• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানী ও নারায়ণগঞ্জে গ্যাস সঙ্কটে ভোগান্তি


নিউজ ডেস্ক মে ১৯, ২০১৮, ০৩:২৫ পিএম
রাজধানী ও নারায়ণগঞ্জে গ্যাস সঙ্কটে ভোগান্তি

ঢাকা : রমজানের আগে থেকেই রাজধানীর পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় গ্যাস সঙ্কটের অভিযোগ রয়েছে। রমজানের শুরুতে সে অভিযোগের ক্ষেত্র পুরান ঢাকার গণ্ডি পেরিয়ে রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় বিস্তৃত হয়েছে। প্রথম রোজার আগের দিন বৃহস্পতিবার (১৭ মে) সন্ধ্যা থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা দেয় চরম গ্যাস সঙ্কট। ফলে প্রথম রোজার সাহরির খাবার তৈরি করতে হয়েছে ভোর রাতে। এতে সাহরি খাওয়া নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে অনেককেই।

অন্যদিকে, পবিত্র রমজানের শুরুতেই গ্যাস সঙ্কট দেখা দিয়েছে বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর পুরান ঢাকার আজিমপুর, হাজারীবাগ, গণকটুলি, লালবাগ, সূত্রাপুর, বংশাল, গোপীবাগ, মানিকনগরসহ অধিকাংশ এলাকায় বিগত দু-তিন সপ্তাহ ধরে চলছে চরম গ্যাস সঙ্কট। এতে এসব এলাকার মানুষকে রান্নার কাজে পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে।

অভিযোগ রয়েছে, পুরান ঢাকার এসব এলাকায় সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বাসাবাড়িতে গ্যাস পাওয়া যায় না। ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত গ্যাস পাওয়া গেলেও তা মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে যায়। তবে এসব এলাকার বাসিন্দাদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় গত বৃহস্পতিবার রাতে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী তারাবি নামাজের সময় বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ রাখতে বন্ধ রাখা হয় সিএনজি স্টেশন। গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয় বাসাবাড়িতেও।

বংশাল মুকিমবাজার এলাকার গৃহিণী তাসলিমা সানু বলেন, আমাদের এলাকায় গ্যাস সঙ্কট গত দুই বছর ধরে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের বাড়ির পাশের এলাকা আমাদের। বহুবার অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, কাজ হচ্ছে না। গত দুই সপ্তাহ ধরে গ্যাসের সঙ্কট আরো বেশি। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে তিন ঘণ্টা গ্যাস পাওয়া গেছে। এই সময়ের মধ্যে অনেকেই সাহরির রান্না শেষ করতে পারেনি।

হাজারীবাগ গণকটুলি এলাকার বাসিন্দা হাসান শেখ জানান, গত দুই তিন সপ্তাহ ধরেই হাজারীবাগ, গণকটুলি, সিকশন ঢাল এলাকায় গ্যাসের সরবরাহ কম। দিনের বেশির ভাগ সময় জ্বলে না রান্নাঘরের চুলা। ভেবেছিলাম, রমজানে গ্যাসের সাপ্লাই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতেও গ্যাস ছিল না। সাহরির সময় গ্যাস পাওয়া যাবে কি না সেই সন্দেহ থেকে হোটেল থেকেই সাহরির খাবার কিনে এনেছি। গ্যাস না পাওয়ার আশঙ্কায় হোটেল থেকে সাহরির খাবার কিনে এনেছেন বলে জানান লালবাগ কেল্লার মোড়ের বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম খোকনও।

এদিকে, বৃহস্পতিবার (১৭ মে) রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার চানমিয়া হাউজিং, কাটাসুর, মোহাম্মাদিয়া হাউজিং লিমিটেড, হাউজিং সোসাইটি, বায়তুল আমান হাউজিং, আদাবর, শেখেরটেক, মনসুরাবাগ এলাকায়ও সন্ধ্যা থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত গ্যাস সঙ্কট ছিল।

মোহাম্মাদিয়া হাউজিং লিমিটেডের বাসিন্দা ইব্রাহিম কবীর জানান, প্রথম রমজান সাহরিতে যথাসময়ে ঘুম থেকে উঠতে পারবেন কি না সেই সন্দেহ থেকে রাতেই সাহরির খাবার তৈরি করতে চেয়েছিলেন তার স্ত্রী। কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই ওই এলাকায় গ্যাস না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। শেষ রাতে গ্যাস এলেও যথাসময়ে উঠতে না পেরে ঘরে থাকা ফল জাতীয় খাবার খেয়েই প্রথম রোজা পালন করতে হয়েছে ইব্রাহিম দম্পতিকে।

গ্যাস সঙ্কট বিষয়ে সরবরাহকারী সংস্থা তিতাস গ্যাসের কোম্পানি সচিব আবদুল হাকিম মুক্তা বলেন, রাজধানীতে বাসাবাড়ি, সিএনজি স্টেশন, হালকা-মাঝারি শিল্পে গ্যাসের মোট চাহিদার তুলনায় আমাদের প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কম সরবরাহ করা হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে বাসাবাড়ির ওপর।

এ ছাড়া রোজায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ রাখতে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো চালু রাখা হয়েছে। সেখানেও গ্যাসের বড় একটা চাহিদা তৈরি হয়েছে। ফলে আবাসিক পর্যায়ে গ্যাসের কিছুটা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি, ইফতারি ও সাহরির সময় গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে।

এদিকে, গ্যাস সঙ্কটে বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জে রোজার প্রথম দিন শুক্রবার (১৮ মে) দুপুরের পর থেকে গ্যাস সঙ্কটের কারণে ইফতারি তৈরিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বন্দরের বিভিন্ন এলাকার গৃহিণীরা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সাধারণত শীতকালে গ্যাসের সঙ্কট থাকলেও এবার গরমের দিনেও গত প্রায় এক মাস ধরে গ্যাস সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের আমলাপাড়া, গলাচিপা, দেওভোগ, পাইকপাড়া, বাবুরাইল, ভ‚ইয়াপাড়া, জল্লারপাড়, ডন চেম্বার, খানপুর এলাকায় গ্যাসের এ সঙ্কট চলছে। ডন চেম্বার এলাকার গৃহিণী হাবিবা আক্তার অনন্যা জানান, শুক্রবার থেকে রোজা শুরু হলেও তিন-চার দিন আগে থেকেই বাসায় গ্যাস একেবারেই থাকছে না। বৃহস্পতিবার রাতে সাহরির খাবার তৈরি করা যায়নি। রাত ১টার পর গ্যাস এসে ভোর ৬টার দিকে চলে যায়।

পরে শুক্রবার বেলা ৩টার দিকেও গ্যাস ছিল না। এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড ট্রান্সমিশন কোম্পানির নারায়ণগঞ্জ জোনের উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মুকবুল আহম্মেদ জানান, গ্যাসের কিছু লাইনে সংস্কার কাজ চলছে। আশা করা যাচ্ছে, এ মাসের মধ্যেই এ সঙ্কট দূর হবে।    

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!