• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজনীতিতে গুরুত্ব নেই রওশনের


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ২৪, ২০১৭, ০১:১৫ পিএম
রাজনীতিতে গুরুত্ব নেই রওশনের

ঢাকা : নিজ দল এবং সংসদে এখন ভূমিকা রাখতে দেখা যায় না জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদপত্নী বেগম রওশন এরশাদকে। অনেকে বলেছেন, দলে ‘ওনার কথা কেউ শোনে না।’

একসময় তার কাছের লোক বলে পরিচয় পাওয়া নেতারাও তার কথা শোনেন না। এমনকি তার খবরও রাখেন না কেউ। তাছাড়া কৌশলে দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যানের পদ ভাগিয়ে নিয়েও সুবিধা করতে পারছেন না তিনি। আবার ‘সরকারি দলের কল্যাণে’ সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা হয়েও জাতীয় ইস্যুতে উপস্থিতি হতাশাব্যঞ্জক। সংসদীয় ব্যবস্থায় বিরোধী দলীয় নেতাকে ‘ছায়া প্রধানমন্ত্রী’ বলা হলেও তাকে সে অবস্থায় কল্পনা করা যায় না।

যদিও তিনি এমন ‘ছায়া প্রধানমন্ত্রী’ হওয়ার ইচ্ছাশক্তি রাখেন না বলে অনেকেই বলেছেন। আর এসব কারণেই রাজনীতিতে গুরুত্ব কমছে সাবেক এই ফার্স্ট লেডির।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, রওশন এরশাদ নামেই শুধু বিরোধীদলীয় নেত্রী। দেশের জাতীয় অনেক ইস্যুতে গণমাধ্যমে তার সেরকম উপস্থিতিও নেই, গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিবৃতিও কম। দিলেও কালেভদ্রে আসে গণমাধ্যমে। কূটনীতিকরাও তাকে গুরুত্ব দেন না। বিদেশি মন্ত্রী, রাষ্ট্রীয় প্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ কেউ বাংলাদেশ সফরে এলে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে রওশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ সূচিও থাকে না।

অথচ বিপরীত চিত্র বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে। তিনি এখন আর বিরোধীদলীয় নেতা নন। রওশনের প্রতি অনীহার কারণে ‘মাঠের বিরোধী নেতা’ হিসেবে ঠিকই সরব থাকছেন খালেদা জিয়া।

রওশনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত জাতীয় পার্টির এমন এক নেতা সোনালীনিউজকে বলেন, রওশন এরশাদ দেশের রাজনীতি নিয়ে যতটা না ভাবেন তার ছেড়েও বেশি ভাবেন সংসার এবং দলে নিজের অবস্থান নিয়ে। সেই অবস্থান রক্ষার স্বার্থে, সুযোগ বুঝে করেন অভিমান, আবার অধিকার আদায়ে হুমকিও দেন মাঝে মাঝে।

দেশের সার্বিক বিষয়ে তাকে কার্যকর ভূমিকা তেমন একটা দেখাও যায় না। আবার কিছু ক্ষেত্রে তৎপরতা দেখালেও ওনার কথা কেই শোনেন না। দলেও গুরুত্ব পান না। এমনকি খোদ স্বামী এরশাদও শুনতে চান না তার কথা।

দলীয় সূত্র জানায়, এরশাদ, রওশন, জি এম কাদের ও রংপুর নিয়েই জাতীয় পার্টির রাজনীতি। এরশাদ অনেক চিন্তাভাবনা করে দলের কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন ভাই জি এম কাদেরকে। পার্টির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এমন স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

এ বিষয়ে রওশনের সঙ্গেও ঐকমত্য হয় এরশাদের। তার এ সিদ্ধান্তে রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টিও বিতরণ হয়। তাছাড়া কাদের দেশের রাজনীতিতে সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন এরশাদ।

