• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানী ধুলামুক্ত করার কার্যক্রম উদ্বোধনেই শেষ!


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২০, ২০১৮, ০২:২৩ পিএম
রাজধানী ধুলামুক্ত করার কার্যক্রম উদ্বোধনেই শেষ!

ঢাকা : রাজধানীর রাস্তাগুলো ধুলামুক্ত করতে গত বছরের নভেম্বরে পানি ছিটানোর ৯ বিশেষ গাড়ি (স্পেশাল ওয়াটার বাউজার) উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. সাইদ খোকন। এসব গাড়ি চলতি বছর মে মাস পর্যন্ত ডিএসসিসির আওতাধীন রাস্তাগুলোয় দিনে দুইবার পানি ছিটানোর কথা। কিন্তু গাড়িগুলোর কার্যক্রম চোখে পড়েছে না বলে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

পরিবেশবিদদের কেউ কেউ বলছেন, রাজধানীর সড়কগুলোয় নিয়মিত পানি ছিটানো হলে বাতাসের ধুলাবালির পরিমাণ অনেক কমে যাওয়ার কথা। কিন্তু দিন দিন বাতাসের ক্ষতিকর উপাদানের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অবশ্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, পানি ছিটানো কার্যক্রম নিয়মিতই চলছে।

ডিএসসিসির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এবং দুপুর ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত নগরীকে ৫টি অঞ্চলে ভাগ করে রাস্তায় পানি ছিটানো হচ্ছে।

অঞ্চল-১-এর আওতায় বাংলামোটর থেকে শাহবাগ হয়ে শিক্ষাভবন, জিরোপয়েন্ট জিপিও হয়ে বঙ্গভবন। এরপর ধানমন্ডি ২৭ থেকে ল্যাবএইড হয়ে নীলক্ষেত পর্যন্ত। মগবাজার চৌরাস্তা ফ্লাইওভার থেকে কাকরাইল তথা হেয়ার রোড হয়ে মিন্টো রোড মোড় পর্যন্ত এবং শাহবাগ থেকে এলিফ্যান্ট রোড হয়ে সাইন্সল্যাব মোড় পর্যন্ত।

অঞ্চল-২-এর আওতায় মধুমিতা সিনেমা হল থেকে নটর ডেম কলেজ ও আইডিয়াল স্কুল হয়ে শাহজাহানপুর মোড় পর্যন্ত। খিলগাঁও ফ্লাইওভার থেকে ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা মোড়, বঙ্গভবন হয়ে শাপলা চত্বর।

অঞ্চল-৩-এর আওতায় নীলক্ষেত ইডেন কলেজের রাস্তা থেকে আজিমপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত উভয় পাশ, আজিমপুর চৌরাস্তা থেকে আজিমপুর কবরস্থান রোড, আজিমপুর চৌরাস্তা হয়ে এতিমখানা থেকে অঞ্চল-৩-এর কার্যালয় পর্যন্ত। পলাশী চৌরাস্তা থেকে লালবাগ ছাতা মসজিদ হয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের রাস্তা থেকে বকশিবাজার আলিয়া মাদরাসা হয়ে বদরুন্নেসা কলেজ পর্যন্ত।

অঞ্চল-৪-এর আওতায় গুলিস্তান থেকে নর্থ-সাউথ রোড হয়ে সদরঘাট, ইংলিশ রোড থেকে বাবুবাজার ব্রিজ হয়ে সাদেক হোসেন খোকা মাঠ। অঞ্চল-৫-এর আওতায় বঙ্গভবন থেকে ইত্তেফাক এবং র‌্যাব-৩-এর কার্যালয় হয়ে জয়কালী মন্দির, মানিকনগর থেকে গোলাপবাগ র‌্যাব-১০-এর কার্যালয় এবং যান্ত্রিক-২ হয়ে সায়দাবাদ ব্রিজ পর্যন্ত। যাত্রাবাড়ী থেকে রাজধানী মার্কেট রাস্তার উভয় পাশ। শহীদ ফারুক সড়ক, জুরাইন রেলগেট থেকে দয়াগঞ্জ মোড় এবং ধোলাইখাল হয়ে পোস্তগোলা পর্যন্ত।

