• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে রেসপন্স মেলে, কিন্তু নজরুলে শূন্য’


সুজিত মোস্তফা নভেম্বর ২৩, ২০১৬, ০৩:৪৭ পিএম
‘রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে রেসপন্স মেলে, কিন্তু নজরুলে শূন্য’

এই বছর গোড়ার দিকে আমি প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক, সুরকার মানাম আহমেদকে নিয়ে একটি নামকরা বেসরকারী ব্যাংকের এম.ডির সাথে দেখা করেছিলাম। আমাকে প্রখ্যাত নজরুল গবেষক এবং রেকর্ড সংগ্রাহক জনাব আসাদুল হক তাঁর ১৯৩২ সাল থেকে সংগৃহীত সকল ৭৮ আরপিএম এর রেকর্ড দিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন,‘তোমার নজরুল প্রীতি আমার কাছে অসাধারণ মনে হয়েছে। মনে হয়েছে তুমি খুব ভালবেসে এই রেকর্ডগুলো নিয়ে ইতিবাচক কিছু করবে।’

রেকর্ডের সংখ্যা ভালমন্দ, নজরুলসহ অন্যান্য মিলিয়ে প্রায় পৌনে দুই হাজার। আমি যথেষ্ট পরিশ্রম করে এগুলোর নতুন কাভার বানিয়ে, ক্যাটালগিং করে একটা প্রোপোজাল তৈরি করলাম। আমি জানি যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের চাহিদা ও রুচি পাল্টায়। তারপরও ঐতিহ্যানুগত কিছু বিষয় দীর্ঘদিন স্বমহিমায় টিকে থাকে। হয়তো টিকে থাকার জন্য বর্তমান সময়কে সে সুকৌশলে আপন মহিমা বিসর্জন না দিয়ে গ্রহণ করে। তাই নজরুলের গানের মত শক্তিশালী এবং জনপ্রিয় একটি বিষয় যখন অজনপ্রিয়তার দিকে ঝুঁকে পড়ে আমার কাছে মনে হয় আমার নিজের অস্তিত্বই যেন ধ্বংসের মুখে দাঁড়ালো।

আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে নজরুলের গান তার অবস্থান হারানোর অনেকগুলো কারণ আমার বিভিন্ন লেখায় বারংবার উল্লেখ করেছি। আমার কাছে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো থেকে উল্লেখ্য নেতিবাচক দিকগুলোর বিষয়ে নালিশ এবং সমালোচনা এসেছে। কিন্তু আমার পরামর্শগুলো সবসময়ই উপেক্ষিত হয়েছে। এখন কেউ যদি ক্ষমতায় থাকার কারণে মনে করেন তার সিদ্ধান্ত ও বিবেচনাই ঠিক আর কারো কথা শুনবার, জানবার বা ইমপ্লিমেন্ট করবার দরকার নেই তাহলে বলবো নজরুল নিয়ে আমাদের ভালবাসায় এবং আন্তরিকতায় খাদ আছে।

আমি যে প্ল্যানটি ঐ ব্যাংককে দিয়েছিলাম সেটা ছিল আদি সুরের গানগুলোকে ইষ্ট ওয়েষ্ট ফিউশন করে প্রকৃত গুণী শিল্পীদের দিয়ে বের করে ব্যাপক প্রচার ও প্রচারণা বিষয়ক।

দুঃখের বিষয় নজরুল অজনপ্রিয় বলে এই প্রোপোজাল কোন গুরুত্ব পায়নি। আমরা যে নজরুলের গানকে আবার জনপ্রিয়তার জায়গাটিতে নিয়ে আসবার চেষ্টা করছি সেটিই তারা বুঝতে চাইলেন না। গত সপ্তাহে আর একটি বেসরকারী অত্যন্ত নামী ব্যাংকের একটি সেকশনের প্রধান আমার এক ভক্তকে আমি একটি নতুন ইনোভেটিভ প্রোপোজাল দিলাম। এটি সারাদেশ নিয়ে কাজ। খুব বেশি টাকার নয়। আমার ভক্ত যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে অত্যন্ত দুঃখের সাথে গতকাল জানালেন, তারা এর আগে রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুল নিয়ে দু’টো বড় কাজে হাত দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের কাজটায় ভালো রেসপন্স পাওয়া গিয়েছিল, নজরুলে একদম শূন্য। একারণেই তারা নজরুল নিয়ে আর কাজ করতে আগ্রহী না।

তাহলে আমরা কি করবো? কোথায়, কার কাছে যাবো? অবশ্যই যাবার জায়গা আছে। আগে আমাদের এক ছাদের নিচে আসতে হবে আপন আপন ইগো বিসর্জন দিয়ে। প্রকৃত মূল্যবান আইডিয়াগুলো গুরুত্ব দিয়ে শুনতে এবং বুঝতে হবে। আমরাতো দেখছি যুগ যুগ ধরে চলমান আইডিয়া গুলোর ফলাফল। সমস্যা হলো আমাদের কাছে ‘আমি’ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ভাই, ‘আমি’টাকে একটু ভুলুন না। নজরুলকে নিয়ে একটু আন্তরিক হোন না! সবার ভাবনা এবং বোঝার কিছু ফারাক থাকবেই। তারপরও বৃহত্তর স্বার্থে কোনো একটা কাজ এক হয়ে করবার জায়গা অবশ্যই আছে। আমি যদি আমার সকল মান অভিমান বিসর্জন দিয়ে আপনাদের সবাইকে ডাকতে পারি, আপনি আমায় না ডাকুন অন্তত সাড়াতো দিতে পারেন। আসুন না নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থকে ভুলে একটু নজরুল, দেশ এবং সংস্কৃতি নিয়ে ভাবি।

লেখক: বিশিষ্ট নজরুল সংগীতশিল্পী ও সংগঠক
সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিএল

Wordbridge School
Link copied!