কিন্তু এরশাদ সেটা সূচারুরূপে সামাল দিতে পারেননি। বাদ সাধেন রওশন। সুবিধাভোগী কয়েকজন সাংসদ ও মন্ত্রী ভুল বোঝান রওশনকে। বলেন, ‘দলে আপনি জিরো হয়ে যাচ্ছেন’। রাজনীতির কয়েকজন পোড় খাওয়া খেলোয়াড়ও সঙ্গ দেন তাকে। এতেই বেঁকে বসেন রওশন। এরশাদও পড়েন বেকায়দায়।

জানা যায়, সেই সময় সঙ্গ দেওয়া নেতারা রওশনকে সামনে নিয়ে জাতীয় পার্টির কর্তৃত্ব নিতে এবং মন্ত্রিত্ব বাগাতে চেয়েছিলেন। আবার কেউ মহাসচিব পদে নিজেকে পুনর্বহালের চেষ্টা করেছিলেন। এরশাদ-রওশন বিরোধ তুঙ্গে থাকলেও সে সময় চতুর এরশাদ রওশনকে বোঝাতে সক্ষম হন যে, দলে তার কর্তৃত্ব খর্ব করার জন্য এমন করছেন কয়েকজন নেতা।

রওশন তার ভুল বুঝতে পারেন এবং বেশ কিছু বিষয় থেকে পিছু হটেন। কিন্তু নিজ বিষয়ে থাকেন অনড়। এরশাদ নিরুপায় হয়ে রওশনকে দেন ১ নং কো-চেয়ারম্যানের পদ। এ নিয়ে রংপুরের নেতারা এবং জি এম কাদের হন মনোক্ষুণ্ন।

সেই থেকে জি এম কাদের নিজেকে কিছুটা আড়াল করার চেষ্টা করছেন। নামকাওয়াস্তে শুধু সামনে থাকছেন। কিন্তু দল গঠনে নিজের মতামত দিচেছন না মোটেও। রওশনের এমন আচরণে এরশাদ ও কাদের আর গুরুত্ব দিচ্ছেন না তাকে।

হুমকি দিয়ে নিজ দাবি আদায় করে নিলেও অন্য দাবিগুলো থেকে পিছু হটেন রওশন। তার এমন কৌশলী ভূমিকায় অনুসারীদের অনেকে পড়েন অস্বস্তিতে। এখন তারা রওশনকে এড়িয়ে চলছেন। আবার চেষ্টা করছেন এরশাদের আনুকূল্য পাওয়ার। এদিকে, একসময়ের রওশনপন্থি নেতারাও এখন শোনেন না রওশনের কথা। খবরও রাখেন না তার।

সম্প্রতি জাতীয় পার্টি সারা দেশে নির্বাচনের কাজ শুরু করে। এ লক্ষ্যে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঢাকায় মহাসমাবেশের আয়োজন করেন এরশাদ। সেই মহাসমাবেশে জাপার নেতাকর্মীরা রওশনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এরশাদের মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে তার ভূমিকার প্রশ্নে।

রওশনও সেই সমাবেশে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি কথা দিলাম এরশাদের মামলা প্রত্যাহার করার চেষ্টা করব। কিন্তু দুই মাস যেতে না যেতে তিনি সেই পথে হাঁটছেন না। সম্প্রতি রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয় যুব সংহতির ৩৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে কর্মীরা এরশাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে স্লোগান দিলে ক্ষেপে যান রওশন।

অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য শুরু করলেই নেতাকর্মীরা এরশাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে নানা স্লোগান শুরু করেন। পরে বক্তব্যে রওশন কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা চুপ কর, তোমরা কেমন শিক্ষিত? বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রকাশ্য কিছু বলা যায় না এটাও বোঝ না। মামলার বিচার নিয়ে পাবলিক মিটিংয়ে কি কিছু বলা যায়?।

তিনি আরো বলেন, ‘আমি না হয় দুই বছর ধরে বিরোধী দলের নেতা আছি। এতো বছর কি মামলা ছিল না? তখন তোমরা কার কাছে এভাবে চিৎকার করে মামলার কথা বলেছো। আমি তোমাদের কাছে এ রকম হৈ চৈ আশা করিনি। কিছু বলার থাকলে বাসায় এসো, আমি কথা বলব।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!