• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যে যন্ত্রের ভয়ে বিএনপি!


হৃদয় আজিজ ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৭, ০২:৩৮ পিএম
যে যন্ত্রের ভয়ে বিএনপি!

ফাইল ছবি

ঢাকা: একটি গণতান্ত্রিক দেশে ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা বিরোধী দল করবে- এটাই স্বাভাবিক। তবে সে সমালোচনা হতে হবে গঠনমূলক ও জনকল্যাণের পক্ষে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানেও হয় ‘রাজনৈতিক সমালোচনা’, তবে তা কতটা গঠনমূলক তা নিয়ে আছে অনেক প্রশ্ন। পৃথিবীর মধ্যে সম্ভবত বাংলাদেশেই এটা ঘটে থাকে যে- ক্ষমতাসীন দল যেটা বলবে বা সিদ্ধান্ত নেবে  বিরোধী বা প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল তার একেবারেই উল্টোটা বলে বসবে। সেটা জনগণের পক্ষেই হোক কিংবা বিপক্ষে। বিরোধিতার খাতিরেই বিরোধিতা করাই এখানকার রাজনৈতিক কালচার।

বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে তেমন কথা বলতে দেখা যায় না। তবে এ বিষয়ে বেশ সরব দেখা যায় সংসদের বাইরে থাকা প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল বিএনপিকে। তারা সরকারি যেকোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নয়াপল্টনের কার্যালয় থেকে বিবৃতির মাধ্যমে বা সংবাদ সম্মেলন করে সমালোচনা কিংবা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে!

বর্তমানে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রধান বিতর্কের বিষয় ২০১৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপির গতিবিধি দেখে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে তারা অবশ্যই অংশগ্রহণ করবে। তাহলে বিতর্ক কী নিয়ে? বিতর্ক হলো- সেই নির্বাচনে ‘নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনকালীন সরকার এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ’। তবে এবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘ভোটযন্ত্র’। 

এর আগে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার নিয়েও আমাদের বিজ্ঞ সরকারি দল ও প্রাজ্ঞ প্রতিপক্ষ দলের মধ্যে বিস্তর বাদানুবাদ চলেছিল। লোহার ব্যালট বাক্সটি থাকবে, নাকি তার পরিবর্তে প্লাস্টিকের স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স আনা হবে, তা ছিল বিতর্কের বিষয়। বিএনপি মনে করত, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স হলেই সরকারি দলের জন্য ভোট কারচুপি সহজ হবে। তারা এই অজুহাতে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন পর্যন্ত বর্জন করেছিল। এখন আর সেই স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স বিতর্কের বিষয় নয়।

স্বচ্ছ ব্যালট বক্সে ভোট

কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব না নিতেই আভাস দিলেন ভোটযন্ত্রের। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে চায় নির্বাচন কমিশন। কাগুজে ব্যালটের পরিবর্তে যন্ত্রের মাধ্যমে ভোট নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। যন্ত্র তৈরির কাজও অনেকটা এগিয়েছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমের নতুন রূপ হলো ডিভিএম বা ডিজিটাল ভোটিং মেশিন।

এর পক্ষে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানিয়েছেন, ‘মানুষের ভোটাধিকার অধিকতর সুনিশ্চিত করার স্বার্থে আগামী নির্বাচনে ই-ভোটিং প্রবর্তন করার পরিকল্পনা বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে।’

ই-ভোটিং চালুর বিষয়ে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের জবাবে গত বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী যে ই-ভোটিং ব্যবস্থার কথা বলছেন, তা নিঃসন্দেহে দুরভিসন্ধিমূলক, জনগণের ভোটকে স্বীয় উদ্দেশ্য সাধনে জালিয়াতি করার প্রচেষ্টা মাত্র। আমরা মনে করি এটি প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি ভেল্কিবাজিরই বহিঃপ্রকাশ।’

