• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাখাইনে সন্তানদের সামনেই দলগত ধর্ষণ


নিউজ ডেস্ক সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭, ০১:০৯ পিএম
রাখাইনে সন্তানদের সামনেই দলগত ধর্ষণ

ঢাকা: মিয়ানমারের রাখাইন থেকে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের তাড়িয়ে দিতে ভয়াবহ সব পথ বেছে নিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। বাড়ি-ঘরে জ্বালাও-পোড়াও, নির্বিচারে গুলি চালিয়ে জবাই করে রোহিঙ্গাদের হত্যা, নারী-তরুণীদের দলগত ধর্ষণের মতো ভয়ঙ্কর উপায়ে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে।

জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত রাখাইন ছাড়া করতেই ভয়াবহ দলগত ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে মিয়ানমার সেনারা।

রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গা নারীরা তাদের অভিজ্ঞতার কথা বার্তাসংস্থা এএফপির কাছে তুলে ধরেন।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে দলগত ধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গা নারী শমিলা (ছদ্মনাম)। তিনি বলেছেন কীভাবে মিয়ানমার সেনারা তার বাড়িতে ঢুকে সন্তানদের সামনে তাকে দলগতভাবে ধর্ষণ করে। শমিলার জীবনের ভয়াবহ এ অভিজ্ঞতার মতো কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া আরও অনেক নারীর অভিজ্ঞতা একই রকমের।

জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তারা ধর্ষণ এবং দলগত ধর্ষণের শিকার অনেক রোহিঙ্গা নারীকে পেয়েছেন। যারা মিয়ানমারে সাম্প্রতিক জাতিগত সহিংসতা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ধর্ষণের শিকার প্রায় সব রোহিঙ্গা নারীই বলছেন, অপরাধীরা ইউনিফর্ম পরা ছিল। তাদের মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন নারীরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ধর্ষণের ঘটনা বিশাল আকারের অপরাধের সামান্য একটি অংশ। দলগত ধর্ষণের শিকার শমিলা বলেন, ধর্ষণের তিনদিন পরও তার রক্তপাত হয়েছে। তিনদিন হাঁটার পর বাংলাদেশে পৌঁছান তিনি।

‘তিনজন সেনা আমাকে ধর্ষণ করেছে’ শমিলা যখন এই কথা বলেন তখন তার চোখ পানিতে ভিজে আসছে। ‘তারা যখন চলে যায়, আমি দুই সন্তানকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ি। জীবন বাঁচানোর তাগিদে ছুটে চলা মানুষের সঙ্গে মিশে যাই।’

শিমলা যখন আক্রান্ত হন তখন তার স্বামী বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। তখন থেকে এখনো তার খোঁজ পাননি শিমলা। তিনি এখনো জানেন না তিন সন্তান কোথায় আছে; সেনারা যখন বাড়িতে আসে তখন বাচ্চারা বাইরে খেলাধুলা করছিল। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ।

কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া ২৫ বছর বয়সী শিমলার ভয়াবহ গল্পের মতো আরও অনেক নারী ও কিশোরী নিপীড়নের শিকারের কথা জানিয়েছেন। যার শুরু হয়েছে গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে তথাকথিত রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর।

যৌন সহিংসতাসহ মিয়ানমারের রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের তদন্ত করছে জাতিসংঘের একটি কমিটি। সংঘাতে যৌন সহিংসতাবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি প্রমীলা প্যাটেন (চলতি সপ্তাহ) বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে নিরাপত্তা অভিযান নিয়ে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেন, নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জীবিতদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করতে পরিকল্পিত অস্ত্র হিসেবে যৌন সহিংসতার ব্যবহার করা হচ্ছে।

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে কয়েক দশক ধরে নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে রোহিঙ্গারা; দীর্ঘসময় ধরে এ রোহিঙ্গাদের স্রোত অব্যাহত আছে বাংলাদেশের দিকে। মিয়ানমারে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে মনে করা হয় রোহিঙ্গা মুসলিমদের। সাম্প্রতিক সহিংসতায় প্রায় ৪ লাখ ২৯ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

বাংলাদেশে চিকিৎসকদের কাছে যাচ্ছেন রোহিঙ্গা নারীরা। এই নারীরা দলগত ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে জানাচ্ছে চিকিৎসকরাও। ধর্ষিত নারীদের সবার গল্প প্রায় একই রকম। তারা বলছেন, বাড়িতে যখন তাদের স্বামী অথবা পরিবারের পুরুষ সদস্যরা থাকেন না ঠিক সেই সময় আসে সেনাসদস্যরা এবং সন্তানদের সামনেই তাদেরকে দলগত ধর্ষণ করা হয়।

লেডা শরণার্থী শিবিরে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা পরিচালিত একটি ক্লিনিকে কাজ করেন নওরীন তাসনুপা। তিনি বলেন, জীবিতদের অধিকাংশ নারীকেই ধর্ষণের আগে মারপিট করা হয়।

নওরীন বলেন, তিনি অনেক নারীকে দেখেছেন যাদের শরীর থেতলে দেয়া হয়েছে। তাদের বুক এবং যৌনাঙ্গে কামড়ের চিহ্ন আছে। গত বছরের অক্টোবর থেকে রাখাইনে যখন সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে তখন থেকেই এধনের ঘটনা ঘটছে। তবে অনেক নারীই এখনো চিকিৎসার জন্য আসছেন না।

বার্তাসংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, এমনকি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও মানুষ এসব ঘটনা নিয়ে আলোচনা করতে চায় না। গত বছরের অক্টোবর থেকে আমরা এমন অভিযোগ পেয়েছি ঘটনা ঘটার তিন থেকে চার মাস পর।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, গত অক্টোবরে রোহিঙ্গাদের ওপর যৌন সহিংসতার যেসব ঘটনা ঘটেছে তা ছিল সমন্বিত এবং পরিকল্পিত।

বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেজ্ঞরা বলছেন, নতুন করে বাংলাদেশে পৌঁছানো রোহিঙ্গা নারীদের মধ্যে খুব অল্প সংখ্যকই বেঁচে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তারা বলছেন, গত ২৫ আগস্টের সহিংসতার পর যারা বাংলাদেশে পৌঁছেছেন; তাতে সঠিক পরিসংখ্যান জানা প্রায় অসম্ভব।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা সুরক্ষা কর্মকর্তা আইরিন লোরিয়া বলেন, এই মুহূর্তে এটি এক ধরনের বাঁচার লড়াই। এই সময় ধর্ষণের এসব ঘটনার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তিনি বলেন, আগে ধর্ষণকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো। জনসম্মুখে নারীদেরকে নগ্ন করে হাঁটানো হতো।

‘বর্তমানে এটি দেখে মনে হচ্ছে তাদের দ্রুত দেশছাড়া করতেই এ ধরনের শাস্তি দেয়া হচ্ছে।’ সূত্র : এএফপি।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!