• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রক্তাক্ত ২১ আগস্ট: সেদিন যা ঘটেছিল


সোনালী বিশেষ আগস্ট ২০, ২০১৭, ০৮:০২ পিএম
রক্তাক্ত ২১ আগস্ট: সেদিন যা ঘটেছিল

ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে নারকীয় গ্রেনেড হামলা হয়েছে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। সেদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার ভাষণ শেষ হওয়ার পর মুহুর্মুহু গ্রেনেড বিস্ফোরণে শহীদ হন ২৪ নেতাকর্মী। অল্পের জন্য বেঁচে যান শেখ হাসিনা। 

২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। ভ্যাপসা গরমে অস্থির সবাই। ঠিক বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে হঠাৎ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল চারপাশ। শক্তিশালী ১৩টি গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটল পরপর। মুহূর্তেই রক্তস্রোতে ভেসে গেল রাজপথ। ছিন্ন ভিন্ন মানবদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ল সবখানে। ওই সময় সবার একটিই জিজ্ঞাসা ছিল, 'শেখ হাসিনা কোথায়? বেঁচে আছেন তো!' খানিক পরই যেন কানে এলো দৈববাণী, তিনি মৃত্যুর জাল ছিন্ন করে অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে গেছেন। কিন্তু স্পিল্গন্টারের আঘাতে তখন ঝরে পড়ল আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২২টি তাজা প্রাণ। 

বিভীষিকাময় ওই গ্রেনেড হামলার আগমুহূর্তে খোলা ট্রাকমঞ্চে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছিলেন শেখ হাসিনা। ভাষণ শেষে শান্তি মিছিলে নেতৃত্ব দেয়ার প্রস্তুতির সময় বিকট শব্দে একের পর এক বিস্ফোরিত হয় তাজা গ্রেনেড। শেখ হাসিনার বুলেটপ্রুফ গাড়ি লক্ষ্য করে ছুটে আসে ১২টি গুলি। এতে আওয়ামী লীগ অফিসের চারপাশে রক্তগঙ্গা বয়ে যায়। বীভৎস ওই গণহত্যার পরমুহূর্তে ঘটনাস্থলে হাত-পাসহ মানবদেহের বিভিন্ন অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। ফিনকি দিয়ে মানবদেহ থেকে তখনও বেরিয়ে আসছিল রক্তস্রোত। ট্রাকের চারপাশও ছিল জমাটবাঁধা রক্ত। চেয়ারের ওপর ছোপ ছোপ রক্ত। কমবেশি সবাই আহত হয়ে স্তূপাকারে মাটিতে পড়ে আছেন। শত শত মানুষ মরণ যন্ত্রণায় চিৎকার করছেন। 

চারদিকে ধ্বংসযজ্ঞ, আহাজারি। ছড়িয়ে আছে অসংখ্য জুতা-স্যান্ডেল, ব্যানার-ফেস্টুন। মুমূর্ষুদের আকুতি, কাতর গোঙানি, আর্তনাদের অবর্ণনীয় মর্মান্তিক দৃশ্য। আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার মতো অবস্থাও ছিল না। তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিতে না পারায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অনেকে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। 

আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। অনেকে প্রাণভয়ে দিগ্গি্বদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। প্রিয় মানুষের আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েন অনেকে। অঝোর ধারায় কেঁদেছেন অনেকে। আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায়নি। রিকশা-ভ্যানে ও ঠেলাগাড়িতে করে আহতদের নেওয়া হয় বিভিন্ন হাসপাতালে। আহতদের উদ্ধারে পুলিশের তৎপরতা ছিল না। উল্টো বেধড়ক লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়েছে। সেদিন হিংস্র শ্বাপদের ভয়ঙ্কর গ্রেনেড হামলার টার্গেট ছিলেন শেখ হাসিনা। আর জীবনবাজি রেখে মানববর্ম তৈরি করে তাকে বাঁচিয়েছেন প্রিয় সহকর্মী-সহমর্মিরা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/জেএ 

Wordbridge School
Link copied!