• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যৌনকর্মীদের রোজগারে ভাগ বসাবে ‘সেক্স রোবট’!


ফিচার ডেস্ক নভেম্বর ১৪, ২০১৬, ০৯:০৪ পিএম
যৌনকর্মীদের রোজগারে ভাগ বসাবে ‘সেক্স রোবট’!

রোবটের সাথে মানুষের প্রেম সে তো অবিশ্বাস্য! কিন্তু না, বিজ্ঞানের এই যুগে সেটাও সম্ভব হতে যাচ্ছে। শুধু প্রেম পর্যন্ত নয়; রোবটের সঙ্গে চাইলে যৌন সম্পর্কও করতে পারবে মানুষ। এমনই দেখা গেছে সম্প্রতি হলিউডের দুটি সিনেমায়। ‘হার (Her)’ এবং ‘এক্স মেশিনা’ নামের ছবি দুটিতে প্রেম হয়েছে মানুষে-রোবটে।

যৌন সম্পর্কেও জড়িয়েছে তারা। তবে এটিই প্রথম নয়, গ্রিক রূপকথায়ও আছে এমন কল্প কাহিনী। সেখানেও দেখা যায়, সাইপ্রাস দ্বীপের ভাস্কর পিগম্যালিয়ন তার নিজের তৈরি করা একটি মূর্তির প্রেমে পড়ে যায়। তবে এবার সিনেমার এসব কল্পকাহিনী আর রূপকথাই কি সত্য হতে চলেছে?

খুব শিগগিরই কি পাওয়া যাবে ভালোবাসার রোবটকে? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক মার্কিন বিশেষজ্ঞ ডেভিড লেভি তার ‘লাভ অ্যান্ড সেক্স উইদ রোবটস’ বইতে লিখেছেন ২০৫০ সালের মধ্যেই বিয়ে করার উপযোগী রোবট তৈরি করা সম্ভব হবে। তার কথার ওপর ভিত্তি করে বলা যেতে পারে, যৌনতা বিষয়ক নতুন একটি বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে আমরা।

তবে বাস্তবতা একটু ভিন্ন। ব্যাপারটিকে যতটা সহজ ভাবা হয়, আসলে ততটা সহজ নয়। এ বিষয়ে গবেষণা যতই এগোচ্ছে, বিষয়টি ততই জটিল হয়ে যাচ্ছে। একদিকে তাদের অনুভূতিশীল করা যেমন কঠিন গবেষণার বিষয়, অপরদিকে এ খাতে বিনিয়োগে জটিলতা দূর করা আরো কঠিন।

এর আগে বোঝা দরকার ‘সেক্স রোবট’ বলতে আসলে কী বোঝায়। সেক্স রোবট হচ্ছে এমন রোবট যার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব। এর ভেতর এমন ধরনের ডিভাইস স্থাপন করা আছে যার মাধ্যমে রোবটটি তার সঙ্গীর মধ্যে সত্যিকারের যৌন অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন সম্পর্ক বিষয়ক গবেষক শেলি রোনেন জানান, রোবটটি যাতে মানুষের মধ্যে যৌন অনুভূতিশীল সৃষ্টি করতে পারে তার জন্য অনেক কিছুই ইতিমধ্যে আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মাধ্যমে হয়তো তাদের সাথে যৌন সম্পর্কও স্থাপন করা যেতে পারে।

এসব আবিষ্কারের অনেক কিছুই সফলভাবে কাজ লাগানো গেছে আবার অনেক কিছুই যায়নি। ২০০৯ সালে ‘রিয়েল টাচ’ নামের একটি ডিভাইস বাজারে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। যন্ত্রটির মাধ্যমে মানুষের সংবেদনকে জাগিয়ে তোলা যায়। এটি এক ধরনের ভার্চুয়াল যন্ত্র হলেও এর মাধ্যমে মানুষ সত্যিকারের অনুভূতি পেতে পারে। তবে যন্ত্রটির বিরুদ্ধে স্বত্ব সম্পর্কিত এক মামলার কারণে ২০১৩ সালে এটি বাজার থেকে তুলে নেয়া হয়।

