• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতিতে কৌশল খুঁজছে জামায়াত


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ৬, ২০১৬, ০১:২৩ পিএম
রাজনীতিতে কৌশল খুঁজছে জামায়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক

চাপের মুখে জামায়াতে ইসলাম এখন রাজনীতিতে টিকে থাকার কৌশল খুঁজছে। এ লক্ষ্যে জামায়াত দুটি বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। তার নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত কোনো দলের সঙ্গে মিশে যাওয়া। অবশ্য সেক্ষেত্রে ধর্মভিত্তিক কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিশে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই। তবে নতুন যে কোনো একটি পথ অনুসরণ করলেও গোপনে জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকবে। বর্তমানে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী ধর্মাশ্রয়ী দলটি যে কোনো সময় নিষিদ্ধ হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে রাজনীতিতে টিকে থাকার বিকল্প নিয়ে ভাবছে জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতে ইসলামী সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জামায়াতের নীতিনির্ধারকদের প্রধান টার্গেট হচ্ছে আসন্ন ২০১৯ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজস্ব ব্যানারে অংশ নেয়া। কিন্তু এই মুহূর্তে তাদের সামনে সেই সুযোগ নেই। কারণ দেশের সর্বোচ্চ আদালতে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি এখন বিচারাধীন। ফলে সরকার জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখলে তারা দলীয় ব্যানারে নির্বাচন করতে পারবে না। এ অবস্থায় নতুন নামে দল গঠন বা অন্য কোনো দলের সঙ্গে মিশে যাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছেন জামায়াত নেতারা। তবে নতুন নামে সংগঠন করলেও নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। জামায়াতের নেতাদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা নতুন নামের দলটিকে নিবন্ধন দেয়া হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় আছে। আর নিবন্ধন না পেলে দলটি ২০১৯ সালে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে দলীয় ব্যানারে নামতে পারবে না। সেক্ষেত্রে নেতারা দ্বিতীয় বিকল্প হিসেবে নিবন্ধিত কোনো দলের সঙ্গে মিশে যাওয়ার বিষয়টিকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে ২০ দলীয় জোটভুক্ত নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্য থেকে যে কোনো একটিকে বেছে নেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। এ বিষয়ে একাধিক শরিক দলের সঙ্গেই জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। ওসব বৈঠকে একীভূত হলে জামায়াতের নেতাদের কোন পর্যায়ের পদ দেয়া হবে তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে জোটের শরিক ধর্মভিত্তিক কোনো দলের সঙ্গে মিশতে রাজি নয় জামায়াত।

সূত্র জানায়, দেশী-বিদেশী চাপের মুখে জামায়াত কৌশলী হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে নিষিদ্ধ হওয়ার আগেই তারা নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। তবে নিষিদ্ধ হলেও দল হিসেবে জামায়াত গোপনে টিকে থাকবে এবং গোপন কর্মকান্ড অব্যাহত রাখবে। তাতে ৬০ বছরের বেশী বয়সী নেতারাই কাজ করবেন। আর তারা প্রকাশ্যে আসবেন না। এখন পর্যন্ত জামায়াত পাকিস্তানে দু’বার এবং স্বাধীন বাংলাদেশে একবার নিষিদ্ধ হয়েছে। তখনও দলটি গোপনে কর্মকান্ড চালিয়ে গেছে। এবারও একই পথ অনুসরণ করবে। আবার সুযোগ বুঝে আগের মতো ফের ঘুরে দাঁড়াবে এমন সিদ্ধান্তও নিয়ে রেখেছে জামায়াতের নীতিনির্ধারকরা।

ইতিমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। ফাঁসির আগে কারাগার থেকেই জামায়াতের নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নতুন কর্মকৌশল গ্রহণ সময়ের দাবি শিরোনামে এক গোপন চিঠি লেখেন মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। এখন মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ওই চিঠি সামনে রেখেই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। জামায়াত নেতা কামারুজ্জামান তার চিঠিতে দলটির দীর্ঘ ৬০ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের আত্মবিশ্লেষণ করে বেশকিছু নতুন কৌশল ও কর্মপন্থা প্রকাশ করেন। চিঠিতে তিনি বর্তমান পরিস্থিতিকে খুব নাজুক ও জামায়াতের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তা মোকাবেলায় তিনটি বিকল্প পথ বাতলে দেন। সেগুলো হচ্ছে- (১) যা হবার হবে, আমরা যেমন আছি তেমনি থাকব। (২) পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াত সিদ্ধান্ত নিয়ে পেছনে থেকে একটি রাজনৈতিক দল গড়ে তুলবে এবং (৩) যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আছে জামায়াতের নেতৃত্ব থেকে তাদের সরে দাঁড়ানো এবং সম্পূর্ণ নতুন প্রজন্মের হাতে দলের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া।

সূত্র আরো জানায়, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের প্রস্তাব আমলে নিয়েই নতুন চিন্তা-ভাবনা করছেন। তারই অংশ হিসেবেই নতুন কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে যাচ্ছে দলটি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই তারা এই কর্মকৌশলের বাস্তবায়নে জোরালো তৎপরতাও শুরু করেছে। এক্ষেত্রে জামায়াতের অন্যতম নীতিনির্ধারক ও দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। তিনি বিদেশে বসে এ বিষয়ে বুদ্ধি পরামর্শ দিচ্ছেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর তিনি দেশ ছাড়লেও এখনো ফেরেননি।

এদিকে নতুন করে জামায়াতের রাজনীতির করার বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলছেন- নির্বাচন কমিশনে দল হিসেবে এখন আর জামায়াতের নিবন্ধন নেই। সরকারের যে মনোভাব তাতে হয়তো এ বছরের মধ্যেই জামায়াত দল হিসেবে নিষিদ্ধ হবে বলে মনে হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী নামের এই দলটি বাংলাদেশে আর থাকবে না। তবে দলের অনুসারীরা থাকবেন এবং তারা নতুন নামে দল গঠন করে রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। সেই দলটি ২০১৯ সালের নির্বাচনেও অংশ নেবে। তবে তারা কীভাবে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন? সেই প্রক্রিয়া কেমন হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে নতুন নেতৃত্বের জন্য জামায়াতের তরুণরা কাজ করছে। অবশ্য বর্তমানে জামায়াতের কোনো দৃশ্যমান তৎপরতা নেই। যা আছে তা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বা প্রেস রিলিজে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানের নামে ওসব সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হলেও তাকে প্রকাশ্যে দেখা যায় না। পাওয়া যায় না টেলিফোনেও। মধ্যম বা তৃতীয় সারির কোনো নেতাও সেল ফোন খোলা রাখেন না। আর কর্মসূচি দেয়া হয় নামমাত্র। প্রথমদিকে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত শীর্ষ নেতাদের বিচারের রায় ঘোষণার পর জামায়াত-শিবির যে সহিংস প্রতিবাদ করেছে এখন তা নেই। এ অবস্থায় নেতাকর্মীদের ধরে রাখতে, তাদের মনোবল ফিরিয়ে আনতে এবং রাজনীতির মাঠে টিকে থাকতে জামায়াত নয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে।

অন্যদিকে জামায়াতের টিকে থাকার নতুন কৌশর প্রসঙ্গে দলটির একজন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য জানান- পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে হলে জামায়াতকে নতুন করে ভাবতেই হবে। কারণ যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে জামায়াত এখন দেশে-বিদেশে এমনকি ২০ দলীয় জোটেও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। আবার নিবন্ধন জটিলতায় নির্বাচনেও অংশ নিতে পারছে না। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার কোনো বিকল্প নেই। সেটি করতে শীর্ষ নেতাদের ওপর দলের তরুণ প্রজন্মের চাপও রয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!