• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী ইদ্রিস আলীর রায় আজ


আদালত প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৫, ২০১৬, ১২:৪৬ এএম
যুদ্ধাপরাধী ইদ্রিস আলীর রায় আজ

ঢাকা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত পলাতক শরীয়তপুরের মৌলভী ইদ্রিস আলী সরদারের রায় সোমবার (৫ ডিসেম্বর)। বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সোমবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন।

একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শরীয়তপুর ও মাদারীপুর এলাকায় গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হিন্দুদের দেশান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের চার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে এই পলাতক আসামির বিরুদ্ধে।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম জানান, রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা মামলাটি রোববার (৪ ডিসেম্বর) কার্যতালিকায় এলে বিচারক রায় ঘোষণার দিন ঠিক করেন। এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুমের সঙ্গে ঋষিকেশ সাহা ও রেজিয়া সুলতানা চমন শুনানিতে অংশ নেন। আর পলাতক আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে শুনানি করেন গাজী এম এইচ তামিম।

এর আগে প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত ২ নভেম্বর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়।

এ মামলায় গ্রেফতার অপর আসামি মাওলানা সোলায়মান মোল্যা ওরফে সোলায়মান মৌলভী গত ২৫ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। চলতি বছর ২ মে যুদ্ধাপরাধের চার ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ইদ্রিস ও সোলায়মানের বিচার শুরু করেছিল ট্রাইব্যুনাল।

রেজিয়া সুলতানা চমন জানান, যুক্তিতর্কে তারা আসামি ইদ্রিস আলীর সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছেন। ইদ্রিস আলীর বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিতলিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম কাশাভোগ গ্রামে। আর সোলায়মান মোল্যার বাড়ি একই ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামে।

অভিযোগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, সোলায়মান মোল্যা ১৯৬৩ সালে মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং পরে পালং থানার সাংগঠনিক সম্পাদক হন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জমিয়াতুল উলামায়ে ইসলামে যোগ দিয়ে তিনি প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করে পরাজিত হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় সোলায়মান মোল্যা তার নিজের এলাকায় শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠনে নেতৃত্ব দেন এবং যুদ্ধাপরাধ ঘটান বলে প্রসিকিউশনের অভিযোগ।

অভিযোগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ইদ্রিস আলী ষাটের দশকে ছিলেন জামায়াতের তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের স্থানীয় নেতা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনিও রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন এবং যুদ্ধাপরাধ ঘটান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও তিনি জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন বলে তদন্ত সংস্থার ভাষ্য।

শরীয়তপুর সদর উপজেলার স্বর্ণঘোষ গ্রামের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ তালুকদার ২০১০ সালের ১১ মে ইদ্রিস আলী ও সোলায়মান মোল্যাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের আদালতে মামলা করেন। ওই মামলা পরে পাঠানো হয় ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। 

তদন্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল অনুসন্ধান শেষে ইদ্রিস ও সোলায়মানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। গত বছর ২২ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নিয়ে চলতি বছর মে মাসে অভিযোগ গঠন করে। এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে মোট ১৩ জনের সাক্ষ্য শুনেছেন আদালত।

অভিযোগ ১: ১৯৭১ সালের ২২ মে বেলা আনুমানিক ৩টার দিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সোলায়মান মোল্যা ও ইদ্রিস আলীসহ রাজাকার বাহিনীর সদস‌্যদের নিয়ে কাশাভোগ বাজারে যায়। দুই আসামির উস্কানিতে এক সেনা কৃষক আব্দুস সামাদ শিকদারের ওপর গুলি চালায়। তার মৃত্যু হলে আসামিরা সামাদ শিকদারের বাড়িতে লুটপাট চালায়।

পরে তারা সম্ভু নাথ কর্মকার নামের এক কামারকে গুলি করে হত্যা করে এবং হিন্দু অধ্যুষিত মধ্যপাড়া গ্রামে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ওইদিন এই দুই রাজাকার সদস‌্যের নেতৃত্বে ওই বাহিনী গ্রামের প্রায় দুইশ লোককে হত্যা করা হয়। এসব ঘটনায় সোলায়মান মোল্যা ও ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মত মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকা ও সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগ ২: ১৯৭১ সালের ২৩ মে ইদ্রিস আলী ও সোলায়মান মোল্যাসহ রাজাকার বাহিনীর আরও কিছু সদস‌্যকে নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আঙ্গারি বাজারের কাছে লঞ্চঘাট এলাকায় যায় এবং আবুল কালাম হাওলাদার নামের এক ব‌্যক্তিকে ধরে নির্যাতন করে।

পরে তারা পালং থানাধীন হিন্দু অধ্যুষিত মালোপাড়ায় (জেলে গ্রাম) হামলা চালায়। সেখানে ১৫/২০ জন পুরুষ ও ১৪/১৫ জন নারীকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করা হয়; বাড়িঘরে ভাংচুর চালিয়ে লাগানো হয় আগুন।

পরে দুই আসামি ও তাদের সহযোগীরা পাশের রুদ্রকর গ্রামে হামলা চালায়। সেখানে জলিলুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে নির্যাতন করে বেঁধে সাবেক জমিদার প্রেমনাথ চক্রবর্তীর বাড়িতে যায়। সেখানে একটি মন্দির ভাঙা হয় এবং চন্দ্র মোহন চক্রবর্তী নামের একজন পুরোহিতকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

গ্রাম থেকে আটক ব্যক্তিদের হাওলাদার জুট মিলের অস্থায়ী সেনাক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে আসামী ও তাদের রাজাকার সহযোগীরা। সেখানে পুরুষদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং বিভিন্ন বয়সী নারীদের তিনদিন আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়। এসব ঘটনায় দুই আসামির বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগ ৩: একাত্তরে জুন মাসের মাঝামাঝি কোনো এক দিনে দুই আসামিসহ আরও কিছু রাজাকার সদস‌্য ও পাকিস্তানি সেনা মাদারীপুরে আওয়ামী লীগ নেতা শীলেন্দ্র কৃষ্ণ পালের বাড়িতে (এখন ডিসির বাংলো) আক্রমণ করে। তাকে না পেয়ে ওই বাড়ির চারজন পাহারাদারকে নির্যাতনের পর বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়; বাড়িতে চালানো হয় ভাঙচুর। এ ঘটনায় দুই আসামির বিরুদ্ধে আনা হয়েছে হত্যা ও আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ।

অভিযোগ ৪: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ইদ্রিস আলী ও সোলায়মান মোল্যাসহ রাজাকার সদস‌্যরা পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে মাদারীপুরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপকহারে হিন্দুদের ওপর পরিকল্পিত দমন-পীড়ন ও হত্যাকাণ্ড চালায়। ধর্ষণ, নির্যাতন, হত্যা ও অন্যান্য কর্মকাণ্ডের মাধ‌্যমে ত্রাস সৃষ্টি করে তারা বহু হিন্দুকে নিজের ভূমি ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে। এ ঘটনায় দুই আসামির বিরুদ্ধে হিন্দুদের দেশত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!