• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীজুড়ে ‘সুন্দরীদের’ প্রেমের ফাঁদ!


সোনালী বিশেষ আগস্ট ১৮, ২০১৭, ০৩:৪৯ পিএম
রাজধানীজুড়ে ‘সুন্দরীদের’ প্রেমের ফাঁদ!

ঢাকা : দেখে বুঝার উপায় নেই, এরা বিশেষ একটি পেশার কাজ করেন! তাদের একমাত্র কাজ, পুরুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ। কাঙ্খিত সেই পুরুষকে নির্ধারিত জায়গায় ডেকে নিয়ে সর্বস্ব লুট। এরা পেশাদার সংঘবদ্ধ চক্র।

পোশাকে আভিজাত্যের ছাপ। দেখতেও সুন্দরী। শপিংমল, ব্যস্ততম সড়কের মোড়ে তাদের অবস্থান। দৃষ্টি এদিক-ওদিক। সুযোগ পেলেই ইশারায় কাছে ডাকে টার্গেট পুরুষদের। কথা বলে। সাহায্য চায়। কখনো সরাসরি প্রমোদের প্রস্তাব।

শুরুতেই জানিয়ে দেয়, ফ্ল্যাট বাসা আছে। ইচ্ছা হলে চলেন। দরদাম ঠিক করেই রিকশা বা সিএনজি অটোরিকশায় উঠার পরই ঘটে ঘটনা। কখনও কখনও বাসা পর্যন্ত পৌঁছার পর প্রকাশ হয় সুন্দরীদের প্রকৃত রূপ।

এ রকম একজন, দুজন না। কয়েক শ’ সুন্দরী ছড়িয়ে আছে ঢাকায়। তাদের মূল কাজ ছিনতাই। অস্ত্র ছাড়াই এই ভিন্ন কৌশলে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয় তারা। তাদের আশপাশে ছড়িয়ে থাকে সহযোগীরা। তারা সশস্ত্র।

তারাও ছিনতাইকারী। এমনকি তাদের সহযোগিতা করার জন্য নির্দিষ্ট সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশাচালক রয়েছে।  রয়েছে এক শ্রেণির পুলিশ সদস্যও। এছাড়াও রিকশা ও গাড়ি থেকে ফোন, ট্যাব, ব্যাগ টেনে নিয়ে যায় এই চক্র।  এমনকি গতিরোধ করে অস্ত্রের মুখে সর্বস্ব কেড়ে নেয়ার ঘটনা ঘটছে প্রায়ই।

রামপুরা বনশ্রীর বাসিন্দা ইয়াকুব আলী জানান, দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। রাত ৮টা। মৌচাক মার্কেট থেকে কেনাকাটা করে বাসায় ফিরবেন। রিকশা খুঁজছিলেন।  যাত্রীর তুলনায় রিকশার সংখ্যা কম।  ‘রামপুরা যাবেন’ বলতে বলতেই পেয়ে যান একটি রিকশা।  

উঠতেই একটি মেয়েলি কণ্ঠের অনুরোধ। ভাইয়া আমার বাসা ওদিকে। অনেকক্ষণ রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। কিছু মনে না করলে আমি কি আপনার সঙ্গে যেতে পারি। প্রবাস ফেরত ইয়াকুব আলী চিন্তা করছিলেন কি করবেন? এরই মধ্যে ত্রিশোর্ধ্ব ওই নারী রিকশায় চেপে বসেন।  নানা কথা বলে ইয়াকুবের পুরো পরিচয়, বাসার ঠিকানা জেনে নেন।

কেনাকাটা সম্পর্কে জানতে চাইলে ইয়াকুব বলেন, সময় কম তো তাই তেমন কেনাকাটা করতে পারিনি। রিকশা তখন রামপুরায়।  রিকশার গতি কমে যায়।  হঠাৎ ওই নারী বলে ‘তোর যা আছে সব দিয়ে নেমে যা।  নইলে চিৎকার করবো। তুই আমার রিকশায় জোর কইরা উঠছস। আমাকে আজে-বাজে কথা বলছস।’

