রহমতের শেষ দিন আজ

পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দশক রহমতের শেষ দিন আজ। আগামীকাল (শুক্রবার) থেকে শুরু হচ্ছে মাগফিরাতের দ্বিতীয় দশক। সর্বশেষ হচ্ছে নাজাতের (জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির) তৃতীয় দশক। রমজান মাসে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয় আর প্রতিটি ঈমানদার মুসলমানের একটি করে দোয়া কবুল করা হয়। এই মাসের প্রথম দশকে আল্লাহর রহমতের বারিধারা মুমিন বান্দার অন্তরকে সিক্ত করে। এর ফলে বৃদ্ধি পায় ঈমানের তেজদীপ্ততা। ধন্য হয় প্রতিটি মানুষ।

সূরা বনী ইসরাইলের ৩৬ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, নিশ্চয়ই কান, চোখ ও অন্তরকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। এই আয়াতে প্রথমে কান পরে চোখ এবং অন্তরের কথা বলা হয়েছে। এগুলোর দায়-দায়িত্বের বিষয়ে আল্লাহর কাছে জবাবদিহির কথাও বলা হয়েছে। তাই কানের রোজার গুরুত্ব অপরিসীম। কান যা শুনে সে জন্য তাকে আল্লাহর কাছে জবাবদিতে হবে। তাই কান দিয়ে ভালো জিনিস শুনতে হবে এবং খারাপ শ্রবন থেকে কানকে দূরে রাখতে হবে। কারণ কান একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কানের মাধ্যমে বাইরের উদ্দীপক ভেতরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে নবজাত শিশু প্রথমে কানে শোনে। চোখ থাকা সত্ত্বেও সে কিছু দেখতে পায় না। অবশ্য একটি নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম করার পর শিশুর চোখে দেখার কাজ শুরু হয়। পবিত্র কুরআনের উপরোক্ত আয়াতে চোখের আগে কানের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তায়ালা সম্ভবতঃ সৃষ্টির এই রহস্য ও কানের গুরুত্বের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। কাজেই কানের রোজাও অত্যন্ত গুরুত্ববহ। কানের রোজা হচ্ছে মন্দ ও অশ্লীল কথাবার্তা না শোনা, গান-বাজনাসহ নিষিদ্ধ কোন শব্দ যেন কানে প্রবেশ না করে সে জন্য চেষ্টা করা। পাপ ও গুণাহের কথা মানুষের অন্তরের ঘর, সদিচ্ছার প্রাসাদ ও জ্ঞানের বাগানকে ধ্বংস করে দেয়।

মহান আল্লাহ নেক বান্দাদের কানের একটি সৎ গুণ সম্পর্কে সুরা ফুরকানের ৭২ আয়াতে বলেছেন, তারা যখন পথ চলে ও অতিক্রম করে তখন ভদ্রভাবে অতিক্রম করে। অর্থাৎ তারা খারাপ কথা ও অশ্লীল বাক্য না শুনে ভদ্রভাবে চলে যায়। সূরা আল-কিসাসের ৫৫ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, তারা যখন বেহুদা কথা শোনে তখন তাঁরা তা এড়িয়ে যায়। ঈমানদার ও সৎ লোকদের সম্পর্কে আল্লাহ এই সার্টিফিকেট দিয়েছেন। অপর দিকে যারা পাপী ও গুনাহগার তারা মন্দ ও অশ্লীল কথা, গালি-গালাজ, গান-বাজনাসহ নিষিদ্ধ বিষয়গুলো শোনে এবং আল্লাহ প্রদত্ত শ্রবণশক্তিকে নষ্ট করে দেয়। এই প্রসঙ্গে সূরা আরাফের ১৭৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন, আমরা জাহান্নামের জন্য বহু জিন ও মানুষ তৈরি করেছি, যাদের অন্তর আছে কিন্তু উপলব্ধি না, চোখ আছে দেখে না এবং কান আছে শোনে না। তারা হচ্ছে উদাসীন।

আমি অবশ্যই বহু জিন ও মানুষকে দোযখের জন্য নির্ধারিত করেছি; কারণ তাদের অন্তর আছে, কিন্তু তারা সত্যকে উপলব্ধি করে না, তাদের চোখ থাকলেও তা দিয়ে তারা সত্যকে দেখে না, তাদের কান আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা সত্য বাণী শোনে না। ওরা পশুর মতো; বরং তার চেয়েও বেশি পথভ্রষ্ট; নিশ্চয়ই তারা উদাসীন।

এই আয়াতে কান, চোখ ও অন্তর নষ্ট হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সিয়াম সাধনা বা রোজার মাধ্যমেই কেবল এর পরিশুদ্ধি অর্জন করা যায়। একজন মুমিন মুসলমান রোজা রেখে পবিত্র কুরআনের বাণী শুনবেন এবং ঈমান, হেদায়াত ও কল্যাণের বাণী শিখবেন। কুরআন শুনলে অন্তর প্রশান্ত হয় এবং শয়তানের প্ররোচনা থেকে বাঁচা যায়। কানের খাদ্য হলো আল্লাহর জিকির, উপকারী জ্ঞানবাক্য, সুন্দর কথা। এসবের মাধ্যমেই কানের সঠিক রোজা রাখা যায়। আল্লাহ সকলকে তওফিক দিন। আমীন!

সোনালীনিউজ/ঢাকা