি পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। এমনকি কোথাও কোথাও রাজপথের দু’ধারে দুটি করে চারটি সারিতে গাড়ি রাখা হচ্ছে । আর মতিঝিল ওভারব্রিজের নিচ থেকে আরামবাগ পর্যন্ত রাস্তা দখল করে বাস পার্ক করা হয়।

একই অবস্থা দৈনিক বাংলা, গুলিস্তান, সদরঘাট, নিউমার্কেট, মহাখালী, উত্তরাসহ দুই সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ এলাকার সড়কের। পরিকল্পিত পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় দিনের ব্যস্ত সময়েও নগরীর বিভিন্ন অফিস ও বিপণিবিতানের সামনেও রাস্তায় যেখানে সেখানে গাড়ি রাখা হচ্ছে। ফলে দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে যানজট। এই পরিস্থিতিতে ঢাকার যানজট নিরসনে আধুনিক ম্যাকানাইজড কারলিফট পার্কিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

এই পদ্ধতিতে একটি বহুতল ভবনে লিফটের মাধ্যমে গাড়ি পার্ক করা হবে। সেজন্য ডিএসসিসি মতিঝিল পূবালী ফিলিং স্টেশনের পাশে বটতলা এলাকায় ও ২৪ তলা ভবনের বিপরীতে উদ্যানের মধ্যে সুবিধাজনক জায়গায় ওই কারলিফট পার্কিং নির্মাণের সুপারিশ করেছে। তাছাড়া অনস্ট্রিট কার পার্কিংয়ের ক্ষেত্রেও বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কারণ ঢাকা শহরের রাস্তাগুলো সংকীর্ণ।

ফলে অনস্ট্রিট পার্কিং চালু থাকলে রাস্তার ওপর স্থায়ী পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। তাতে যানজট আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তারপরও মতিঝিলের অ্যালিকো বিল্ডিংয়ের পাশের রাস্তা, স্বর্ণ মার্কেট লিংক রোড, পলওয়েল মার্কেট ও মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে রাস্তার দুপাশে অস্থায়ী অনস্ট্রিট পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। ওই জন্য ওসব এলাকায় অনস্ট্রিট ও অফস্ট্রিট পার্কিংয়ের স্থান চিহ্নিত করতে সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে বর্তমানে মাত্র ৬টি সুবিধাজনক পার্কিংয়ের স্থান রয়েছে। তার মধ্যে মতিঝিল ও দিলকুশায় রয়েছে দুটি। বাকি ৪টি হলো শিশুপার্ক, মোহাম্মদপুর টাউন হল, নিউমার্কেট কাঁচাবাজার ও মোহাম্মদপুর নতুন বাজারসংলগ্ন কার পার্ক। ওই পার্কিংয়ের স্থানগুলোয় সর্বোচ্চ দেড় হাজার পর্যন্ত গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ওসব স্থানে গাড়ি পার্কিংয়ে চালকদের আগ্রহী নয়।

তবে গাড়ি পার্কিং স্পেস নির্মাণের জন্য ডিএসসিসির পক্ষ থেকে মতিঝিল ও দিলকুশায় দুটি জায়গা ডেভেলপারকে দেয়া হয়েছিল। নির্মাণকাজ শেষ হলেও তা এখনো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। মতিঝিলে দুই বিঘা জমির ওপর নির্মিত সিটি সেন্টারে পার্কিংয়ের জন্য বিশেষভাবে স্থান রাখা হয়। ৩৭ তলা ওই ভবনের দ্বিতীয় থেকে অষ্টম তলা পর্যন্ত পার্কিং ব্যবস্থা নির্মাণ করা হয়।

নির্মাণকাজ শেষে পার্কিংয়ের স্থানটি প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে ডিএসসিসিকে বুঝিয়ে দেয় ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ওই গাড়ি পার্কিং স্পেসের জন্য দফায় দফায় গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়েও কোনো ইজারাদার পাওয়া যায়নি। ফলে মূল্যবান কার পার্কিং ফ্লোরগুলো এখনো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তাছাড়া দিলকুশায় অপর একটি ডেভেলপার কোম্পানিকে কার পার্কিংয়ের ভবন নির্মাণের আড়াই বিঘা জমি দেয়া হয়। 

