• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রংপুরে রমজানের শুরুতেই ঊর্ধ্বমুখী বাজার


রংপুর ব্যুরো মে ১৮, ২০১৮, ০৫:১৮ পিএম
রংপুরে রমজানের শুরুতেই ঊর্ধ্বমুখী বাজার

রংপুর : পবিত্র মাহে রমজানের পহেলা দিন থেকেই দাম বাড়তে শুরু করেছে প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্যের। রমজানকে ঘিরে সাধারণ মানুষের খরচ বেড়ে যাওয়ায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখীতে বেসামাল রংপুরের বাজার পরিস্থিতি। এ নিয়ে প্রতিবছর সরকারের বিভিন্ন বিভাগের পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা বাজার পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তব চিত্র একেবারই উল্টো। এ কারণে পুরো রমজান মাস জুড়ে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত অভিযানসহ শক্ত মনিটরিংয়ের দাবি করেছেন ভোক্তারা।

রমজান শুরুর আগের দিন বৃহস্পতিবার রংপুর মহানগরীর বেশ কিছু হোটেল, রেস্তোরাঁ, ফলের দোকান ও সিটি বাজারে অভিযান চালানো হয়। এতে জরিমানা গুনতে হয়েছে কিছু প্রতিষ্ঠানকেও। ভেজাল বিরোধি এই অভিযানের প্রভাব পড়েনি রমজানের প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে।

রংপুর মহানগরীর সিটি বাজার, শাপলা চত্ত্বর খাঁন বহুমুখী মার্কেট, এরশাদ মোড় বাজার, কামাল কাছনা বাজার, ধাপ সিটি বাজারসহ বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজারে সরেজমিনে দেখা গেছে রমজান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে দাম বেড়েছে অনেক কিছুর। এ পরিস্থিতিতে ভোক্তারা বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসনের নিয়মিত অভিযানসহ বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন।

ভোক্তারা বলেছেন, বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকার পেছনে বড় কারণ কতিপয় ব্যবসায়ীর অতি মুনাফার লোভ। এর বাইরে রয়েছে সিন্ডিকেট ও কারসাজি করে দাম বাড়ানোর প্রবণতা। এগুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জানা থাকলেও তারা ব্যবস্থা নিতে প্রতিবছরই ব্যর্থ হয়ে আসছেন। এই ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর দায়িত্বশীলতা এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তরের রংপুর ব্যুরো শাহ বায়েজিদ আহমেদ বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে মনিটরিং। এজন্য যেটা করতে হবে-তা হলো বাজারে বাজারে ইন্টেলিজেন্স টিম পাঠানো। থাকতে হবে অস্থায়ী ক্যাম্প, যেন ভোক্তারা যে কোনো অভিযোগ জানাতে পারেন।

সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠন ‘বাংলার চোখ’ এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তানবীর হোসেন আশরাফী বলেন, ‘সরকারের সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) প্রতিবছর খোলা বাজারে যা বিক্রি করে, তা পর্যাপ্ত নয়। তাদেরকে আরো মজুদ বাড়াতে হবে। সংকট সৃষ্টির আগেই চাহিদানুযায়ী বাজারে খাদ্যপণ্য পাঠিয়ে দিতে হবে। শুধু তাই নয়, টিসিবি’র খাদ্য ঠিকমতো বাজারে সাধারণ ভোক্তাদের নাগালে পৌঁছাতে মনিটরিংও ব্যবস্থা থাকবে হবে। এ সময় তিনি রংপুরের ব্যবসায়ীদেরকে বাজার পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে রাখার আহ্বান জানান।

নগরীর শাপলা চত্বরে কথা হয় পান দোকানী তসলিম মিয়ার সঙ্গে। রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘রমজান আসার আগেই সব সময় ‘বাজার গরম’ হয়। এটা নতুন কোন ঘটনা নয়, কষ্ট শুরু গরিব মানুষেরই হয়। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় মুষ্টিমেয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেটের বেড়াজালে পণ্যের দাম হু হু করে বেড়ে চলেছে।’

খাঁন বহুমুখী কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা আনাম মিয়া বলেন, ‘আমরা তো দাম বাড়াই না। আমরা পাইকারদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনে বিক্রি করি। তাছাড়া রমজানে সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকে। তবে কিছু কাঁচামাল আছে-যা রমজান শুরুর আগেই বেড়ে যায়। সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে পারলে আশা করি রমজানের আগে ও পরে দাম একই থাকবে।’

তামপাট রঘুবাজার এলাকার পাইকারী সবজি বিক্রেতা আশরাফুল আলম নেতা বলেন, প্রতিবছরই রমজান শুরু হলেই চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ, বেগুন, রসুন, আদা, কাঁচা মরিচ, কাকরোল, পেঁপে, পটল, আলুসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের  মূল্য বৃদ্ধি ঘটে। তবে খুব বেশি দাম বাড়ে না বলে দাবি করেন তিনি।
 
ধাপ সিটি কাঁচাবাজার এলাকার বাসিন্দা জেরিন জান্নাত ও লিজা বলেন, ‘রমজানের আগে বাজারদর আর রমজান শুরুর পর থেকে বাজারদর এক রকম নেই। চিনি, ছোলা, ডাল, শসা ও বেসন, মাছ, মাংস, চালের দাম রমজানে কিছুটা বেড়েছে।’
সাবেক পৌর চেয়ারম্যান ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাজী মোঃ জুননুন বলেন, ‘প্রতি বছর মাহে রমজান শুরুর আগে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য বেশ কিছু ক্ষণস্থায়ী উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে বাজারে শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে না। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ নেয়ার জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।’

সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রতিটি বাজারের দোকানগুলোতেক যদি পণ্যের মূল্য তালিকা সরবরাহের ব্যবস্থা থাকতো, তবে মনিটরিং আরো সহজ হতো। কিন্তু আমাদের দেশে বাজার পরিস্থিতি বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওঠানামা করে। সকাল, বিকেল আর রাতের বাজার মূল্য এক রকম হয় না।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!