• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীমুখী মানুষের ঢল


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৬, ১০:২০ পিএম
রাজধানীমুখী মানুষের ঢল

গ্রামে ঈদুল আজহা উদযাপন শেষে রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধব আর আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ শেষে নাড়ির টানে বাড়ি যাওয়া কর্মজীবী মানুষরা এখন রাজধানীমুখী। তবে কমলাপুর রেলস্টেশনসহ বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের চাপ বাড়লেও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সে অনুপাতে এখনো ভিড় বাড়েনি।

ঈদের নির্ধারিত ছুটির বাইরে ১১ সেপ্টেম্বর সরকারি ছুটি ঘোষণা করায় এবার ঈদে ছয় দিনের টানা ছুটি মিলেছে। আনুষ্ঠানিক ছুটি শেষে বৃহস্পতিবার প্রথম কর্মদিবসেও ঢাকা ছিল ফাঁকা।

ওইদিন ঐচ্ছিক ছুটি কাটিয়ে সরকারি কর্মচারীদের অনেকেই পরিবার নিয়ে ঢাকা ফিরতে শুরু করেছেন শুক্রবার থেকে।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই সড়কপথে ফিরতি যাত্রার চাপ কিছুটা বেড়েছে। সায়েদাবাদ, কল্যাণপুর, গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালে গত দু’দিনের তুলনায় শুক্রবার বেশি বাস বিভিন্ন এলাকা থেকে যাত্রী নিয়ে এসেছে। তবে এখনও কোথায়ও যানজট সৃষ্টির মত পরিস্থিতি হয়নি।

বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম থেকে রওয়ানা হয়ে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী জয়নাল আবেদিন। তিনি জানান, রাত ১টার দিকে চট্টগ্রামের অলঙ্কার মোড় থেকে বাসে উঠে ভোর সাড়ে ৪টার মধ্যে ঢাকার পান্থপথে বাসায় পৌঁছে যান তিনি। জয়নাল বলেন, পথে কোনো যানজট ছিল না। প্রশস্ত রাস্তায় চলতে গিয়ে যাত্রাবিরতি ছাড়া কোথাও তেমন ব্রেক করতে হয়নি চালককে।

রায়হানুল ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ী জানান, রাস্তায় যানজটের আশঙ্কায় পরিবার বাড়িতে রেখে শুক্রবার ভোর চারটায় নিজের প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে রওনা দেন নওগাঁ থেকে। পথে কোনো ধরনের যানজট না থাকায় সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসায় পৌঁছে যান তিনি।

তবে ঈদ উদযাপনে নাড়ির টানে গ্রামের বাড়ি থেকে রাজধানী ঢাকায় আসতে শুরু করলেও রাজধানীর কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসতে কিছুটা সময় লাগবে বলে মনে করছেন রাজধানীবাসী। ঢাকার প্রধান সড়কগুলোতে এখনো মানুষ ও যানবাহনের চলাচল সীমিত। হোটেল, রেস্টুরেন্ট তেমন খোলেনি। অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ। মূলত জনবহুল রাজধানী এখনো অনেকটাই ফাঁকা।

এদিকে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঈদ উদযাপন শেষে রাজধানী ঢাকায় ফিরতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে ঢাকায় ফিরতে এ ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানী ফেরার দূরপাল্লার বাস বা ট্রেনের অগ্রিম টিকিট আগেই শেষ হয়ে গেছে। ফলে যারা টিকিট পাননি তারা বাধ্য হয়েই তুলনামূলক খারাপ বা লোকাল গাড়িতে রাজধানীতে ফিরছেন।

ট্রেনগুলোতে উপচেপড়া ভিড়ের মধ্যেই যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন। কমলাপুর রেল স্টেশনে শুক্রবার সকাল থেকেই ভিড় ছিল ঈদ শেষে রাজধানী ফেরত মানুষের। শুক্রবার সারাদিন ৬৯টি ট্রেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাত্রী নিয়ে কমলাপুর স্টেশনে আসে।  

কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ৬৯টি  ট্রেনের মধ্যে দু’একটি ছাড়া সবগুলো ট্রেন সময়মত এসেছে। শিডিউলের তেমন হেরফের হয়নি। এদিকে শিডিউল মতো  ট্রেন আসায় ঈদের আনন্দ শেষে বাড়ি  থেকে ফেরা মানুষের চোখে-মুখে ক্লান্তির একটা ছাপ থাকলেও বেশ স্বস্তি ছিলো মনে।

দুই ছেলে নিয়ে দিনাজপুরের বিরামপুর স্টেশন থেকে ঢাকায় ফিরেছেন রেহানা বেগম। বললেন, ঈদের আগে ঢাকা থেকে ট্রেনে যখন যান তখন ভিড় ছিলো বেশি। কিন্তু আসার পথে ভিড় কম। যথাসময়ে ট্রেন চলে আসায় কোন ভোগান্তি হয়নি বলে জানান তিনি।

এদিকে ঈদের ছুটি শেষে বাস টার্মিনাল ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে মানুষের ভিড় থাকলেও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সে অনুপাতে এখনো ভিড় বাড়েনি। তবে এখনো ঘরমুখো যাত্রীর ভিড় রয়েছে।

চাঁদপুর থেকে নৌপথে সদরঘাটে এসেছেন লাকী আক্তার। তিনি বলেন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গত বৃহস্পতিবার তার ছুটি শেষ হয়েছে। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় বৃহস্পতিবার না এসে শুক্রবার এসেছেন। শনিবার থেকে অফিস করতে হবে তাই শুক্রবারই ঢাকায় আসা।

নৌপথে আসতে কোনো ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতি ঈদের সময় লঞ্চ মালিকরা স্বীকার না করলেও ভাড়া বেশি নেয়া হয়। আর আমাদেরও নাড়ির টানে গ্রামের বাড়িতে যেতে হয়। তাই এটাকে এখন আর বিড়ম্বনা মনে হয় না। তবে একসময় অনেক দুর্ভোগে পড়তে হতো।  
 
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ যাত্রী সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, সাধারণত যে হারে নৌযানগুলো স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় সেভাবেই আসছে ও ছেড়ে যাচ্ছে। তবে দেশের ৪১টি গন্তব্যে থেকে ছেড়ে আসা নৌযানে যাত্রীর সংখ্যা অনেক কম। তবে শনিবার থেকে রাজধানীমুখী যাত্রীর সংখ্যা বাড়বে বলে তিনি মনে করছেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!