• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যাকাত কে দেবেন এবং কোথায় দিবেন


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১১, ২০১৮, ০৮:১১ পিএম
যাকাত কে দেবেন এবং কোথায় দিবেন

ঢাকা : জাকাতের আভিধানিক অর্থ ‘বৃদ্ধি’ ও ‘পবিত্রতা’। জাকাত দিলে সম্পদ কমে না বরং বাড়ে এবং এর মাধ্যমে জাকাতদাতার অন্তর কৃপণতার কলুষতা থেকে পবিত্রতা লাভ করে। তাই এর নাম জাকাত। ইসলামের পরিভাষায় বলা হয়, শরিয়তের নির্দেশ এবং নির্ধারণ অনুযায়ী নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নিজের মালের একটি নির্দিষ্ট অংশ কোনো অভাবী লোককে অর্পণ করা।

নিত্যপ্রয়োজন মিটিয়ে অতিরিক্ত সাড়ে ৭ তোলা সোনা বা সাড়ে ৫২ তোলা রুপা বা সমমানের নগদ অর্থ-সম্পদের মালিক হলে এবং এ অবস্থায় এক বছর অতিক্রান্ত হলে বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্কের ওপর জাকাত ফরজ হয়। একটি কথা মনে রাখতে হবে, জাকাত কোনো দান নয়; জাকাত গরিবের হক বা অধিকার। জাকাতের বিধান প্রথম মক্কাতে ফরজ হয়। কিন্তু তখন কোন মালের কী পরিমাণ জাকাত দিতে হবে, তার বিস্তারিত বিবরণ নাজিল হয়নি। এরপর দ্বিতীয় হিজরিতে মদিনায় এর বিস্তারিত বিধান নাজিল হয়।

জাকাত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল­াহ ইরশাদ করেন, তোমরা নামাজ কায়েম কর এবং জাকাত আদায় কর। (সুরা বাকারা, আয়াত ৪৩) হাদিসে এসেছে, হজরত আবদুল­াহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, পাঁচটি বস্তুর ওপর ইসলামের ভিত্তি স্থাপিত।

১. এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল­াহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রসুল। ২. নামাজ কায়েম করা। ৩. জাকাত আদায় করা। ৪. হজ পালন করা। এবং ৫. রমজানের রোজা রাখা। (বোখারি)  

অন্য একটি হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি তিনটি কাজ করবে সে ইমানের স্বাদ ও মজা লাভ করবে: যে একমাত্র আল­াহর ইবাদত করবে, জানবে যে আল­াহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং আনন্দিত চিত্তে পবিত্র মনে তার সম্পদের জাকাত প্রদান করবে। (আবু দাউদ : ২/১০৩) মূলত পাঁচ প্রকার সম্পদের জাকাত দেওয়া ফরজ। ১. বিচরণশীল উট, গরু, ছাগল ইত্যাদি গৃহপালিত পশু। ২. সোনা-রুপা। ৩. নগদ টাকা। ৪. ব্যবসা বা বিক্রির জন্য রক্ষিত দ্রব্য। ৫. কৃষিপণ্য বা ফল ও ফসল।

জাকাত দেওয়ার প্রধান মূলনীতি হলো, এটি ব্যক্তিকে দিতে হবে এবং নিঃশর্তে দিতে হবে। জাকাত গ্রহণকারী ব্যক্তিকে পরিপূর্ণ স্বত্ব, মালিকানা ও ব্যয়ের ক্ষমতা দিতে হবে। কোনো নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান যদি সঠিক খাতে ব্যয় করার জন্য জাকাত সংগ্রহ করে, তাহলে তাদেরও জাকাত দেওয়া যাবে। শরিয়তের বিধান মোতাবেক মোট আট শ্রেণির মানুষকে জাকাতের অর্থ দেওয়া যাবে।

তারা হলেন- ১. ফকির (যার নিসাব পরিমাণ সম্পদ নেই) ২. মিসকিন বা নিঃস্ব ব্যক্তি (যার কাছে এক বেলা খাবারও নেই) ৩. ঋণগ্রস্ত মুসলিম। ৪. অসহায় মুসাফির। ৫. জাকাত উত্তোলন, সংরক্ষণ ও বণ্টনের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা। ৬. ইসলাম গ্রহণে ইচ্ছুক অমুসলিম বা নতুন মুসলিম যার ইমান এখনো পরিপক্ব হয়নি। ৭. ক্রীতদাস-বন্দি মুক্তি। এবং ৮. আল­াহর রাস্তায়।

দুই সম্পর্কের মানুষকে জাকাত দেওয়া যাবে না। ১. ঔরসজাত সম্পর্ক। যেমন- বাবা ছেলেকে বা ছেলে বাবাকে। ২. বৈবাহিক সম্পর্ক। যেমন- স্বামী স্ত্রীকে বা স্ত্রী স্বামীকে।

হজরত আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত- রসুল (সা.) বলেছেন, যাকে আল­াহ সম্পদ দান করেছেন কিন্তু সে এর জাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে বিষের তীব্রতাসমৃদ্ধ মাথাবিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দিয়ে তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার মুখের দুই পাশ কামড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত মাল। (বোখারি)

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!