• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যেসব পণ্যের দাম কমবে-বাড়বে


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ২, ২০১৬, ১১:৪৫ পিএম
যেসব পণ্যের দাম কমবে-বাড়বে

আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে শুল্ককর পুনর্বিন্যাসের প্রভাবে বেশ কিছু পণ্যের দাম বাড়তে বা কমতে পারে। এসব পণ্যের স্থানীয় পর্যায়ে ও আমদানিতে শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক ও রেগুলেটরি ডিউটি হ্রাস-বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তার প্রস্তাবে অনেক পণ্য ও সেবা খাতে অব্যাহতি সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে বেশকিছু পণ্যের দাম বাড়বে। আবার অনেক পণ্য থেকে শুল্ক কমানো বা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব পণ্যের দাম কমতে পারে।

যেসব পণ্যের দাম বাড়বে : প্রস্তাবিত বাজেটে তৈরি পণ্যের আমদানি ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সিগারেট, ওয়াশিং মেশিন, চা পাতা ইত্যাদি।
সিগারেট: এবারের বাজেটে সিগারেটের মূল্যস্তর ও সম্পূরক শুল্ক হার বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া সিগারেট পেপার ও সিগারেট উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। এর ফলে আগামীতে সিগারেটের দাম বাড়তে পারে। সবচেয়ে বেশি দাম বাড়বে সস্তা দামের সিগারেটের। কারণ নিম্নস্তরের সিগারেটের মূল্যস্তর ও সম্পূরক শুল্ক সবচেয়ে বেশি বাড়ানো হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিম্নমানের ১০ শলাকার প্যাকেটের সর্বনিম্ন দাম ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৩ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন। একই সঙ্গে সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক হার ৪৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা এবং এর ঊর্ধ্বে যে দু’টি স্তরে সম্পূরক শুল্ক বিদ্যমান আছে সেটি ৬১ এবং ৬৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬২ ও ৬৪ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন তিনি।

বিড়ি-সিগারেটের মতোই আরেকটি ভয়াবহ পণ্য জর্দা ও গুল। জর্দা ও গুলের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে এ পণ্য দু’টির ওপর বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক হার ৬০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১০০ শতাংশে নির্ধারণের প্রস্তাব করেন তিনি। বর্তমানে ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকার বিড়ির বাজারজাত মূল্য হলো ৭ টাকা ৬ পয়সা আর ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকার বিড়ির প্রতি প্যাকেটের মূল্য হলো ৭ টাকা ৯৮ পয়সা। দুই ধরনের বিড়ির ক্ষেত্রে বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক হার যথাক্রমে ২৫ ও ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশে বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করেন তিনি। এছাড়া ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকার প্যাকেটের দাম হবে সাড়ে ১০ টাকা আর ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকার প্যাকেটের দাম হবে ১২ টাকা।

ওয়াশিং মেশিন: এ পণ্যটির আমদানি শুল্ক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। তাই বাজেটের পর পণ্যটির দাম বাড়তে পারে।

ট্রাভেল ব্যাগ: বিগত দিনে ট্রলি ব্যাগ, স্যুটকেস, ট্রাভেল ব্যাগ আমদানিতে সুনির্দিষ্ট এইচএস কোড ছিল না। এর ফলে এসব পণ্য আমদানিতে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী বাজেটে এসব পণ্যের এইচএস কোড (৮৩.০২) নির্ধারণ করে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।

চা: আমদানি করা চায়ের দাম বাড়তে পারে। আগামী বাজেটে প্রতি কেজি আমদানি করা চায়ের ট্যারিফ মূল্য ২ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে আমদানি করা চায়ের দাম বাড়তে পারে। যদিও চা উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

চাল: চাল আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এর ফলে আমদানি করা সব ধরনের চালসহ সুগন্ধিযুক্ত চালের দাম বাড়তে পারে। দেশীয় কৃষকদের সুরক্ষায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

বই: শিশুদের ছবির বই, ড্রয়িং বই আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। এছাড়া দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক আমদানিতে শুল্ক ১০ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এ কারণে বইয়ের দাম বাড়তে পারে।

মশা মারার ব্যাট: মশা ও পোকামাকড় মারার কাজে ব্যবহৃত ব্যাট আমদানিতে এইচএস কোড সৃষ্টি করে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এ কারণে পণ্যটির দাম বাড়তে পারে।

অপটিক ক্যাবল: দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার স্বার্থে ফাইবার অপটিক ক্যাবল আমদানির শুল্ক ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে পণ্যটির দাম বাড়তে পারে।

এছাড়া দাম বাড়তে পারে গাম রেজিন, ইউরিয়া রেজিন, ১০ থেকে ১২০ এমভিএ এবং ২০০০ ভিএ জেনারেটর, এলপিজি সিলিন্ডার, পার্টিক্যাল বোর্ড, এডহেসিভ টেপ, ফায়ারডোর, গ্রিজ, লুব্রিকেন্ট অয়েল ইত্যাদি।

যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে : বাজেটে শুল্কহার হ্রাস ও কর রেয়াতির প্রস্তাব করায় বেশ কিছু পণ্য ও যন্ত্রপাতির দাম কমতে পারে। দাম কমতে পারে মোটরসাইকেল উৎপাদনের যন্ত্রাংশ আমদানি, নির্মাণ খাতে বোলডার স্টোন, ক্রাসড স্টোন, বিলেট, অ্যাঙ্গেল, বিটুমিন কয়লা, ফ্লাই অ্যাশ ও লুব্রিকেন্ট ওয়েলের।

পেট্রোলিয়াম জেলি, প্যারাফিন ওয়াক্স, গ্লু, গাম রেজিন, পলিসল্ট, রিফ্যাক্টরি সিমেন্ট, ইউরিয়া রেজিন, অ্যাডহেসিভ টেপ, সিম ও স্মার্ট কার্ডের পিভিসি শিট ও এলপিজি সিলিন্ডারের দাম কমতে পারে।

ব্যয় কমতে পারে সাইবার সিকিউরিটি যন্ত্রাংশ, আনপ্রিন্টেড পিভিসি, বায়োগ্যাস ডাইজেস্টার, ফাইবার গ্লাস, ওষুধ শিল্পে ব্যবহৃত ফ্রিজ ও চিত্তবিনোদনের রাইডে।

কর রেয়াত সুবিধা দেওয়ায় দাম কমতে পারে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি, দরজা, প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং উপকরণের যন্ত্রপাতি, স্প্রিংকলার, ভিডিও কনফারেন্স ডিভাইস, এলসিডি ও এলইডি প্যানেল, এলইডি ল্যাম্প-বাল্ব-টিউব, জরুরি লাইট, কৃষি যন্ত্রাংশ তৈরিতে টিউব, পাইপ, স্ক্র, নাট-বল্টু, বল-বেয়ারিংসহ যন্ত্রাংশের পার্ট, কাঁচা রাবার, রাবার প্রসেস ওয়েল, সিকেডি মোটরসাইকেলের শুল্ক ও আমদানি করা পোল্ট্রির খাবারের।

এছাড়া স্যানিটারি ন্যাপকিন ও তৈরি পোশাক শিল্পের কাটিং টেবিলে মূলধনী যন্ত্রপাতির রেয়াতি সুবিধা প্রদানেরও প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

হাইব্রিড গাড়ি: বাজেটে হাইব্রিড গাড়ি আমদানির অনুমতি পাচ্ছে পুরনো গাড়ি আমদানিকারকরা। এর সঙ্গে হাইব্রিড গাড়ির সিসিস্ল্যাব ও সম্পূরক শুল্ক হার পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে। ফলে হাইব্রিড গাড়ির দাম কমতে পারে।

মোটরসাইকেল: আমদানি করা সংযোজিত (সিকেডি) মোটরসাইকেলের সম্পূরক শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হচ্ছে। এ কারণে আগামীতে মোটরসাইকেলের দাম কমতে পারে।

সিমেন্ট: সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল ফ্লাইঅ্যাশের শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। ফলে সিমেন্টের দাম কমতে পারে।

পাথর: নির্মাণ খাতকে সহায়তা দিতে বাজেটে বোল্ডার পাথর ও ভাঙা পাথর আমদানি শুল্ক কমানো হচ্ছে। এতে পাথরের দাম কমতে পারে।

ওয়াইফাই: সার্ভার র‌্যাক আমদানির শুল্ক ১০ থেকে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এছাড়া ওয়াইফাই, ওয়াইম্যাক্স, একসেস পয়েন্ট এবং ফায়ারওয়াল (সিকিউরিটি হার্ডওয়্যার) আমদানির শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এ কারণে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে।

পেট্রোলিয়াম জেলি: শীতকালে জনসাধারণের ত্বকের সুরক্ষায় ব্যবহৃত পেট্রোলিয়াম জেলির দাম কমতে পারে। কারণ পেট্রোলিয়াম জেলি তৈরির কাঁচামাল হোয়াইট পেট্রোলিয়াম জেলির আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে।

কয়লা: এনথ্রাসাইট ও বিটুমিনাস কয়লা দেশীয় অবকাঠামো নির্মাণের ভূমিকা রাখছে। তাই বাজেটে এ দুই প্রকারের কয়লার আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে।

অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র: অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের আমদানি শুল্ক কমানো হচ্ছে। তাই আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহৃত পণ্যের দাম কমতে পারে।

এছাড়া দাম কমতে পারে শিল্পে ব্যবহৃত ফ্রিজ, এলইডি বাল্ব, কর্নফ্লাওয়ার, শিশুখাদ্য সাগু, সয়াকেক ইত্যাদি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!