• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যেভাবে খালেদাকে মুক্ত করতে চান ফখরুল


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১১, ২০১৮, ০১:৩৩ পিএম
যেভাবে খালেদাকে মুক্ত করতে চান ফখরুল

ঢাকা: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী পঞ্চম বিশেষ জজ আদালত। রায় ঘোষণার পরপরই তাকে ওই দিন বিকেলে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন থেকে খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন।

এদিকে, দলীয় চেয়ারপারসনকে মুক্ত করতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে তা পালন করছে বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। তবে উচ্চ আদালতে রায়ের নথি না আসায় জামিনের বিষয়ে আদেশের সময় নেয়া হয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। 

গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দীর্ঘ সময় নিয়ে সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা শেষে সরকার খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়েছে। এ অবস্থায় দলের প্রথম চ্যালেঞ্জ চেয়ারপারসনকে কারামুক্ত করা। কারামুক্ত চেয়ারপারসনকে নিয়েই দল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেতে চায়। সরকার এ ক্ষেত্রে বাধা হলে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের মতো বর্তমান সরকারকেও গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিদায় করা হবে। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারকে বারবার আলোচনায় বসার আহ্বান জানানো হলেও তাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। নির্বাচনের আর মাত্র আট মাস বাকি থাকলেও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের আলোচনায় বসার কোনো লক্ষণ নেই। বরং ৫ জানুয়ারি মার্কা আরেকটি ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনের দিকে হাঁটছে সরকার। এভাবে চলতে পারে না। বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের অপচেষ্টা রুখে দেবে।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে তার গুলশানের বাসভবনে বালুর ট্রাক দিয়ে অবরুদ্ধ রেখে সরকার একতরফা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছে। এবার তাকে কারাগারে রেখে অথবা আদালতের মাধ্যমে অযোগ্য ঘোষণা করে একাদশ সংসদ নির্বাচন করতে চাইছে। কিন্তু দেশের জনগণ সরকারের সে স্বপ্ন পূরণ হতে দেবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অগণতান্ত্রিক এ সরকারের পতন ঘটানো হবে। কারণ হরতাল, অবরোধ এখন আর দেশের জনগণ পছন্দ করে না।

সরকারের বদ্ধমূল ধারণা হয়েছে, বিএনপির আন্দোলন করার মতো শক্তি নেই। নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ নয়। এ অবস্থায় কীভাবে বিএনপি আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটাবে?’ এ প্রশ্নের জবাবে মহাসচিব বলেন, ব্যর্থতা থেকেই সফলতা আসে। বিগত আন্দোলনগুলো কেন ব্যর্থ হয়েছে, দল তা পর্যালোচনা করেছে। তাই আগামীদিনে আন্দোলন-সংগ্রামে সতর্কতার সঙ্গে অগ্রসর হবে দল। সবচেয়ে বড় কথা, প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম সবচেয়ে বড় ক্রাইসিসে আছে বিএনপি। শুধু বিএনপি নয়, দেশের জনগণ আজ অধিকারহারা। গণতন্ত্র নির্বাসিত। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। বিভেদ ভুলে তারা এক কাতারে শামিল হয়েছেন। এই ঐক্যবদ্ধ বিএনপি হবে আগামীদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে সফল হওয়ার মূলমন্ত্র।

তিনি বলেন, রাগ-অভিমান করে যেসব নেতা দীর্ঘদিন দলের বাইরে ছিলেন, তাদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। যে যেখানে আছেন, যোগাযোগ করলেই তাকে দলের কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানকে এরই মধ্যে দলের কাজে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। সর্বশেষ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। চেয়ারপারসনসহ দলের মনোনয়ন বোর্ডের সামনে হাজির হয়েছিলেন। আগামীদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি সম্পৃক্ত হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।

যে কারণে আগামীদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে সফল হওয়ার কথা বিএনপি ভাবছে, সে সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে জেলা পর্যায়ের নেতারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় খুব একটা থাকতেন না। তবে এবার ব্যতিক্রম। এখন নেতারা জেলা পর্যায়ে থাকছেন। দুই-চারজন যারা থাকতে পারছেন না, তারাও আগামীদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে নিজ নিজ এলাকায় থাকবেন। লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসব নেতার সঙ্গে কথা বলে নির্দেশনা দিচ্ছেন। তারা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে অঙ্গীকার করেছেন, যেকোনো মূল্যে তারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় থাকবেন। দলকে যারা ভালোবাসেন, তারা দলের এমন দুর্দিনে দূরে থাকতে পারেন না। নিশ্চয়ই আগামীদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে তারা যুক্ত হবেন এবং অন্যদেরও উৎসাহিত করবেন।

‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চেষ্টা করছে সরকার। রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন গুঞ্জনও রয়েছে। বিএনপি তা কীভাবে মোকাবেলা করবে?’-জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার মতো মেধা, যোগ্যতাসম্পন্ন নেতা বিএনপিতে আছে। সরকার বাস্তবে এমন কৌশল করলে বিএনপি পাল্টা কৌশল গ্রহণ করে তা মোকাবেলা করবে। 

‘সরকার হার্ডলাইনে গেলে তা মোকাবেলায় বিএনপিও যদি একই পথে যায়, তাতে দেশ অস্থিতিশীল হবে। সে ক্ষেত্রে তৃতীয় শক্তি সামনে চলে আসতে পারে। বিএনপি সেটাকে কীভাবে দেখছে?’-এ প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, বিএনপির আন্দোলন অন্য কোনো শক্তিকে সুযোগ দেওয়ার জন্য নয়। তৃতীয় শক্তি নয়, আমরা নিজেরাই ক্ষমতায় যেতে চাই। বিএনপির এমন কোনো অতীত রেকর্ড নেই। বরং এমন রেকর্ড আওয়ামী লীগের আছে। 

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, সরকার দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ-এ কথা আজ শুধু বিএনপির নয়, সরকারের শরিক দলগুলোর নেতাদেরও। জাতীয় সংসদে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, শিক্ষাক্ষেত্রে সুবাতাস টেকেনি। শিক্ষা খাত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এবারের প্রশ্নপত্র ফাঁসের মহামারি কেবল পরীক্ষার্থী নয়, অভিভাবকদের মনেও সরকার সম্পর্কে বিরূপ ধারণার জন্ম দিয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংক খাতের নৈরাজ্য চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। সরকারকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন জোগাতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত অর্থ পাচার হচ্ছে। এ পাচারকৃত অর্থে বাংলাদেশের কয়েকটি বাজেট হতে পারে।

মির্জা ফখরুল বলেন, শুধু সমাজকল্যাণমন্ত্রী নন, ব্যাংকের লুটপাট বন্ধ করতে না পারার জন্য অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ।

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!