মানুষের যৌন অনুভূতি সম্পর্কিত এ ধরনের কিছু যন্ত্র আবিষ্কৃত হলেও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কোনো রোবট তৈরি সম্ভব হয়নি। মানুষের ধারণা, সেক্স রোবট হবে এমন এক ধরনের রোবট যা দেখতে হবে মানুষের মতো, থাকবে যৌন সক্ষমতা এবং চিন্তা করার মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এখন পর্যন্ত এ বাজারে ধরনের কিছু পুতুল পাওয়া যায়। এগুলো তৈরি করে ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক কোম্পানি অ্যাবাইস ক্রিয়েশনস। পুতুলগুলোকে বলা হয় ‘রিয়েল ডল’। মানুষের মতো করেই তৈরি করা হয়েছে রিয়েল ডলদের।

এসব পুতুলের জন্য আছে আলাদা চিকিৎসক। যাদের কাজ ক্ষতিগ্রস্ত পুতুল মেরামত করা। তবে এগুলো খুবই ব্যয়বহুল। একেকটির দাম পাঁচ থেকে ১০ হাজার ডলারের মতো। এরপরও এগুলো সেক্স রোবট নয়। অন্তত এখন পর্যন্ত তেমনটি হয়ে উঠতে পারেনি। একটি সেক্স রোবট এর ব্যবহারকারীর চোখ দেখেই বলে দিতে পারবে সে কী চায়। ব্যবহারকারীকে সর্বোচ্চ আনন্দ দেয়ার শিক্ষাও দেয়া হয় এ রোবটকে। এমনকি ব্যবহারকারীর সাথে কথাও বলতে পারবে তারা।

সেক্স রোবট বিষয়ক সংবাদ সংগ্রহকারী সাংবাদিক এভি ফ্লক্স জানান, এটি কোনো পুতুলও নয়, কোনো যন্ত্রও নয়। ন্যানোপ্রযুক্তিতে কাজ করবে এসব রোবট। অনুভূতির জন্য এর থাকবে এক ধরনের কৃত্রিম ত্বক এবং ভাষা বোঝার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এটি সন্তুষ্ট করতে পারবে ব্যবহারকারীকে।

বর্তমানে বাজারে বিদ্যমান রিয়েল ডলগুলোর ওজন ৪৭ কেজির মতো। তবে এরা নিজেরা নিজেদের ভারসাম্য রাখতে পারে না। সেক্স রোবটরা হবে এর ব্যতিক্রম। তারা নিজের ক্ষমতায় শুধু দাঁড়াতেই পারবে না, ঘুরে বেড়াতে পারবে চারপাশে। প্রয়োজন মতো ব্যবহার করতে পারবে নিজেদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ।

গত বছরের অক্টোবরে সিঙ্গাপুরের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সেক্স রোবটের জন্য কৃত্রিম এক ধরনের ত্বক তৈরি করেছেন তারা। তবে এগুলো সম্প্রসারণশীল নয়। তাছাড়া কত ডিগ্রি তাপমাত্রায় এগুলো ভালো থাকবে তাও জানায়নি তারা।

রোবটটি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এখন তারা কাজ করছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে। তবে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে মানবাধিকার কর্মীরা। এতে যৌনকর্মীদের আয় হারাতে হবে বলে আশঙ্কা তাদের। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইতিমধ্যে সেক্স রোবটের বিরুদ্ধে ‘দ্য ক্যাম্পেইন অ্যাগেইনস্ট সেক্স রোবট’ নামে একটি প্রচারণা অভিযান শুরু করেছে।

মানুষ তার যৌন চাহিদা পূরণের জন্য যায় যৌনকর্মীদের কাছে। যৌনতার বিনিময়ে উপার্জন করে এ পেশায় নিয়োজিতরা। এ ধরনের রোবট যদি আবিষ্কৃত হয় তবে মানুষ আর যৌনকর্মীদের কাছে যাবে না বলে আশঙ্কা অ্যামনেস্টির। এতে তাদের আয় কমে যাবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

সোনালীনিউজ/ ঢাকা/ আরএস

Wordbridge School
Link copied!