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, হাজারীবাগ বাজার, জিগাতলা পোস্ট অফিস হয়ে ধানমন্ডি-২, সিটি কলেজ পর্যন্ত ডিএসসিসির অঞ্চল-১-এর তত্ত্বাবধানে দিনে দুইবার পানি ছিটানোর কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো ওয়াটার বাউজার দেখেনি এখানকার বাসিন্দারা।

ধানমন্ডির জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের সামনের চায়ের দোকানদার মো. শওকত আলী বলেন, জিগাতলার বাসস্ট্যান্ডের অধিকাংশ চায়ের দোকান দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। আমি সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এখানে দোকান করি। রাস্তা ঝাড়– দেওয়া ছাড়া পানি ছিটানোর কোনো গাড়ি কখনো দেখিনি। বরং এখানকার প্রত্যেক দোকানদার ধুলা কমাতে যার যার দোকানের সামনে নিজেরাই পানি ছিটাই।’

ল্যাবএইড হাসপাতালের বিপরীতে স্টেশনারি দোকানের মালিক মো. দেলোয়ার হোসেনও এ রকম তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সারা দিনে কখনোই এই রোডে পানি ছিটানো গাড়ি দেখি না।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-১-এর এই দুটো সড়কের মতো, অঞ্চল-৫-এর বঙ্গভবন থেকে ইত্তেফাক এবং র‌্যাব-৩-এর কার্যালয় হয়ে জয়কালী মন্দির, মানিকনগর থেকে গোলাপবাগ র‌্যাব-১০-এর কার্যালয় পর্যন্ত সড়কেও সারা দিনে পানি ছিটানোর কোনো গাড়ি দেখা যায় না বলে জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

ঢাকা সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-১-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, ‘অঞ্চল-১-এর কোনো সড়কে পানি ছিটানো হচ্ছে না, এমন তথ্য অফিশিয়ালি আমার কাছে নেই। আমি প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডের যেসব নথি ও তথ্য পাই, সে অনুযায়ী প্রত্যেকটা সড়কেই দিনে দুইবার করে পানি ছিটানো হচ্ছে।

ডিএসসিসির অঞ্চল-৫-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম মামুনুর রশীদ বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে আমাদের নির্ধারিত সড়কগুলোয় পানি ছিটানোর কাজ নিয়মিতই হচ্ছে। কিন্তু বেলা ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত যানজটের উপর নির্ভর করে দ্বিতীয় ধাপের পানি ছিটানো হচ্ছে।’

পরিবেশ ও নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবীব বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে রাজধানীর ধুলা-বালিমুক্ত রাখতে যদি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যক্রম থাকত তাহলে তার প্রভাবটা দেখা যেত। নভেম্বর মাসে ডিএসসিসি ওয়াটার বাউজার উদ্বোধন করেছে। কিন্তু পরিবেশ অধিদফতরের তথ্য বলছে, নভেম্বরের চেয়ে ডিসেম্বরে বাতাসের মান আরো খারাপ হয়েছে আর জানুয়ারিতে তা চরম পর্যায়ের খারাপে পৌঁছেছে।’

পরিবেশ অধিদফতরের আওতাধীন ‘টেকসই বায়ু ও নির্মল পরিবেশ (এসএএসই-কেইস)’ প্রকল্পের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গত বছর নভেম্বরের শুরু থেকেই রাজধানী ঢাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’ হতে শুরু করে, যা ডিসেম্বর মাসে ছিল ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ এবং চলতি জানুয়ারির শুরু থেকে তা ‘চরম অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ের বাতাসে পরিণত হয়েছে।

কেইস প্রকল্পের করা বায়ু মানের সূচক থেকে দেখা যায়, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়াটার বাউজার উদ্বোধনের দিন অর্থাৎ ৯ নভেম্বর ঢাকার বাতাসের একিউআই মাত্রা ছিল ১৮১ পিপিএম। ৩ ডিসেম্বর ছিল ২১৪ পিপিএম এবং ১৪ জানুয়ারিতে ঢাকার বাতাসের একিউআই মাত্রা ছিল ৩৬৬ পিপিএম।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!