• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রমজানে ভিন্নরূপে আসছে আ.লীগ-বিএনপি


বিশেষ প্রতিনিধি মে ২৭, ২০১৭, ০৭:০৪ পিএম
রমজানে ভিন্নরূপে আসছে আ.লীগ-বিএনপি

ঢাকা: রমজানে এবার নতুন রূপ নিয়ে হাজির হচ্ছে দেশের অন্যতম বৃহৎ দুই রাজনৈতিক দল। আগামী নির্বাচন ঘিরে মাঠ গরম করার ক্ষেত্রে রমজান মাসকে পুরোপুরিই কাজে লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দুই দলই। পুরো মাসজুড়ে দলগুলো ইফতারের টেবিলকেই তাদের রাজনীতির ময়দান বানিয়ে তুলবে। এই ইফতারকে কেন্দ্র করেই দেশের রাজনীতি উত্তাপও ছড়াবে।

তবে অন্যান্যবারের তুলনায় এবার ভিন্ন কৌশল নেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল বিএনপি। জাতীয় নির্বাচনের এখনও দেড় বছর বাকি থাকলেও ইতোমধ্যে যে নির্বাচনী ডামাডোল শুরু হয়েছে, তার ঢেউ গিয়ে লাগবে ইফতার পার্টিতে। 

যারা বছরের অন্যান্য সময়ে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারেন না, তারাও ইফতার পার্টিতে মিলিত হওয়ার সুযোগ পাবেন। অন্যদিকে আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনাটাও কেউ উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তাই এবার মাহে রমজানে বিশেষ উত্তাপ ছড়াবে ভোটের রাজনীতি।

উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে জনসমর্থন আদায়ে একেবারে ইউনিয়ন ও গ্রামপর্যায়ে ইফতার পার্টি দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে মাঠের রাজনীতির প্রধান বিরোধী দল হিসেবে এবার বিএনপির প্রস্তুতিটাও চোখে পড়ার মতো হবে। কিছু দিন থেকে দলটির মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর জোর চেষ্টায় সে বার্তা দিচ্ছে। বলা হচ্ছে, ডিসেম্বর নাগাদ তাদের রাজপথে নতুনরূপে দেখা যাবে। 

ওদিকে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও সরব। তিনশ’ আসনে একক প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে তারাও সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। স্বভাবতই বড় এ তিনটি দল রমজানজুড়ে ঘরোয়া রাজনীতিতে এবার বহুমাত্রিক কৌশলে বেশি সক্রিয় থাকবে। সবদিক বিশ্লেষণ করে এমনটিই মনে করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।

আওয়ামী লীগ মনে করছে, ২০১৮ সালের শেষে নির্বাচন হলেও গণসংযোগ বাড়ানো এবং জনগণের মন জয়ের জন্য এটা হতে পারে উৎকৃষ্ট পন্থা। পাশাপাশি ইফতার পার্টির মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জনগণকে জানানোরও বিশেষ সুযোগ। তাই এবার এ আয়োজন চলবে সাড়ম্বরে। নিজেরা ইফতার আয়োজনের পাশাপাশি অন্যের আয়োজিত ইফতারেও ব্যাপকভাবে অংশ নেবেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। প্রতিটি ইফতার পার্টিতে ঘুরেফিরে আসবে রাজনৈতিক আলোচনা। সেখানে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-দূরত্ব, ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকলে সেগুলো মিটিয়ে ফেলা হবে। আর ইফতারে আগত সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগও গড়ে উঠবে।

আওয়ামী লীগ আরো মনে করছে, ইফতারকে কেন্দ্র করেই জমে উঠবে তাদের নির্বাচনী প্রচারণা। স্ব স্ব এলাকার ইফতারে অংশ নিতে প্রতিটি নেতাকর্মী এলাকামুখী হবেন। ইফতারে আগত মানুষের সঙ্গে নেতাকর্মীদের দেখা-সাক্ষাৎ ও আলাপ-আলোচনা হবে। নেতাদের কাছে পেয়ে সাধারণ জনগণও তাদের সমস্যাসহ নানা বিষয় তুলে ধরবেন। এসব বিষয় মাথায় রেখে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের যতটা সম্ভব বেশি বেশি ইফতার পার্টিতে যোগ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা জানান।

অন্যদিকে হঠাৎ করেই বিএনপির মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর উজ্জীবিত ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে নিষ্ফল পুলিশি তল্লাশি অভিযানের পর নেতাকর্মীদের মধ্যে রাজপথে সক্রিয় হওয়ার মানসিক শক্তি বেড়ে গেছে। 

এতদিন নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের অসহায়ত্ব, নির্লিপ্ততার ভাব লক্ষ্য করা গেলেও হঠাৎ তারা যেন ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। নেতাকর্মীদের স্বস্তির কারণ হিসেবে অনেকেই মনে করছেন, ২০১৪ সালের মতো আর একতরফা নির্বাচন হবে না। ক্ষমতাসীনদের কথাতে সেই ইঙ্গিতই মিলছে।

একই সঙ্গে প্রভাবশালী প্রতিবেশী একটি দেশ আগামী নির্বাচনে কোনো ভূমিকা রাখবে না বলে আগেই তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। ফলে আগামী নির্বাচনে সব দলকে জনগণের সামনে কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে। যেখানে নকল করার কোনো সুযোগ থাকবে না। এ বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতার রাজনীতিতে নতুন এক মেরুকরণ ঘটতে পারে।

এবারের রমজানে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজ উদ্যোগে রাজধানীতে ৫টি ইফতারের আয়োজন করছেন। এর মধ্যে একটি ইফতার দলীয় নেতাদের সম্মানে আয়োজন করছেন তিনি। এর বাইরেও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর ইফতারেও অংশ নেবেন খালেদা জিয়া। এসব ইফতার অনুষ্ঠানে আগামী নির্বাচন, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারসহ নানা ইস্যুতে তিনি বক্তব্য রাখবেন।

এদিকে রোজার মাসে দল গোছাতেই সময় দেবেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সাধারণত এ মাসে ঢাকার বাইরে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেন না তিনি। রাজপথেও দলের কোনো কর্মসূচি থাকবে না। তাই রমজানজুড়ে ইফতার পার্টি ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করবে জাতীয় পার্টি এবং এর বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠন। পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে এরশাদ এগুলোতে উপস্থিত থাকবেন।

জাতীয় পার্টি সূত্র জানায়, প্রথম রোজায় গুলশানের ইমানুয়েল কনভেনশন সেন্টারে এতিম শিশুদের সঙ্গে ইফতার করবেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ৩ জুন কূটনীতিক, রাজনীতিকসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গুলশানের ওয়েস্টিনে ইফতার করবেন তিনি। বাকি প্রায় প্রতিদিনই দলীয় ইফতারে অংশ নেবেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। ২ জুন ঢাকা মহানগর উত্তরের ইফতার, ৬ জুন কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির ইফতার, ৭ জুন জোটের ইফতার- এরকম প্রায় প্রতিদিনই দল এবং অঙ্গসহযোগী সংগঠনের ইফতার পার্টিতে উপস্থিত থাকবেন এরশাদ।

আগামী নির্বাচনের কৌশলও ইফতার পার্টিগুলোর আলোচনায় স্থান পাবে। বিভিন্ন পেশার লোকজনের কাছ থেকে আগামী নির্বাচনের বিষয়ে পরামর্শ নেয়া হবে। তাই ইফতার পার্টি হলেও সেখানে রাজনীতি, বিশেষ করে আগামী নির্বাচনের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!