• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যে পীরেরা প্রভাবিত করেন পাকিস্তানের নির্বাচন


আন্তর্জাতিক ডেস্ক জুলাই ২৩, ২০১৮, ০২:৪২ পিএম
যে পীরেরা প্রভাবিত করেন পাকিস্তানের নির্বাচন

ঢাকা : পাকিস্তানে বুধবার (২৫ জুলাই) সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর এই নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন দেশটির অসংখ্য সুফি নেতা বা পীর। তারা বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে তাদের সমর্থন ঘোষণা করে তাদের পক্ষে ভক্ত অনুসারীদের ভোট দেয়ার আদেশ দিচ্ছেন।

অনেক পীর বা তাদের বংশধররা নিজেরাও সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

ইসলামাবাদের উপকণ্ঠে একটি কমিউনিটি সেন্টার, যেখানে সাধারণত বিয়েশাদীর অনুষ্ঠান হয়, সেখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে কয়েক শ’ পীর বা সুফি সাধকদের একটি সম্মেলন। সেই সঙ্গে এখানে সমবেত হয়েছেন কয়েক শ’ ভক্ত, যাদের মধ্যে রয়েছে ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খান।

সেখানে অংশ নেয়া প্রভাবশালী গোরা শরীফ দরবারের পীর ঘোষণা করেন যেন, তার অনুসারীরা সবাই ইমরান খানের দলকে সমর্থন করে।

এই ঘোষণার বিষয়ে তার একজন মুরিদ বলছেন, ‘আমার যারা এখানে আছি, আমরা পীর সাহেবের গোলাম। তার আদেশ যাই হোক না কেন, আমরা আনন্দের সঙ্গে তা মেনে নেবো। সেটি ঠিক না ভুল, তা নিয়ে আমরা বিতর্কে যাবো না। তিনি যা বলবেন, আমরা তাই করবো।’

এক গবেষণা অনুসারে, পাকিস্তানের পার্লামেন্টের মোট সদস্যের মধ্যে ১৬ শতাংশ পীর অথবা তাদের কোন বংশধর। তবে অনেক পীর নিজেরা সরাসরি নির্বাচনে অংশ না নিয়েও অন্য প্রার্থীদের নির্বাচন জয়ে সহায়তা করেন। ওই অনুষ্ঠানে বিবিসি সংবাদদাতার কথা হচ্ছিল ইমরান খানের দলের একজন প্রার্থীর ভাইয়ের সঙ্গে, যাকে একজন পীর সমর্থন দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

তিনি বলছেন, ‘পীর আমাদের সমর্থন দিতে রাজি হয়েছেন। আজ সকালেই তার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তিনি এখন এখানে সেই ঘোষণা দেবেন।’

এই ধরণের আধ্যাত্মিকতার বিষয়টি এখনো পাকিস্তানে ব্যাপকভাবে প্রচলিত, ফলে পীরদের প্রভাবও ব্যাপক। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে টাকা আর জমি লেনদেনের বিষয়টিও। কোন প্রার্থী বিজয়ী হতে পারে, সেটা দেখে প্রায়ই এই পীররা তাদের সমর্থন পরিবর্তন করেন।

কেন তারা এখন ইমরান খানকে সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, একজন পীরের কাছে জানতে চেয়েছিলেন সংবাদদাতা।

তিনি বলছেন, ‘আমার একদিনেই এই সিদ্ধান্ত নেইনি। গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক স্কলারের সঙ্গে আলাপ আলোচনার পর আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন তারা সবাই নিজেদের এলাকায় ফিরে যাবে এবং তাদের ভক্ত অনুসারীদের ইমরান খানকে ভোট দেয়ার জন্য বলবে।’

তিনি মনে করেন, রাজনীতি আর ধর্ম পরস্পর জড়িত বিষয়, অনেকটা রেললাইনের দুটি লাইনের মতো। সমাবেশে ইমরান খান ঘোষণা দিচ্ছেন, তিনি পাকিস্তানকে একটি ইসলামিক কল্যাণ রাষ্ট্র বানাতে চান। এর আগের ক্ষমতাসীন দল পিএমএল (এন) পার্টিও অতীতে এই ধর্মীয় গোষ্ঠীর বেশিরভাগ সমর্থন পেয়েছিল। কিন্তু এখন মি. খান সেই সমর্থন আদায় করে নিয়েছেন।

এর কারণ ব্যাখ্যা করছিলেন ইমরান খানের দলের একজন নেতা শিবলি ফারাজ।

ফারাজ বলছেন, ‘এটা একটি ধর্মপ্রাণ সমাজ, সুতরাং আমরা সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রের মানুষের কাজে যাবার চেষ্টা করছি। পীররা আমাদের সমাজে এখনো অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি, তারা অনেক ভোট সংগ্রহ করতে পারেন। তাদের ভক্তদের ওপর তাদের অনেক প্রভাব রয়েছে। আর এটাই পাকিস্তানী রাজনীতির বাস্তবতা।’

তবে তিনিও মনে করেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একদিন এসব আধ্যাত্মিকতা বাদ দিয়ে প্রার্থীদের যোগ্যতার বিষয়টি ভোটারদের কাছে প্রাধান্য পাবে। শিক্ষা, সচেতনতা আর ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পীরদের প্রভাব এখন অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। তবে এখনো পীররা পাকিস্তানের আধ্যাত্মিকতা আর রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবেই রয়েছেন।

