• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাদের ফাঁসি হলো


সোনালীনিউজ ডেস্ক সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৬, ০৯:৫২ এএম
যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাদের ফাঁসি হলো

মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এখন পর্যন্ত ছয় জনের প্রাণদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচ জন জামায়াতের এবং একজন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা। আপিল বিভাগের রায়ে আরও এক জামায়াত নেতার আমৃত্যু কারাদণ্ড শুরু হলেও তার মৃত্যুদণ্ড চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের রিভিউ আবেদনের শুনানি এখনও শেষ হয়নি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে বিভিন্ন বাহিনী গঠন করে স্বাধীনতাকামীদের অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা, গণহত্যা, লুট, ধর্ষণ, জোর করে ধর্মান্তরিতকরণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিচারের অঙ্গীকার করেছিল। ওই বছরের নির্বাচনে দলের ভূমিধস জয়ের পেছনে এই অঙ্গীকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা ধারণা করে থাকেন।

ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায় হয় সাবেক জামায়াত নেতা আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে। তবে ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি রায়ের আগেই তিনি পালিয়ে যান দেশ ছেড়ে।

আর জামায়াত নেতা হিসেবে ট্রাইব্যুনাল থেকে প্রথম দণ্ড পান দলের সহকারী সেক্রেটারে জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে দেশজুড়ে গড়ে উঠে গণ আন্দোলন। আর ওই আন্দোলনের মুখে সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের অধিকার দেয়। আর আপিল বিভাগের রায়ে শেষ পর্যন্ত কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

প্রথম ফাঁসি: মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার। ২০১৩ সালে ১২ ডিসেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। রাজধানীর মিরপুরের হযরত আলী লস্করের স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং দুই বছরের এক ছেলেকে হত্যার অভিযোগে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে আপিল বিভাগ।

দ্বিতীয় ফাঁসি: একাত্তরের খুনি বাহিনী আলবদরের কমান্ডার জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল। আলবদর বাহিনীর বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের সংগঠক কামারুজ্জামানকে সোহাগপুরে গণহত্যার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ। ‘সোহাগপুর গণহত্যার’ অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী, রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাসদস্যরা শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালায় ও নারী ধর্ষণ করে। এটি কামারুজ্জামানের পরামর্শে পরিকল্পিতভাবে করা হয়। সেদিন ওই গ্রামে ১৬০ জন পুরুষকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার দিন থেকে সোহাগপুর গ্রাম ‘বিধবাপল্লী’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।

তৃতীয় ও চতুর্থ ফাঁসি: মানবতাবিরোধী অপরাধে তৃতীয় ও চতুর্থ ব্যক্তি হিসেবে একই দিন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের। ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর ১২ টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এ দুইজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে প্রথম দণ্ড কার্যকর করা হয় মুজাহিদকে ফাঁসি দেয়ার মাধ্যমে। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে বলা হয়, মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (বর্তমানে শারীরিক শিক্ষা কলেজ) পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বাঙালি নিধনের পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করেন। ওই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় ’৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড শুরু হয়।

বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসি দেয়া হয় চারটি অভিযোগে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এর মধ্যে আছে চট্টগ্রামের কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে তুলে নিয়ে হত্যা, রাউজানের সুলতানপুর গ্রামের হিন্দুবসতিপূর্ণ বণিকপাড়ায় নির্বিচানে গুলি করে বেশ কয়েকজনকে হত্যা, রাউজানের হিন্দু বসতি ঊনসত্তরপাড়া গ্রামে ৭০ জনকে হত্যা এবং হাটহাজারীতে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজাফফর তার পরিবারকে হত্যার পর গুম।

পঞ্চম ফাঁসি: মানবতাবিরোধী অপরাধে চলতি বছরের ১১ মে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় মুক্তিযুদ্ধে আলবদর বাহিনীর নাজিম ই আলা মতিউর রহমান নিজামীর। ওই দিন রাত ১২টা ১০ মিনিটে রাজধানীর কেন্দ্রীয় কারাগারে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।তার বিরুদ্ধে আনা তিনটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় একাত্তরের বদর প্রধানকে। মৃত্যুদণ্ড হওয়া তিনটি অভিযোগের মধ্যে ছিল পাবনার সাঁথিয়ায় বাউশগাড়ি, ডেমরা ও রূপসী গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে হত্যা ও ধর্ষণ, পাবনার ধুলাউড়ি গ্রামে শিশুসহ ৫২ জনকে হত্যা এবং বুদ্ধিজীবীকে হত্যার দায়ে।

ষষ্ঠ ফাঁসি: মানবতাবিরোধী অপরাধে সব শেষ দণ্ড কার্যকর হলো মীর কাসেম আলীর। এই আলবদর কমান্ডার মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামের ডালিম হোটেলে নির্যাতনকেন্দ্র খুলে বাঙালিদের ধরে নিয়ে অত্যাচার ও নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে ট্রাইব্যুনাল ও আপিল বিভাগে। আর কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে হত্যার দায়ে এই মৃতুদণ্ড পেয়েছেন একাত্তরে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বদর বাহিনীর কমান্ডার।

অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা ও ধর্ষণের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের নায়েবে আমিরকে মৃত্যুদণ্ড দিলেও আপিল বিভাগ সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড করেছে। এরই মধ্যে এই দণ্ড কার্যকর শুরু হয়েছে। তবে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের রায়  ‍পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেছে। যদিও এই আবেদনের ওপর শুনানির দিন এখনও ঠিক হয়নি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!