• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যেভাবে ফিরলেন গুম হওয়া ব্যাংক কর্মকর্তা


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আগস্ট ২৯, ২০১৭, ০৮:২০ পিএম
যেভাবে ফিরলেন গুম হওয়া ব্যাংক কর্মকর্তা

ঢাকা: ব্যাংক কর্মকর্তা শামীমকে দুর্বৃত্তরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন গত ২৩ আগস্ট দুপুর বেলা। রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকার হোটেল খানা বাসমতির সামনে থেকে তাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যায়। অপহরণের পাঁচ দিন পর তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা।

সোমবার(২৮ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টার দিকে মতিঝিলের কোনো একটি জায়গায় তাকে ফেলে রেখে যায়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাদের মোবাইল ফোন দিয়ে নিজের স্ত্রী শিল্পি আহমেদকে ফোন করেন আইএফআইসি ব্যাংক কর্মকর্তা শামীম আহমেদ। স্ত্রীকে তার অবস্থানের কথা জানান। কণ্ঠ ও পরিচয় শুনে নিশ্চিত হয়ে পরিবারের লোকজন সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যায়।

রাতেই পল্টন থানায় শামীমের ঘরে ফেরার কথা জানিয়ে দেন স্ত্রী শিল্পি। নিখোঁজ হওয়ার পরে পরিবারের পক্ষ থেকে পল্টন থানায় এ ব্যাপারে একটি জিডি করা হয়েছিল। জিডি নং-১৭৩৫।

গত ২৩ আগস্ট দুপুর দেড়টার দিকে পুরানা পল্টনের ‘খানা বাসমতি’ রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে সাদা মাইক্রোবাসে করে তাকে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। নিখোঁজের পর বিকেলে থেকে তার ব্যবহৃত ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফিরে আসার পর কারা অপহরণ করেছিল, কেন করেছিল- এ বিষয়ে কিছু বলেননি শামীম। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেছেন কম। ফিরে আসার পর রাতের বেশিরভাগ সময় নামাজ পড়ে কাটিয়েছেন তিনি।

স্ত্রী শিল্পী আহমেদ বলেন, ‘আমাদেরকে তিনি বন্দি অবস্থা সম্পর্কে খুব বেশি কিছু বলেননি। তবে তাকে কোনও ধরনের নির্যাতন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন। তারা তাকে নিয়মিত খাবারও দিয়েছে। তার শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই।’

আইএফআইসি ব্যাংকের করপোরেট কমিউনিকেশনস ও ব্র্যান্ডিং বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট শামীম নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় থাকেন। ফিরে আসার পর থেকে তিনি ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় রয়েছেন।

যেভাবে অপহরণ হন

পুরানা পল্টনের ৬১নং হোল্ডিংয়ে আইএফআইসি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়। এর ঠিক ৪০/৫০ গজ পশ্চিমে অবস্থিত হোটেল ‘খানা বাসমতি’। ২৩ আগস্ট দুপুরে এই হোটেলের সামনে থেকে অপহৃত হন আইএফআইসি ব্যাংক কর্মকর্তা শামীম আহমেদ। অন্তত ৯জন অপহরণকারী এতে অংশ নেয়।

হোটেল কর্তৃপক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হোটেলের সামনে প্রায় ২ ঘন্টা ধরে কালো কাচের সাদা রংয়ের একটি মাইক্রোবাস দাঁড়ানো ছিল। দুপুর ১টা ১০ মিনিটের দিকে দুজন হোটেলে এসে নিচতলার মাঝামাঝি স্থানের দুটি টেবিল বুক করেন। এরপর পূর্বনির্ধারিত টেবিলে না বসে হোটেলে প্রবেশের পর প্রথম দুটি টেবিলে ৯জন বসে খাওয়া দাওয়া করেন। রেস্তোরাঁর ওয়েটার ময়নাল হোসেন জানান, খাওয়ার পর তারা তিন হাজার ৩৪০ টাকার বিল পরিশোধ করেন।

রেস্তোরাঁর সামনে থেকে শামীম আহমেদকে গাড়িতে তুলে নেওয়ার সময় সেখানে দায়িত্বে ছিলেন নিরাপত্তারক্ষী আহম্মদ আলী ও বাহাদুর। আহম্মদ আলী বলেন, ‘প্রায় দুই ঘণ্টা সাদা রঙের একটা মাইক্রোবাস হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। মাইক্রোর লোকজন হোটেলে খাওয়া দাওয়া করে। দুপুর দেড়টার কিছু পর হোটেলে দিকে আসার সময় একজনকে তারা জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। শুরুতে আমরা কাকে নিয়ে গেছে চিনতে পারিনি। পরে জানতে পেরেছি উনি আইএফআইসি ব্যাংকের কর্মকর্তা।’

অপহরণকারীরা যে দুই টেবিলে বসে দুপুরের খাবার খেয়েছিল তার উপরে দুই পাশে দুটি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। এই দুটি ক্যামেরাসহ হোটেলের ভেতরে মোট আটটি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। অপহরণকারীদের স্পষ্ট ছবি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে রয়েছে বলে জানান রেস্তোরাঁর কর্মচারীরা।

পরিকল্পিতভাবে অপহরণ, কোনও নির্যাতন না করা, পরিবারের কাছে মুক্তিপণ বা অন্য কিছু চেয়ে যোগাযোগ না করা, অবশেষে পাঁচদিন পর চোখ বেঁধে ফেলে যাওয়া– এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জিডির তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার এসআই সাইদুল ইসলাম।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আতা

Wordbridge School
Link copied!