পাকিস্তানে আত্মঘাতী হামলায় ইমরান খানের দলের প্রার্থী নিহত : নির্বাচনের মাত্র দু’দিন আগে আত্মঘাতী হামলায় পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খানের রাজনৈতিক দলের এক প্রার্থী নিহত হয়েছেন। দেশটির পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, হামলায় আহত হয়েছে আরো কমপক্ষে চারজন।

বুধবার (২৫ জুলাই) পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের আশা করছেন ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান।

স্থানীয় দুই পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে রোববার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খাইবার পাখতুনখাওয়ায় দলটির রাজনৈতিক সমাবেশে কয়েক দফা বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। চলতি মাসে দেশটিতে এক আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ১৪৯ জনের প্রাণহানি ঘটে।

পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের প্রার্থী ইকরামুল্লাহ গান্দাপুরের গাড়ি লক্ষ্য করে রোববারের ওই হামলা হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। খাইবার পাখতুনখাওয়ার দেরা ইসমাইল খান আসন থেকে পিটিআইয়ের হয়ে নির্বাচনে লড়াই করছিলেন এই প্রার্থী। পুলিশ কর্মকর্তা জহুর আফ্রিদি বলেছেন, হামলায় ইকরামুল্লাহ গান্দাপুর নিহত হয়েছেন। আমরা তার ময়নাতদন্ত করছি।

নওয়াজের বিচারে সেনা হস্তক্ষেপের অভিযোগ : পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত নওয়াজকে কারাগারে রাখতে বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করছে সেনাবাহিনী; স্বয়ং একজন বিচারপতি এই অভিযোগ তুলেছেন। হাইকোর্টের বিচারপতি শওকত আজিজ সিদ্দিকী সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের (ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স) বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছেন।

শনিবার রাওয়ালপিন্ডি জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনে বক্তব্য দেন বিচারপতি শওকত আজিজ সিদ্দিকী। সে সময় তিনি অভিযোগ করেন, আসন্ন নির্বাচনের সময়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তার মেয়েকে কারাগারে রাখতে আইএসআই ইসলামাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ আনোয়ার খান কাসির কাছে হাজির হয়েছিলেন।

বিচারপতি শওকত দাবি করেন, প্রধান বিচারপতির কাছে গিয়ে ওই সংস্থা বলেছে, তারা চায় না নওয়াজ শরিফ ও তার মেয়ে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বাইরে আসুক। তার দাবি অনুযায়ী, শওকত আজিজ সিদ্দিকীকে নওয়াজের আপিল শুনানির বেঞ্চে না যুক্ত করার পরামর্শ দেয়া হয়।

শওকত আজিজ বলেন, আজকের যুগে বিচারিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পুরোপুরিভাবে জড়িত আইএসআই। তাদের কর্মীরা নিজেদের ইচ্ছামতো বেঞ্চ গঠন করতে পারছে। বিচারিক বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুললেও নিজের বক্তব্যে তার কোনো প্রমাণ দেননি তিনি।

লন্ডনে কেনা চারটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মূল্য পরিশোধে দেয়া অর্থের উৎস দেখাতে ব্যর্থ হওয়ার দায়ে ৬ জুলাই নওয়াজ শরিফকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন পাকিস্তানের অ্যাকাউন্টিবিলিটি আদালত। মেয়ে মরিয়মকে দেয়া হয় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। ১৩ জুলাই লন্ডন থেকে আবুধাবি হয়ে দেশে ফিরে গ্রেফতার হলে নওয়াজ ও মরিয়মকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের আপিলের শুনানির তারিখও আগামী ২৫ জুলাইয়ের নির্বাচনের পর নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, দুর্নীতি নয়, নওয়াজের পরিণতির কারণ সেনা বিরোধিতা। ১৯৯৯ সালে তৎকালীন সেনাপ্রধান পারভেজ মোশাররফকে বরখাস্ত করার মাধ্যমে যার সূচনা করেছিলেন নওয়াজ। সেনাবাহিনীর নওয়াজবিরোধী ভূমিকাও কারও অজানা নয়।

সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক প্রধানমন্ত্রিত্বে অযোগ্য ঘোষণা করার পর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সেনাবাহিনীর নওয়াজবিরোধী অবস্থানের কথা উঠে আসে।
শনিবার কারও নাম উল্লেখ না করে বিচারপতি শওকত অভিযোগ করেন, ‘আমি জানি কার বার্তা কে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন।’

তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘অ্যাকাউন্টিবিলিটি আদালতের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ইসলামাবাদ হাইকোর্টের কাছ থেকে কেন নিয়ে নেয়া হলো?’ তিনি অভিযোগ করেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে আর এখন তা ‘বন্দুকধারী ব্যক্তি’দের নিয়ন্ত্রণে।

বিচারপতি শওকত সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাকে বলা হয়েছিল যদি আপনি আমাদের নিশ্চিত করেন যে আপনার রায় আমাদের পক্ষে আসবে তাহলে আপনার বিরুদ্ধে আরোপিত অভিযোগগুলো শেষ করে দেয়া হবে।’ সেপ্টেম্বর নাগাদ তাকে প্রধান বিচারপতি বানানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন শওকত।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!