• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যে কারণে আন্দোলনকারীদের কঠোর হাতে দমন করা হবে!


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ১৭, ২০১৮, ০৬:৫০ পিএম
যে কারণে আন্দোলনকারীদের কঠোর হাতে দমন করা হবে!

ঢাকা: আগামী নির্বাচনের আগে বিভিন্ন ধরনের আন্দোলনের আশঙ্কা করছে সরকার। সামাজিক বিষয়সহ নতুন নতুন ইস্যুতে এ ধরনের আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। সেজন্য সরকারের সব সংস্থা এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তবে সম্ভাব্য এসব আন্দোলন কঠোর হাতে দমন করবে সরকার। আর ভবিষ্যতে আন্দোলনভীতি তৈরি করতে কোটা সংস্কার এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে ‘সহিংসতাকারীদের’ কোনোভাবেই ছাড় দিবে না সরকার। দল ও সরকারের একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

সূত্রগুলো জানায়, কোটা আন্দোলনের পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে গড়ে উঠা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে বেশ বিপাকে পড়ে সরকার। চরম দুর্ভোগ সহ্য করেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে যৌক্তিক আখ্যা দিয়ে হাসিমুখে সমর্থন জানায় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। ফলে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া এ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে বাধ্য হন সরকারের একাধিক মন্ত্রী-এমপি এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা। একপর্যায়ে আন্দোলন কোন দিকে মোড় নেয় তা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন আওয়ামী লীগ ও সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা। বিষয়টি নিয়ে তাদের অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও আন্দোলন অব্যাহত থাকায় চিন্তিত হয়ে পড়েন সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা। তবে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আন্দোলন দমনের পথে যায় সরকার। তার একক সিদ্ধান্তে বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, আন্দোলনের সময় বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও সরকারসমর্থিত নেতাকর্মীদের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে জড়ানো শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে হার্ডলাইনে রয়েছে সরকার। অসংখ্য মামলায় অনেক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে রিমান্ডেও নেয়া হয়েছে। ফেসবুকে গুজব ছাড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শহিদুল আলমসহ বিভিন্ন পেশাজীবীকে। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে নতুন করে যাতে কোনো আন্দোলন গড়ে উঠতে না পারে সে ব্যাপারে একটি বার্তা দিতে চায় সরকার।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এ ধরনের আরো আন্দোলন এবং ‘ষড়যন্ত্র’ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সরকার; যা শেষ পর্যন্ত সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিতে পারে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোটের বৈঠকেও এ আশঙ্কা করা হয়েছে। এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে বারবার দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর সাথে সর্বশেষ যৌথসভায় নেতাকর্মীদের ভবিষ্যৎ আন্দোলন এবং ‘ষড়যন্ত্র’ নিয়ে সতর্ক করা হয়। আর সতর্কতার পাশাপাশি ভবিষ্যতে জনগণের মধ্যে সরকারবিরোধী আন্দোলনভীতি তৈরি করতেই কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকারীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। 

আন্দোলনের সময় বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে জড়ানো শিক্ষার্থীদের সাধারণ ক্ষমার দাবি নাকচ করে নিয়মিত রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আন্দোলনকারীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। সরকারের নির্দেশে আন্দোলনের শুরুর দিকে সহায়তা করা হলেও বর্তমানে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ওপর বিভিন্ন ধরনের দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, আন্দোলনকারীদের ব্যাপারে কোনো ধরনের ছাড় দিতে নারাজ সরকার। সেজন্যই তাদের বিরুদ্ধে নানা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে যারা আন্দোলনের ছক কষছেন তাদেরকে একটি বিশেষ বার্তা দিতে চায় সরকার। তা হলো সাধারণ ছাত্র, সাধারণ জনগণ এবং সর্বোপরি সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। বিষয়টি অনেকটাই ‘ঝিকে মেরে বউকে বোঝানোর মতো।’ 

দুইজন নেতা বলেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় আমাদের অনেক নেতা-মন্ত্রী এমপিরই ভীত চেহারা প্রকাশ পেয়েছে। সেজন্যই কোনো ভীত ও দুর্বল চিত্তের লোক আমার সাথে চলতে পারে না বলে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের এক রকম ভর্ৎসনাও করেন। ভবিষ্যতেও এমন আন্দোলন দানা বাঁধতে পারে। সেজন্য দল ও সরকার আন্দোলনকারীদের কঠোরভাবে শায়েস্তা করার পক্ষে। যাতে এভাবে কেউ রাস্তায় না নামতে পারে। একই সাথে যারা প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে সরকারের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারে লিপ্ত হন তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। ভবিষ্যৎ পথ মসৃণ করতেই এমন কৌশল নেয়া হয়েছে। 

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ গতকাল শনিবার বলেন, ‘নাশকতাকারী যেই হোক তার ব্যাপারে কোনো ছাড় নয়। আর এটি সরকারের কোনো ধরনের রাজনৈতিক কৌশলও নয়। দেশ ও জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থেই কঠোর অবস্থানে সরকার। ভবিষ্যতে যাতে দেশে কেউ সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!