• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যে কোনো সময় নির্বাচনে প্রস্তুত আ.লীগ-বিএনপি


সোনালী বিশেষ ডিসেম্বর ৫, ২০১৭, ০৩:১৫ পিএম
যে কোনো সময় নির্বাচনে প্রস্তুত আ.লীগ-বিএনপি

ঢাকা : আগাম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মাঠ সরগরম হয়ে উঠছে। কদিন ধরেই আগাম নির্বাচনের গুঞ্জন বাতাসে ভাসছে। কয়েকদিন আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) বক্তব্য সে গুঞ্জনকে সত্যতার দিকে ধাবিতও করছে।

এদিকে আগাম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে অংশ নিতে প্রস্তুত রয়েছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, তাদের দল যে কোন সময় নির্বাচনে অংশ নিতে তৈরি। আগামী মাসেও যদি নির্বাচন হয় আওয়ামী লীগ তাতে অংশগ্রহণে প্রস্তুত রয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও তার দল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি এদেশের সবচেয়ে বড় জনসমর্থিত রাজনৈতিক দল। আমরা সবসময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকি।’

তবে বরাবরের মতোই নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বিএনপির রয়েছে শর্ত। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ জানিয়েছেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হলে যে কোন সময় বিএনপিরও নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি রয়েছে। অবশ্য নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করা হয় কী না- সেটাই মূখ্য বিষয়।

এর আগে আগাম নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাও। গত বুধবার সিইসির সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনসিয়ে টিয়েরিংক বৈঠক করেন। ওই বৈঠক শেষে সিইসি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন,  সরকার চাইলে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রস্তুত রয়েছে। নির্বাচন কমিশন আগাম নির্বাচনের জন্য কতটুকু প্রস্তুত সে সম্পর্কে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘সেটা করা যাবে। নির্বাচনের জন্যতো ৯০ দিন সময় থাকে। এটাতো সরকারের ওপর নির্ভর করে আগাম নির্বাচনের বিষয়টা। তারা যদি আগাম নির্বাচনের জন্য বলে, তখন আমরা পারবো। সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের কোনো আপস নেই।’

এদিকে আগাম নির্বাচন বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল সোমবার নয়াপল্টনে সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আগাম নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বলে ওবায়দুল কাদের ও সিইসি’র একই সুর প্রমাণ করে সিইসি সরকারের নির্মিত সেই পুরনো পথেই হাঁটবেন। অথচ একটি স্বাধীন সার্বভৌম নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব দেশে অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে চাকরি রক্ষার্থে বর্তমান সিইসি অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়টি আমলে নিবেন না।’

ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে গত শুক্রবার দলের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্যদের সঙ্গে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যৌথসভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন আগামী মাসে হলেও আওয়ামী লীগ প্রস্তুত।’

 তিনি বলেন, ‘আমরা তো প্রস্তুতি নেবো আগামী মাসে নির্বাচন হলে কিভাবে জিততে পারি। যদি নির্বাচন আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে হয়, তাহলে আমাদের সাংগঠনিক প্রস্তুতি থাকবে না? নির্বাচনের বিষয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখতিয়ার। তিনি তো বলেন নাই কবে নির্বাচন হবে। আমরা ধরে রাখছি নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে। কিন্তু এখন যদি প্রধানমন্ত্রী মনে করেন তিনি আগাম নির্বাচন দেবেন সেটা তার এখতিয়ার। এটা নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনও কথা হয় নাই। তবে নির্বাচনের জন্য আমরা সব সময়ই প্রস্তুত আছি।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জনসমর্থনের দিক দিয়ে বিএনপি আওয়ামী লীগ থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আগামীবার ক্ষমতায় আসব কি আসব না, সেটা নির্ধারণ করবেন আল­াহ ও এ দেশের জনগণ। আমরা শুধু বলছি, বিজয়ের ব্যাপারে আমাদের আÍবিশ্বাস রয়েছে, কারণ আমাদের উন্নয়ন ও অর্জন আছে।’

একই দিন জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক কাউন্সিল’ আয়োজিত ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গণমাধ্যমের ভ‚মিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের আগে নির্বাচন হলেও বিএনপি অংশগহণ করতে প্রস্তুত। তবে নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে। যেকোনো সময় নির্বাচন দিলে, আমরা সেই নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করব একটা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ পরিবেশে।’

এদিকে, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো যত দ্রুত সম্ভব সেরে নিচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বছর খানেক আগে থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি ও আগাম প্রচার চালিয়ে আসছে। প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশের যেখানেই যে উপলক্ষে ভাষণ বা বক্তৃতা দিয়েছেন সেখানেই অনিবার্যভাবে নির্বাচনের প্রসঙ্গটি উলে­খ করেছেন। জনগণের ভোট চাওয়ার পাশাপাশি কেন আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ফের ক্ষমতায় আনতে হবে, তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছেন।

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অন্যান্য নেতাও প্রধানমন্ত্রীকে অনুসরণ করে ভোট চাইছেন, দলীয় নেতাকর্মীদের নির্বাচনমুখী করার চেষ্টা করছেন। ওবায়দুল কাদের তো একটা থিওরীই উপহার দিয়েছেন। বলেছেন, উন্নয়নের স্বার্থে একটি দলের পরপর চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা উচিৎ।

অপরদিকে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপি সবসময়ই একটি নির্বাচন-মুখি দল, তবে মূল কথা হচ্ছে সেই নির্বাচনের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে কিনা।’ যদিও বিএনপি এরইমধ্যে ‘ভিশন-২০৩০’ উপস্থাপন করেছে। জাতীয় জীবনের এমন কোনো দিক-বিভাগ নেই যা ভিশন ২০৩০-এ নেই। অনেকের মতে, এটি নির্বাচনী ইশতেহার না হলেও বিএনপি এ ভিশন তৈরি ও উপস্থাপনের সময় নির্বাচনের বিষয়টিও যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রেখেছে। এর ভিত্তিতে নির্বাচনী ইশতেহার খুব সহজেই তৈরি করা যাবে।

ভিশন-২০৩০ উপস্থাপনের মাধ্যমে বিএনপি যে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চায়, তাও জানান দিয়েছে। কারণ, ভিশন বাস্তবায়ন করতে হলে ক্ষমতায় যাওয়ার বিকল্প নেই। আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতিও তার আছে এবং এ নিয়ে দলটি কাজ করে যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনে ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার সুযোগ কোনো দলের থাকবে না।  

জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে পূর্ণ শক্তি নিয়ে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে দলের নীতি-নির্ধারক মহল দলকে সুসংগঠিত করার দিকে অধিক মনোযোগ দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে দলের মধ্যকার কোন্দল নিরসন ও তৃণমূলে উপযুক্ত নেতৃত্বের বলয় সৃষ্টির জন্য ৫১টি টিম গঠিত হয়েছে, যারা মাঠ পর্যায়ে সভা-সম্মেলন করে দলকে সংহত করতে তৎপর রয়েছে।

এছাড়া সরকারের শরীক ও জাতীয় সংসদে বিরোধী দল জাপা (এরশাদ) ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে আরো আগে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!