• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রসিক নির্বাচনে জয়ের অংক কষছে আ.লীগ


সোনালী বিশেষ ডিসেম্বর ৯, ২০১৭, ০৪:১৩ পিএম
রসিক নির্বাচনে জয়ের অংক কষছে আ.লীগ

ঢাকা : রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হারজিতের সম্ভাবনা ‘ফিফটি-ফিফটি’ ধরে নিলেও এখন জয়ের অংক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। লাঙ্গলের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত রংপুরে জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থী হোসেন মকবুল শাহরিয়ার মাঠে আসায় নৌকার প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু শিবির ও আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা জয়ের অংকই বেশি কষছে। দলীয় প্রার্থীর জয়ের ব্যাপারে এখন অনেকটাই আশাবাদী উঠেছে ক্ষমতাসীনরা।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, রংপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে এখন বেশ ‘সিরিয়াস’ আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা বলছেন, রংপুরে ভাসমান ভোটারের সংখ্যা প্রায় ২০ ভাগ।এগুলো নৌকার পক্ষে আনতে পারলে এবং রংপুর আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভেদ ভুলে সবাই ঝন্টুর পক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়লে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিজয় দুঃসাধ্য উঠবে না।

নীতি-নির্ধারকরা জানান, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেলের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ২৭ নেতার সমন্বয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গত সোমবার সন্ধ্যায় এই কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওইদিন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের এক বৈঠকে নেতাদের মধ্যে জয়ের কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

কমিটিভুক্ত কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, এই কমিটির সদস্যরা রংপুরে যাবেন এবং ভোটারদের সঙ্গে কথা বলবেন। তারা দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন ও অনৈক্য দূর করতে কাজ করবেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই কমিটির সদস্যদের নির্বাচন করেছেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ ও ড. আবদুর রাজ্জাক দুজনই বলেন, নৌকার প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর জয়ের অংক এখন তারা কষছেন। দুই নেতাই অভিন্নভাবে বলেন, দুই একদিনের চিত্র দেখে সেখানে এখন জয়ের ব্যাপারেই ভাবছে আওয়ামী লীগ। এই দুই নেতা আরও বলেন, রংপুরের জনগণ উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে নৌকার প্রার্থীকেই বিজয়ী করবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করছি।

আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলো স্বীকার করেছেন, রংপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঝন্টু ভোটের হিসাবে আগে থেকেই দুই নম্বর অবস্থানে রয়েছেন। এক নম্বরে জাতীয় পার্টি ও তিন নম্বরে রয়েছে বিএনপির প্রার্থী। এখন জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে নেমে আওয়ামী লীগকে ভোটের অংক কষতে বার্তা দিয়েছে।

আমাদের হিসাব মতে, জাতীয় পার্টিতে যেহেতু বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে এবং এই বিদ্রোহী প্রার্থী জাপার চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাতিজা, সে হিসেবে লাঙ্গলের অনেক ভোট বিদ্রোহী এই প্রার্থীর বাক্সে যাবে। সেই হিসেবে পিছিয়ে পড়বে জাপা মনোনীত মূল প্রার্থী। লাঙ্গলের ভোট কাটাকাটিতে স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে যাবে নৌকার প্রার্থী ঝন্টু। শেষ পর্যন্ত লাঙ্গলের প্রার্থী নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়ে গেলে নৌকার বিজয় সহজ উঠবে।

নীতি-নির্ধারকদের হিসাব মতে, রংপুরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নির্দিষ্ট ভোটগুলোর বাইরে নিরপেক্ষ ভোটগুলো ঝন্টু টানবেন। কারণ ঝন্টুর সঙ্গে জাতীয় পার্টির অংশের সখ্যতা আছে। এই হিসাবেও ঝন্টুকে এখন এগিয়ে রাখছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছে, তবে রংপুরে আওয়ামী লীগের ভেতরে অনৈক্য রয়েছে। ঝন্টুকে নৌকার প্রার্থী করায় সেই অনৈক্য আরও বেড়েছে। এই অনৈক্য এখন দূর করা হলো আওয়ামী লীগের বড় চ্যালেঞ্জ। অনৈক্য দূর করতে পারলে এবং নৌকার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ঝন্টুর পক্ষে ভোটযুদ্ধে নামানো সম্ভব হলে নৌকার বিজয় ঠেকানো সহজ হবে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীর বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, রংপুর সিটিতে জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থী থাকাতে আমাদের হিসাবে পরিবর্তন এসেছে। যেখানে জয়ের আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম সেখানে এখন জয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। দলের ঐক্য নিশ্চিত করতে পারলে আর জাপার বিদ্রোহী প্রার্থী শেষ পর্যন্ত নির্বাচনি মাঠে থাকলে ঝন্টুই জিতবে রংপুরে। এই নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত রংপুরে কাজ শুরু করবেন শিগগিরই। আমাদের লক্ষ্য থাকবে দলের ভেতরে থাকা অনৈক্য দূর করা এবং ঝন্টুর পক্ষে জোয়ার তৈরি করা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, রংপুরে লাঙ্গলের ঘাঁটি কথাটি এখন আর সত্যি নয়। লাঙ্গলের অবস্থান অনেক আগেই সেখানে নষ্ট গেছে। তিনি বলেন, রংপুরের জনগণ এখন উন্নয়ন-অগ্রগতি ও শান্তি চায়। তাই নৌকার প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুকে বিজয়ী করে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চায়। হানিফ বলেন, রংপুরের মানুষ জানে এরশাদ সাহেব আর কখনও রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে পারবেন না। সুতরাং লাঙ্গলের প্রার্থীকে বিজয়ী করে উন্নয়ন-অগ্রগতি ও শান্তির পথ তারা রুদ্ধ করতে চান না। তাই আমরা নৌকার প্রার্থীর জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রংপুরে ঝন্টুবিরোধী মনোভাব আওয়ামী লীগের ভেতরে রয়েছে। সেটা দলের জন্য অবশ্যই মাথাব্যথার কারণ। এই বিরোধ মেটাতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবো। তবে আশ্বস্ত হওয়ার বিষয় হচ্ছে, জাতীয় পার্টির অংশ ঝন্টুর সঙ্গে রয়েছে। এটা নির্বাচনে ঝন্টুকে বিজয়ের পথে এক ধাপ এগিয়ে দেবে বলে আমরা মনে করি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!