কিন্তু এখনো ওই নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। তবে দিলকুশার ভবনটির ৯তলা পর্যন্ত গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ডিএসসিসির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু সেটিও এখন পর্যন্ত কার পার্কিংয়ের জন্য ব্যবহারের উপযোগী করা হয়নি। ফলে ওই এলাকায় গাড়ি পার্ক করা হচ্ছে সড়কের ওপরই।

সূত্র আরো জানায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) চেয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন  (ডিএসসিসি) এলাকার সড়কে বেশি অবৈধ গাড়ি পার্কিং হয়। সম্প্রতি এ অঞ্চলের যানজট নিরসনে পরিকল্পিত পার্কিং বিষয়ে সুনির্দিষ্ট স্থান নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসসিসি। সে লক্ষ্যে উপকমিশনার (ডিসি) ট্রাফিককে (দক্ষিণ/পূর্ব) আহ্বায়ক করে ইতিমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাতে ডিএসসিসির কর্মকর্তারাও রয়েছেন।

এদিকে মতিঝিলের সিটি সেন্টারে গাড়ি পার্কিংয়ের সমস্যাগুলোও চিহ্নিত করা হয়েছে। ওসব সমস্যা সমাধানে কিছু প্রস্তাবও করেছে সংশ্লিষ্ট কমিটি। তার মধ্যে রয়েছে লিফট স্থাপন, নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত সিসিটিভি ও লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা। ভবনের মাঝামাঝি চতুর্থ কিংবা পঞ্চম তলায় ড্রাইভারদের জন্য একটি ছোট ক্যান্টিনের ব্যবস্থা করা।

প্রত্যেক ফ্লোরে সাউন্ড সিস্টেম-সংবলিত একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন, প্রচারণার জন্য লিফলেট, ফেস্টুন ও সাইনবোর্ড তৈরি এবং রাস্তায় যেখানে সেখানে পার্ক না করে গাড়ি যেন নির্দিষ্ট পার্কিং এলাকায় রাখা হয় সেজন্য ট্রাফিক পুলিশের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রাখা।

তাছাড়া মতিঝিল এলাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টাফ বাসও পার্ক করা হয়। ওসব গাড়ির জন্য বিকল্প পার্কিং ব্যবস্থা হিসেবে টিটিপাড়ার নার্সারির জায়গাটি প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই জায়গাটি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। তাদের সঙ্গে অলোচনা করেই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রস্তাব করে কমিটি। তাছাড়া সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের পাশে বালুর মাঠেও একটি পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়।

অন্যদিকে গুলিস্তান এলাকায় এখন পর্যন্ত কোনো পার্কিং ব্যবস্থা নেই। তবে গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চের উদ্যানটি অনেক বড়। তার চারপাশে রাস্তায় বিপুল পরিমাণ গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। ওই অবস্থায় নাট্যমঞ্চের দক্ষিণ ও পূর্ব পাশের ২৫ ফুট জায়গা ছেড়ে দিয়ে একটি গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা করার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।

তাতে রাস্তায় দাঁড়ানো গাড়িগুলো পার্কিংয়ের আওতায় আনা যাবে। তাছাড়া মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচেও সার্জেন্ট আহাদ বক্স থেকে জয়কালী মন্দির পর্যন্ত অনেক অব্যবহৃত জায়গা রয়েছে। ওসব জায়গা পরিষ্কার করে পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেতে পারে।

এই বিষয়ে ঢাকা ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল জানান, ঢাকার যানজটের অন্যতম কারণ যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং। তাই এই সমস্যা সমাধানে বেশকিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গঠিত সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছ থেকেও কিছু প্রস্তাব এসেছে। ওসব প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!