বাংলাদেশের ইভিএমের ইতিহাস থেকে জানা যায়, এ পদ্ধতিতে ভোট নেয়ার পরিকল্পনা করেছিল শামসুল হুদা কমিশন। তবে তখন এটা বাস্তবতায় রূপ না নিলেও ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি ওয়ার্ডে প্রথমবারের মতো ইভিএম ব্যবহার করা হয়। ওই কমিশন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৯টি ওয়ার্ডে ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব ওয়ার্ডে ইভিএম ব্যবহার করে। সদ্য বিদায়ী রকিব কমিশন কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহার করে। 

ইভিএমে যেভাবে ভোট নেয়া হবে: ইভিএমের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) পদ্ধতিতে ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত করা হবে। প্রথমে একজন ভোটার ওই যন্ত্রে আঙুলের ছাপ দেবেন। জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ডেটাবেইসের সঙ্গে ভোটারের আঙুলের ছাপ মিলিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত করা হবে। আঙুলের ছাপ মিললে ভোটার ভোট দিতে পারবেন। ওই ভোটার একটি ভোট দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যন্ত্রটি বন্ধ (লক) হয়ে যাবে। এরপর ওই ভোটার আর কোনোভাবেই আরেকটি ভোট দিতে পারবেন না। তাছাড়া ই-ভিএমে স্মার্ট কার্ড প্রবেশ করিয়েও ভোটারের পরিচয় শনাক্ত করার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। নির্ধারিত ভোটার ভোটকেন্দ্রে না গেলে বা কেন্দ্র দখল করে কোনো ভোটারের ভোট অন্য কারও পক্ষে দেওয়ার সুযোগ থাকবে না।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেনও বলেছেন, যন্ত্রে আগে থেকে কারসাজি করার কোনো সুযোগ নেই। একটি ভোটের জন্য একবারই প্রোগ্রামিং (ওটিপি) করা হয়। ভোট শুরুর আগে কোনো যন্ত্রে কারসাজি করা হলে সেটা তো আর কাজই করবে না। 

ইভিএম

তবে এবার প্রশ্ন হলো- যদি ই-ভোটিংয়ে বিএনপি নির্বাচনে যেতে চায়, তাহলে কতটা প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম চালুর আগে রাজনৈতিক ঐকমত‌্য তৈরির পাশাপাশি এ প্রযুক্তির ওপর সাধারণের আস্থা আনতে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম এবং আইন ও বিধি সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন এ পদ্ধতিতে করতে চাইলে প্রতিটি ভোটকক্ষে অন্তত একটি ব‌্যালট ইউনিট ও একটি কন্ট্রোল ইউনিট লাগবে। যান্ত্রিক গোলযোগ এড়াতে প্রতি কেন্দ্রে রাখতে হবে বাড়তি ইভিএম। অর্থাৎ, সারা দেশে তিন লাখেরও বেশি ভোট কক্ষে ইভিএমে ভোট করতে হলে স্বল্প সময়ে তার চেয়ে বেশি যন্ত্র প্রস্তুত করতে হবে, যেগুলো বিগড়ে না গিয়ে নির্ভুল কাজ দেখাতে পারবে।

গত সপ্তাহে শপথ নেওয়া নতুন নির্বাচন কমিশনের জন‌্য মাত্র ২২ মাসের মধ্যে এত যন্ত্র প্রস্তুত করার পাশাপাশি কয়েক লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে; ভোটারদের করতে হবে সচেতন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত করাও বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

বিদায়ী নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, ডিভিএমে ভোট নেয়ার বিষয়টি এখন কারিগরি কমিটির মতামতের অপেক্ষায় আছে। তারা কিছু কাজ এগিয়ে রেখেছেন। এই মেশিন নিয়ে যাতে কোনো বিতর্কের সুযোগ না থাকে, সে জন্য কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যায় তা কমিটি দেখবে। 

সোনালীনিউজ ডটকম/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!