• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রমজানের আগের জুমা আজ


ধর্ম ডেস্ক মে ২৬, ২০১৭, ১১:১৬ এএম
রমজানের আগের জুমা আজ

ঢাকা: মাগফেরাতের মাস রমজান। আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ এক নেয়ামত স্বরূপ বান্দার জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার এই মাহে রমজান। আর একদিন পরই শুরু হতে যাচ্ছে পবিত্র রমজান মাসের রোজা। এ মাসেই মানুষ রোজা পালন ও ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জনে মশগুল থাকবে।

মুসলিম উম্মাহ দৈনন্দিন জীবনের আত্মকেন্দ্রীক যাবতীয় গুণাবলী অর্জন ও আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করতে দিনের বেলায় মাসব্যাপী রমজানের রোজা পালন এবং রাতে নামাজ ও আল্লাহ স্মরণে নিয়োজিত থাকে।

মসজিদে জামাতের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করা এবং বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা ও নিজের আত্মার আকুতি দয়াময় প্রভুর দরবারে পেশ করাই যেন এ দিনে সব মুসলমানের পরম আগ্রহের বিষয়।

উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ উপহার হিসেবে বছর ঘুরে আসা মাহে রমজান আর তার সঙ্গে যুক্ত সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন ইয়াওমুল জুমা, আজকের দিনটি পেরিয়ে যাওয়ার পর এর সাক্ষাৎ অনেকের ভাগ্যেই হয়তো জুটবে না।

রোজা পালনের মাধ্যমে মানুষ শারীরিক ও আত্মিকভাবে পূতঃপবিত্র হয়ে ওঠে। তাই রমজানের আগেই মুসলিম উম্মাহকে চারিত্রিক ও নৈতিক উৎকর্ষ সাধনে প্রস্তুতি নেয়া জরুরি।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাস পাওয়ার আশায় দুই মাস আগে অর্থাৎ রজব মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন এবং এভাবে দোয়া করতেন যে, ‘হে আল্লাহ! আপনি রজব ও শাবান মাসে আমাদের বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে রমজানে পৌঁছে দিন।’

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণে শাবান মাসের বেশি বেশি রোজা রাখতেন। অন্যদেরকেও রোজা রেখে নিজেদের রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

রমজান মাস যেহেতু মুসলিম উম্মাহর জন্য রহমত বরকত এবং নাজাতের মাস। তাই রমাজনের আগেই দুনিয়ার যাবতীয় খারাবি থেকে নিজেকে তথা সমাজকে মুক্ত রাখা; রহমত বরকত মাগফেরাত ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা একান্ত জরুরি।

রমজানের প্রস্তুতিতে রোজার আগেই পেছনের কাজা নামাজ আদায় করে নেয়া। আগের ভাংতি রোজা থাকলে তা আদায় করে নেয়া এবং রমজানের ইবাদত-বন্দেগির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পরিবারের যাবতীয় কাজসমূহকে গুছিয়ে নেয়াও জরুরি।

যারা ব্যবসা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত রমজান মাসে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি না করে সবার জন্য সহনশীল হওয়াও জরুরি। কেননা অতিরিক্ত মুনাফা লাভের রমজানের দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি করা রোজাদারের হক নষ্ট করার শামিল।

যারা তারাবিহ নামাজ খতমে কুরআনের মাধ্যমে আদায় করবেন; তাদেরকেও রমজানের আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। যেহেতু রোজার পর পরই ঈদ; তাই রমজানের পূর্বেই ঈদের কেনা-কাটারে কাজ সম্পন্ন করা ফেলা উত্তম। ফলে রমজানের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কেনা-কাটায় সময় নষ্ট হবে না।

যারা ইজতেমায়িভাবে ইফতারের আয়োজন করবেন তারাও রমজানের আগেও বাজার সদাইয়ের কাজের ব্যাপারে প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলা উচিত। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, যখন রমজান সমাগত তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র রমজানের ইবাদত-বন্দেগির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণে কোমর বেঁধে লেগে যেতেন।

জুমার দিনের মাহাত্ম্য সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সূর্যোদয়ের মাধ্যমে যে দিনগুলো হয় তার মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো জুমার দিন। এ দিনে হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়েছিল, এ দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল এবং এ দিনেই তাকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছিল। আর এ দিনের মধ্যে এমন একটি সময় আছে, যখন কোনো মুসলমান নামাজরত অবস্থায় দোয়া করলে অবশ্যই তার দোয়া কবুল করা হয়। (সুনানে তিরমিজি : ৪৯১) রমজানের রোজা অবস্থায় জুমার দিনের নিশ্চিত দোয়া কবুলের শেষ সুযোগ হিসেবে জুমাতুল বিদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

করনীয় : জুমার দিনের কিছু সুন্নত আমল রয়েছে, যেমন-১. সাবান দিয়ে ভালো করে গোসল করতে হবে, ২. নতুন বা উত্তম পোশাক পরতে হবে, ৩. আতর তথা সুগন্ধি ব্যবহার করতে হবে, ৪. হেঁটে মসজিদে যেতে হবে, ৫. আগে আগে মসজিদে প্রবেশ করতে হবে, ৬. ইমামের কাছাকাছি জায়গায় বসতে হবে, ৭. ইমামের খুতবা মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে, ৮. বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ করতে হবে, ৯. কাউকে কষ্ট দেয়া যাবে না, কোনো অনর্থক কাজ করা যাবে না।

হজরত আওস ইবনে আওস আস-সাকাফি (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি জুমার দিনে ভালো করে গোসল করবে এবং আগে আগে হেঁটে মসজিদে যাবে এবং ইমামের কাছাকাছি বসে খুতবা মনোযোগ সহকারে শুনবে আর কোনোরকম অনর্থক কাজ করবে না, তাকে তার প্রতিটি কদমের বিনিময়ে লাগাতার এক বছর নামাজ ও রোজার সওয়াব দান করা হবে। (সুনানে ইবনে মাজা : ১০৮৭, সুনানে আবু দাউদ : ৩৪৫, আস্-সুনানুল কুবরা : ১৭০৩, সুনানে নাসাঈ : ১৩৮৪, মুসনাদে আহমাদ : ১৬১৭৬, সহিহ ইবনে হিব্বান : ২৭৮১)


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!