• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যৌনতা সম্পর্কে প্রচলিত ৮টি ভুল ধারণা


লাইফস্টাইল ডেস্ক মে ২৭, ২০১৮, ০৭:৩৭ পিএম
যৌনতা সম্পর্কে প্রচলিত ৮টি ভুল ধারণা

ঢাকা: প্রতিদিনিই সেক্স থেরাপিস্টরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নিত্যনতুন সমস্যার কথা শোনেন। এসব সমস্যা মধ্যে বেশিরভাগই থাকে যৌন সম্পর্কিত ভুল ধ্যান-ধারণা। যৌনতা বিষয়ে তাদের এসব ধ্যান-ধারণা শুধু ভুলই নয়, বরং এসব চিন্তা-ভাবনা ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে সম্পর্কেও প্রভাব ফেলে।

অনেকে মনে করেন যৌনতা একটা স্বতঃস্ফুর্ত ব্যাপার। কিন্তু না, স্বতঃস্ফুর্ত যৌনতার জন্য একটা প্রেক্ষাপটের দরকার হয়, সম্পর্কে সময় দিতে হয়। সেক্স থেরাপিস্টরা যৌনতা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যেসব ভুল ধারণার কথা শোনেন–

১. পুরুষরা যেকোনো অবস্থায় যৌনতার জন্য প্রস্তুত
‘যদিও অনেকে এটা ভেবে থাকেন, কিন্তু আসল কথা হচ্ছে চাওয়ামাত্রই যৌনতার জন্য পুরুষরা সবসময় প্রস্তুত থাকেন না। তারা রোবট নয়। বললেই যৌন সম্পর্কে যাওয়া যায় না। সে ক্লান্ত বা বিরক্ত থাকতে পারে কিংবা তার মনে হয়তো যৌনতার ভাবনা নাও থাকতে পারে। একটু বয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গের উদ্দীপনার জন্য শুধু যৌন কার্যক্রমই যথেষ্ঠ নয়। যৌনতা শুধু একজনের ব্যাপার নয়, এটা দুজনেরই যৌথ উত্তেজনা ও অনুভবের ব্যাপার। আপনার সঙ্গীকে জিজ্ঞেস করুন–কোন জিনিসটা তাকে উত্তেজিত করতে সাহায্য করে, তারপর একজন সক্রিয় সঙ্গী হিসেবে সে কাজটি করুন।’

২. চরম অবস্থায় উপনীত না হলে সেটা ভালো যৌনতা নয়
‘অনেকেই মনে করেন চরম অবস্থায় উপনীত না হলে (অর্গাজম) সেটিকে ভালো যৌনতা বলা যাবে না। কিন্তু এটি সত্য ধারণা নয়। যৌনতায় অর্গাজমের বাইরেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে। আপনি যদি এই কথা বিশ্বাস করেন, তাহলে সত্যিকার যৌনতা কি, সেটি বুঝতে পারবেন। চুমু খাওয়া, জড়িয়ে ধরা, উত্তেজনাকর শারীরিক স্পর্শ, যৌথ হস্তমৈথুন, উত্তেজনাকর কথা বলা, উত্তেজনাকর কিছু পাঠ করা বা দেখাও কিন্তু যৌনতার অন্তর্ভুক্ত।’

৩. যৌনতা উপভোগে ‘শারীরিক গঠন’ জরুরি
‘অনেক নারী মনে করেন, আকর্ষণীয় শারীরিক গঠন না থাকলে পুরুষরা তাদের সঙ্গে যৌনতা সেভাবে উপভোগ করেন না। নারীদের এ ধারণার পেছনে মূলত মিডিয়া ও পর্নোগ্রাফি দায়ী। কিন্তু যৌনতার জন্য পুরুষরা সাধারণত নারীর শরীরের গঠনের দিকে সেভাবে খেয়াল করে না। আমি আমার এক নারী ক্লায়েন্টকে বলেছিলাম, ‘‘পুরুষরা শুধু দেখে, ওয়াও! একজন নগ্ন নারী আমার সান্নিধ্যে আছে’’। আমি আমার নারী গ্রাহকদের পরামর্শ দেই, ‘‘তুমি যদি নিজের শরীরটাকে ভালোবাসো, তাহলে তোমার পুরুষ সঙ্গীটিও সেটাই করবে।’’ নিজের শরীরের যে অনন্য দিকগুলো আছে, নিয়মিত সেগুলোর প্রশংসা করার চর্চা করতে হবে। তুমি যদি তোমার অনন্য ও আপাত ‘অযথার্থ’ দিকগুলোর প্রশংসা করা শুরু করো, তাহলে তুমি একটা সময় তোমার শরীরের প্রেমে পড়বে। এ অভ্যাস তোমাকে অন্যকেও একইভাবে ভালোবাসতে উৎসাহী করে তুলবে।’
–ডায়ানা উইলি, সেক্স থেরাপিস্ট, সিয়াটল, ওয়াশিংটন

৪. সম্পর্কে ঘাটতি যৌন প্রতারণার কারণ
‘চলতি সম্পর্ক থেকে কেউ যদি তার প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলাফল না পায়, তখন সে অন্য সম্পর্কে জড়ায় বা প্রতারণার আশ্রয় নেয়। যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রতারণার অনেকগুলো কারণের মধ্যে এটি মাত্র একটি কারণ। প্রাপ্যতা, সহজলভ্যতা, কম ঝুঁকির মতো বিষয়গুলোও কিন্তু এ ধরনের ‘‘সুযোগ সন্ধানী’’ যৌন সম্পর্কের দিকে কাউকে ধাবিত করতে পারে। এজন্যই সুপার মার্কেটগুলোতে মূল পণ্যগুলো সামনের সারিতে থাকে এবং ইমপালস আইটেমস বা ক্রেতার পরিকল্পনায় সাধারণত থাকে না, এমন পণ্যগুলো শেষ সারিতে রাখা হয়।’’

