• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রমজানে পণ্য মজুদে বাড়ছে আমদানি


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১৩, ২০১৭, ০৭:৪৮ পিএম
রমজানে পণ্য মজুদে বাড়ছে আমদানি

ঢাকা: আগামী মে মাসেই শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। এ উপলক্ষ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য চিনি, ছোলাসহ বিভিন্ন প্রকারের ডাল, তেল ও গমের আমদানি বেড়ে গেছে। ইতোমধ্যে আমদানি করা পণ্যও চলে এসেছে। বাকিগুলো রয়েছে প্রক্রিয়াধীন।

সূত্রমতে, রমজান মাসকে সামনে রেখে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে এলসি খোলার হারও গেছে বেড়ে। চলতি অর্থ-বছরের (২০১৬-১৭) গত সাত মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ পণ্য আমদানি হয়েছে। গেল অর্থ-বছরের একই সময়ের চেয়েও যা প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। এটাকে আমদানির ক্ষেত্রে উল্লম্ফন বলা হচ্ছে। যে কারণে বাণিজ্য ঘটতি কিছুটা বেড়েছে। আগামী রামজানকে উপলক্ষ্য করেই বেড়েছে পণ্য আমদানি। তবে বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে এক ব্যবসায়ী জানান, সামনের মে মাসে পবিত্র মাহে রমজান। এ উৎসবকে সামনে রেখে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য চিনি, ছোলা, বিভিন্ন প্রকারের ডাল, তেল ও গম বেশি আমদানি করতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি শিপমেন্টও চলে এসেছে। বাকিগুলোও প্রক্রিয়াধীন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থ-বছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে আমদানি হয়েছে ২ হাজার ৪৯০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য। যা গত অর্থ-বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি। অথচ সর্বশেষ জুলাই থেকে ডিসেম্বর এই ছয় মাসে আমদানি হয়েছিল ২ হাজার ৯২ কোটি ডলার। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে শুধু জানুয়ারি মাসেই আমদানি বেড়েছে ৩৯৮ কোটি ডলারের পণ্য।

তথ্যমতে, চিনি, খেজুর, তেল, গম, ছোলা, ডাল, দুগ্ধজাত খাবার ও শুকনো ফল আমদানি বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। চলতি অর্থ-বছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সামগ্রিক আমদানিতে এলসি খোলার হারও বেড়েছে ১২ শতাংশের বেশি। রমজানকে সামনে রেখে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে এলসি খোলার হারও বেড়েছে। যদিও একইসঙ্গে বেড়েছে পোশাক খাতে ব্যবহৃত সুতা, মূলধনী যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক দ্রব্য, ওষুধ ও সিমেন্টের কাঁচামাল, কয়লা এবং পুরনো জাহাজ আমদানি।

সাধারণত আমদানির জন্য এলসি খোলার পরে ৯০ দিনের মধ্যে পণ্য দেশে আসে। অনেক সময় বনিবনা না হলে ও সময় মোতাবেক পণ্য দিতে ব্যর্থ হলে এলসি বাতিলও হয়। পণ্য আমদানি মূল্য পরিশোধ হলে তাকে এলসি নিষ্পত্তি বলা হয়। এলসি নিষ্পত্তির হারও আগের অর্থ-বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সময়ের সঙ্গে পণ্যের চাহিদা যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে আমদানিও। আসছে পবিত্র রমজান মাস। এ সময়ে ভোগ্যপণ্যর চাহিদা থাকে বেশি। এ কারণে কিছু পণ্যর আমদানি বাড়বে। পোশাক খাতের এক ব্যবসায়ী জানান, রমজান শেষেই খুশির ঈদ। নতুন পোশাকের প্রয়োজন হয় তখন। কিন্তু এখন থেকেই তার প্রস্তুতি শুরু করতে হয় আমাদের। এজন্য পোশাক খাতের পণ্য আমদানি বেড়েছে এই সময়ে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, গত সাত মাসে তেল আমদানি হয়েছে ৯৩ কোটি ৮১ লাখ ডলারের বেশি অর্থের। গম আমদানির জন্য ৮৫ কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি অর্থের এলসি খুলেছেন আমদানিকারকরা। যা আগের বছরের তুলনায় ২৯ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি। বিভিন্ন ধরনের ডাল আমদানিতে এলসি খোলা হয়েছে ৩৭ কোটি ডলারের ৬০ লাখ ডলারের বেশি, যা আগের অর্থ-বছরের তুলনায় ৮৫ শতাংশ বেশি। চিনি আমদানিতে ৭১ শতাংশ বেশি এলসি খোলা হয়েছে। গত সাত মাসে চিনি আমদানির জন্য ব্যাংকগুলোতে ৫৪ কোটি ৩২ লাখ ডলারের বেশি অর্থের এলসি খোলা হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩২ কোটি ডলার। খেজুরসহ শুকনো ফল আমদানির জন্য ২০ কোটি ডলারের পণ্য এসেছে দেশে। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। দুগ্ধজাত খাবার আমদানিতে ১৭ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, যা আগের অর্থ-বছরের প্রথম সাত মাসের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বেশি।

অপরদিকে, শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্য আমদানিতে জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ২৪৩ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি। মূলধনি যন্ত্রপাতির এলসি বেড়েছে ১৩ শতাংশ। গত সাত মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ৩০১ কোটি ডলারের এলসি খুলেছেন উদ্যোক্তারা। এ ছাড়া সুতা আমদানিতে ৭ শতাংশ, ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে ২১ শতাংশ, কয়লা আমদানিতে ৫৮ শতাংশ এবং পুরনো জাহাজ আমদানিতে ১২ শতাংশ এলসি খোলা বেড়েছে।

বাংলাদেশের পণ্য আমদানি ব্যয় সব সময়ই রপ্তানির চেয়ে বেশি হয়। সাম্প্রতিক পণ্য আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চলতি অর্থ-বছরের প্রথম ছয় মাসে এ ঘাটতি অনেক বেড়েছে। গত অর্থ-বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়ে যাওয়ার হার ২৫ শতাংশ। বাণিজ্য ঘাটতির পাশাপাশি রেমিট্যান্স ব্যাপকহারে কমে গেছে। ফলে ব্যালেন্স অব পেমেন্ট কিছুটা ঘাটতিতে থাকলেও এখন উদ্বৃত্ত অবস্থায় রয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সময়ের সঙ্গে বাড়ছে দেশের অর্থনীতির আকার। এজন্য আমদানিও বাড়বে। কিন্তু এবার আমদানি একটু বেশি হচ্ছে মূলত কয়েকটি মেগা প্রজেক্ট যেমন, পদ্মা সেতু, বিদ্যুৎ প্রকল্প, ফ্লাইওভার নির্মাণ ও সমুদ্র বন্দর উন্নয়নে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বেশি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক আমদানি চিত্রে।

সোনালীনিউজ/আতা

Wordbridge School
Link copied!