হতভম্ব হয়ে যান ইয়াকুব। কিছু বুঝে উঠার আগেই রিকশার আশপাশে দাঁড়ায় কয়েক যুবক। ওই নারী বলে- ওরা আমার লোক।  চিৎকার করলে মারও খাবি টাকাও দিবি। বাধ্য হয়ে পকেটে থাকা সাত হাজার টাকা তুলে দেন।  এমনকি স্ত্রী ও বোনের জন্য কেনা দুটি শাড়িও।  একই রকম ঘটনার শিকার হয়েছেন সিরাজগঞ্জের বদিউল আলম।

ঘটনাটি ঘটেছে আগারগাঁও এলাকায়।  রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফার্মগেট এলাকায় এক নারীর সঙ্গে কথা হয় তার।  বদিউল মিরপুর-১১ গামী বাসের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন।  এর মধ্যেই ওই নারী তাকে ফুসলিয়ে তার বাসায় যেতে বলেন। অল্প টাকার বিনিময়ে তালতলার বাসায় সময় কাটানোর প্রস্তাবে রাজি হন বদিউল।

রিকশাযোগে আগারগাঁও এলাকায় পৌঁছার পর রিকশাচালক থেমে যায়।  জানায় রিকশার চেইন পড়ে গেছে।  ওই সময়ে কয়েক যুবক ঘেরাও করে মুহূর্তের মধ্যেই সবকিছু কেড়ে নেয়।  রিকশায় থাকা বোরকা পরা নারীটিও যোগ দেয় যুবকদের সঙ্গে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এই নারী সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দেয় কমলাপুর ও মুগদা এলাকার ছবি, আনোয়ারা, যাত্রাবাড়ী, ও সায়েদাবাদ এলাকায় পারুল ওরফে পারভীন, মায়া, লিজা, খালেদা, মিনু, জুরাইনের সালমা, হুমায়ুনের স্ত্রী সাথী, রুনা, বিজলি, মৌচাক, মালিবাগ, রামপুরা ও বাডডা এলাকায় হায়দারের স্ত্রী সাথী, রুমা, রত্না, লামিয়া, বিউটি, ফার্মগেটে ঝুমা, রিয়া।  এই নারী ছিনতাইকারীদের প্রতিটি গ্রুপে ১০ থেকে ১২ জন সদস্য রয়েছে।

তারা ফার্মগেট, মৌচাক, যাত্রাবাড়ী, মাজার সংলগ্ন গুলিস্তান, জুরাইন রেলগেট, গুলিস্তান হকার্স মার্কেট, গাউছিয়া, নিউমাকেট, নিলক্ষেত, খিলগাঁও তালতলা, সায়দাবাদ, ডেমরা স্টাফকোয়ার্টার মোড়, হাতিরঝিল, মিরপুরের সনি সিনেমা হল, মহাখালী মোড়, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড, গুলশান-১ এর মোড় এলাকায় প্রায়ই অভিনব কায়দায় ছিনতাই করে।

সেদিন মহাখালী এলাকায় ডাবের পানি পান করেছিলেন সিএনজিচালক রমজান মিয়া। তারপর শরীরটা খারাপ লাগছিলো। সিএনজি অটোরিকশায় উঠার পরই সংজ্ঞা হারান। যখন সংজ্ঞা ফিরে তখন দেখতে পান সহকর্মীরা তার মাথায় পানি ঢালছেন।

পকেটে থাকা মানিব্যাগটি নেই। এভাবে হাটে-ঘাটে, বাসে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। গোয়েন্দারা জানান, চক্রটি ডাবের পানি, খেজুর, চা, কফি ও তরল দ্রব্যের সঙ্গে চেতনানাশক ট্যাবলেট মিশিয়ে নিজেদের সঙ্গে রাখে।

তারা হকার ও যাত্রীবেশে বিভিন্ন গণপরিবহনে উঠে।  তাছাড়া বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনালসহ জন সমাগমস্থলে নিরীহ যাত্রী বা পথচারীদের টার্গেট করে। তার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে।

একপর্যায়ে চেতনানাশক ট্যাবলেট মিশ্রিত খাবার খাইয়ে ওই ব্যক্তিকে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নেয়। ঈদ, পূজা, রোজাসহ অন্যান্য উৎসবের সময় তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি পায়।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!