৫. ভ্যাজাইনাল অর্গাজম খুবই সহজ ব্যাপার
‘মানুষ এখনও বিশ্বাস করে ভ্যাজাইনাল অর্গাজম খুব সহজ ব্যাপার। কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে বেশিরভাগ নারীরই অর্গাজমের জন্য ক্লিটোরাল স্টিমুলেশনের প্রয়োজন হয়। আমার প্রচুর নারী ক্লায়েন্ট, যাদের মধ্যে কিছু চিকিৎসকও আছে, তারাও এটা জেনে অবাক হয়েছে। ভ্যাজাইনাল অর্গাজম নিয়ে এমন ধারণার কারণে অনেক যুগলের সম্পর্কে এর প্রভাব পড়েছে। এ ভুল ধারণার কারণে নারী সঙ্গীটি হতাশ হয়েছে, পুরুষ সঙ্গীটি নিজেকে অপর্যাপ্ত মনে করেছে। নারীর অর্গাজম নিয়ে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে।’

৬. প্রথম যৌনতা অসাধারণ হতে হবে
‘আমার অনেক নারী ক্লায়েন্টই মনে করেন প্রথমবার কারও সঙ্গে যৌন সম্পর্ক হলে সেটি হতে খুবই অসাধারণ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটা হতে পারে, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটা সাধারণ যৌন সম্পর্কের মতোই মনে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যৌন সম্পর্কের উন্নতি হয়। যৌন সম্পর্ক অসাধারণ হতে হলে দুজন দুজনকে খুব ভালোভাবে জানতে হবে, উভয়ের যৌন অভ্যাস সম্পর্কেই উভয়ের ভালো ধারণা থাকতে হবে। আপনি যদি একজনের সঙ্গে কখনও যৌনতায় লিপ্ত না হন, তাহলে আপনি তার অভ্যাস, ভালোলাগা-মন্দলাগা সম্পর্কে কীভাবে জানবেন? এসব ভালোভাবে না জানা থাকলে যৌন সম্পর্কটি পূর্ণ তৃপ্তিদায়ক নাও হতে পারে। আবার নতুন একজনের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে উভয়ই কিছুটা বিচলিত থাকতে পারে। প্রথমবার কারও সঙ্গে দেখা হলে নিজেকে প্রথমে জিজ্ঞেস করবেন, ‘‘তার সঙ্গে কি আমি আবারও দেখা করতে চাই?’’ যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, তাহলে সম্পর্কটি সামনে এগিয়ে নিতে পারেন। দুজন মানুষ যখন একটি সম্পর্কে সমান গুরুত্ব দেয়, তাহলে সেটি ভালো হতে বাধ্য।’

৭. লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করা মানে পর্যাপ্ত উত্তেজিত নয়
‘এটাও ভুল ধারণা। লুব্রিকেন্ট বা পিচ্ছিলকারক পদার্থ যৌনতার জন্য সহায়ক। সত্যি বলতে, হালকা লুব্রিকেন্ট ব্যবহার যৌনতার ব্যাপ্তি বাড়িয়ে দিতে পারে। অনেকের ভুল ধারণা আছে যে, নারী সঙ্গীটি যদি উত্তেজিত হয়, তাহলে তার যোনি এমনিতেই পিচ্ছিল হয়ে যাবে। কিন্তু মানসিক উত্তেজনা সবসময় শারীরিক উত্তেজনায় রুপ নেবে–এমন কোনো কথা নেই। এ ধরনের ক্ষেত্রে কিছুটা লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করলে যৌনতা আরও উপভোগ্য হবে।’
–মৌসুমী ঘোষ, ‘ক্লাসিক সেক্স পজিশন রিইনভেনটেড’ বইয়ের লেখক

৮. যৌন আকাঙ্খার অনৈক্য সম্পর্ক ভাঙার কারণ
‘যেসব যুগল বা দম্পতি আমার কাছে যৌন ইচ্ছার অমিল নিয়ে আসে, তাদের বেশির ভাগেরই একটা সমস্যা থাকে। সেটা হলো–একজন বেশি যৌনতা চায়, আরেকজন হয়তো অত বেশি যৌনতা পছন্দ করে না। এ ধরনের অমিলের ক্ষেত্রে অনেক যুগলই সমস্যার মুখোমুখি হয়। আমি এক দম্পতিকে চিনি যারা দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্ক আবদ্ধ কিন্তু তারাও এ সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। অর্থাৎ যৌন ইচ্ছার অমিল হলেই সম্পর্ক ব্যর্থ বা ভেঙে যাবে–একথা বলা যাবে না। আপনার যৌন আকাঙ্খা নিয়ে সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যদি উভয়ের যৌন আকাঙ্খায় তীব্র পার্থক্য থাকে, তাহলে একজন অভিজ্ঞ মনোবিদের পরামর্শ নিতে পারেন। তিনি কথা বলে উভয়ের জন্যই একটি মানানসই উপায় বের করতে পারবেন।’

সূত্র: হাফিংটন পোস্ট

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!