• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যেভাবে বলেছিলেন সেভাবেই চলে গেলেন ওম পুরী


বিনোদন ডেস্ক জানুয়ারি ৬, ২০১৭, ০৬:৪৮ পিএম
যেভাবে বলেছিলেন সেভাবেই চলে গেলেন ওম পুরী

ঢাকা: পদ্মশ্রী পুরষ্কারে ভূষিত ভারতের প্রখ্যাত অভিনেতা ওম পুরী তার মৃত্যুর অনেক আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। যেভাবে মৃত্যুর কথা বলেছিলেন ঠিক সেভাবেই মারা গেলেন। শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) মুম্বাইয়ের বাসভবনে হার্ট অ্যাটাকের পর তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।

ওম পুরী তার নিজের মৃত্যু সম্পর্কে ২০১৫ সালে বলেছিলেন। ওই বছরের মার্চে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, ঘুমের মধ্যেই হয়তো মৃত্যু আসবে তার। তিনি বিবিসিকে বলেছিলেন, ‘মৃত্যুটা তো বুঝতেই পারে না কেউ। ঘুমের মধ্যেই হয়তো চলে যাব। আপনারা হয়তো জানতে পারবেন সকাল সাতটা বাইশ মিনিটে ওম পুরী মারা গেছেন।’ এভাবে নিজের মৃত্যু সম্পর্কে কথাগুলো বলেই হেসে ফেলেছিলেন ওম পুরী। ঘটনাচক্রে শুক্রবার তার মৃত্যু অনেকটা সেভাবেই হয়েছে।

ওম পুরীর কথায়, ‘মৃত্যুর ভয় নেই। অসুস্থ হয়ে পড়াটা আরও ভয়ের। যখন দেখি মানুষ অসুস্থ হয়ে গিয়ে চলাফেরা করতে পারে না, অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে - আমার সেটাতেই বড় ভয়।’

মূলধারার বলিউড সিনেমার পাশাপাশি পাকিস্তানি, ব্রিটিশ এবং হলিউডের চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

হরিয়ানার আম্বালায় এক হিন্দু-পাঞ্জাবি পরিবারে ১৯৫০ সালের ১৮ অক্টোবর জন্ম হয় ওম পুরীর। তার বাবা ভারতীয় রেল আর তার আগে সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন। হিন্দি ছাড়াও অনেক ভারতীয় ভাষা এবং ব্রিটিশ ও হলিউডি ছবির সঙ্গে পাকিস্তানের ছবিতেও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে চার দশক ধরে অভিনয় করেছিলেন শক্তিমান এই অভিনেতা। 

দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা আর তার পরে পুণের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট থেকে পাস করেন ওম পুরী। দিল্লির এনএসডি-তে আরেক বিখ্যাত অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ ছিলেন ওম পুরীর সহপাঠী। সেই সময়ে খুব কম অভিনেতারই নাট্য-অভিনয়ের প্রথাগত শিক্ষা বা ডিগ্রি ছিল।

১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন ওম পুরী। ‘ঘাঁসিরাম কোতোয়াল’ নামের মারাঠি ভাষায় তৈরি ছবিটি-ই তার অভিনয় করা প্রথম চলচ্চিত্র। তার পরের চল্লিশ বছরে ‘অর্ধ-সত্য’, ‘সদগতি’, ‘আস্থা’, ‘আক্রোশ’, ‘মির্চ মসালা’, ‘জেনেসিস’ বা ‘ধারাভী’র মতো সমান্তরাল ছবিতে যেমন অভিনয় করেছেন, তেমনই বহু হিট বলিউডি বাণিজ্যিক ছবিতেও একই রকম স্বচ্ছন্দ ছিলেন তিনি।

‘ডিস্কো ড্যান্সার’ থেকে শুরু করে ‘চাচী ৪২০’, ‘চায়না গেট’, ‘হেরাফেরি’, ‘মালামাল উইকলি’, ‘রং দে বাসান্তি’, ‘দাবাং’- এর মতো জনপ্রিয় ছবিতেও তাকে দেখা গেছে নানা ধরণের চরিত্রে। বিভিন্ন রকম চরিত্রে স্বচ্ছন্দ অভিনয় দক্ষতা আর গুরুগম্ভীর কণ্ঠস্বর - এই দুটোই ছিল ওম পুরীর মূল সম্পদ।

সেজন্যই গোটা মুখে বসন্তের দাগ থাকা সত্ত্বেও তাকে সত্যজিৎ রায়, গোবিন্দ নিহালনী, শ্যাম বেনেগাল, মৃণাল সেন, গৌতম ঘোষরা যেমন নিজের ছবির জন্য ডেকেছেন, তেমনই ডেকে নিয়েছেন ‘গান্ধী’ ছবির জন্য রিচার্ড অ্যাটেনবরো বা ‘সিটি অফ জয়ে’র পরিচালক রোল্যান্ড জফ।

রাজকুমার সন্তোষী, কমল হাসান, সুভাষ ঘাই বা প্রিয়দর্শনের মতো জনপ্রিয় হিন্দি ছবির পরিচালকরাও তাকে রেখেছেন নিজেদের হিট ছবিগুলোতে। আবার ‘ওয়েস্ট ইজ ওয়েস্ট’ বা ‘ইস্ট ইজ ইস্ট’-এর মতো আন্তর্জাতিক ছবিতেও কাজ করেছেন ওম পুরী। বিবিসি’র টেলিভিশন নাটক ‘দ্য ক্যান্টারবেরি টেলস’-এ-ও অভিনয় করেছিলেন তিনি।

১৯৯৩ সালে নন্দিতা পুরিকে বিয়ে করেন ওম। ২০১৩ সালে বিচ্ছেদ হয়। ইহসান নামে তাদের একটি ছেলে রয়েছে। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে অন্তত ১০টি পুরস্কার জিতেছেন; যার মধ্যে সেরা অভিনেতার পুরস্কারও। সূত্র: বিবিসি।

চলে গেলেন জনপ্রিয় অভিনেতা ওম পুরি

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!