• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যাকে আত্মহত্যা করতে দেননি, ওই মেয়েই তাকে বাঁচালেন


ফেসবুক থেকে ডেস্ক জুন ৩, ২০১৭, ০৩:৪১ পিএম
যাকে আত্মহত্যা করতে দেননি, ওই মেয়েই তাকে বাঁচালেন

ঢাকা: সম্পর্কের টানাপড়েনের কাছে হার মেনে রেল লাইনে প্রাণ দিতে গিয়েছিল মেয়েটি। নিজের প্রাণের মায়া না করেই ঝাঁপিয়ে পড়ে হাত ধরে টেনে এনে মেয়েটিকে বাঁচান বাবুল। তারপর কেটে গেছে বেশ কয়েক বছর। এক সময় হতাশা গ্রাস করা যে মেয়ে রেল লাইনে নিজেকে শেষ করে দেয়ার কথা ভেবেছিল, তিনি এখন ডাক্তার। দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বাবলু যখন মরাণপন্ন, সেই মেয়েই বাঁচিয়ে তুললেন বাবলুকে।

বাস্তবে কি সত্যিই এমন ঘটনা ঘটে? গল্প মনে হলেও বাস্তবে ৫৫ বছরের রিকশাওয়ালা বাবলু শেখের জীবনে এমনই এক ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশের ফটোগ্রাফার জিএমবি আকাশ তার ফেসবুক পোস্টে তুলে ধরেছেন রিকশাওয়ালা বাবলু শেখের অসাধারণ সেই গল্প। বাংলাদেশের একজন ফটোগ্রাফার জিএমবি আকাশের এই ফিচারটি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছে।

হাসপাতালে বাবলুর বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে ওই তরুণীর স্বীকারোক্তি, ‘ওনার (বাবলু) একটি মেয়ে আছে, এক ডাক্তার মেয়ে। একদিন যদি তার প্রাণ না বাঁচাতেন, তাহলে আজ সে ডাক্তার হতে পারতো না।’

এ ঘটনাই বাবলুর বক্তব্যে নিজের ফোটোগ্রাফি ব্লগে তুলে ধরেছেন জিএমবি আকাশ। যেখানে বাবলু বলছেন- আমি আর আমার স্ত্রী সব সময় মেয়ে চাইতাম। কিন্তু আমাদের তিন ছেলে। ৩০ বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছি। বেশির ভাগ সময়ই যাত্রীরা খুব দুর্মুখ হয়। এক দিন সকালে এক ভদ্রলোক তার মেয়েকে আমার রিকশায় তুলে দিয়ে কলেজে নিয়ে যেতে বলেন। বলেছিলেন সাবধানে নিয়ে যেতে। কিছুক্ষণ পরেই মেয়েটা কাঁদতে শুরু করে। আমি পিছন ফিরে তাকালে আমাকে এক ধমক দেয়। কিছু ক্ষণ পর আমাকে থামতে বলে কাকে যেন ফোন করার চেষ্টা করে।

‘ওর কান্না দেখে বুঝতে পারি কোনও ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল বাড়ি থেকে। কিন্তু ছেলেটা আসেনি। হঠাৎ রিকশা থেকে ঝাঁপ দিয়ে পাগলের মতো রেল লাইনের দিকে ছুটতে শুরু করে। আমি চলে আসছিলাম। হঠাৎই মেয়েটির বাবার মুখটা মনে পড়ে গেল। রিকশা ছেড়ে ওর পিছনে ছুটলাম।

5 px
রিকশাচালক বাবলু, ছবি কৃতজ্ঞতা : জিএমবি আকাশ

ওকে আটকে দিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ আমার উপর চিৎকার করার পর অঝোরে কাঁদতে থাকে। আমি থামাইনি। ওকে কাঁদতে দিয়েছিলাম। প্রায় তিন ঘণ্টা কেটে যায় এ ভাবেই। তারপর ও নিজেই আমাকে বলে রিকশা নিয়ে আসতে। আর একটা কথাও আমরা বলিনি।

ততক্ষণে বৃষ্টি নেমে গেছে। বৃষ্টির মধ্যেই ওকে বাড়ি পৌঁছে দিলাম। নামার সময় ছোট্ট অনুরোধ- চাচা, আর কোনো দিন আমার বাড়িতে এসো না। কাউকে বলো না তুমি আমাকে চেনো। ঘাড় নেড়ে বাড়ি চলে এসেছিলাম। সেই দিন কোনো কথা বলিনি, কিছু খেতেও পারিনি। মনে হয়েছিল আল্লাহ মেয়ে না দিয়ে ভালোই করেছেন।

তারপর কেটে গেছে আট বছর। হঠাৎই সেই দুর্ঘটনা। অজ্ঞান হয়ে যাই। সবাই ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। জ্ঞান ফিরতেই দেখতে পাই সাদা পোশাক, গলায় স্টেথোস্কোপ, চোখে চশমা পরা এক তরুণী। আমার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে জানতে চাইছেন, কেমন আছি। কেন আমি এতো দিন দেখা করতে আসিনি। প্রথমে চিনতেই পারিনি।

যখন বড় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো, শুনতে পেলাম- ‘স্যর, উনি আমার বাবা।’ বয়স্ক ডাক্তার ইংরেজিতে কিছু বললেন। আমার জখম হাতটা নিজের হাতে নিয়ে উত্তর এলো- ‘যদি এই বাবার সাহায্য না পেতাম, তা হলে আমি ডাক্তার হতে পারতাম না।’

‘সরু বিছানায় শুয়ে চোখদুটো জোর করে বন্ধ করে রেখেছিলাম। এই অভাগা রিকশাওয়ালার একটা মেয়ে আছে। এক ডাক্তার মেয়ে।’


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!