• ঢাকা
  • বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
আলোচিত ৫ জানুয়ারি আজ

রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন উত্তেজনা


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৫, ২০১৭, ১২:১২ এএম
রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন উত্তেজনা

আজ বহুল আলোচিত ৫ জানুয়ারি। বছর ঘুরে আবারও এসেছে দিনটি। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলে সেই নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহতের ঘোষণা দেয় বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। সেই সঙ্গে তারা ব্যাপক নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশব্যাপী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। নির্বাচন বানচাল করার জন্য ৪ জানুয়ারি রাতে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থকরা দেশব্যাপী শত শত স্কুলে আগুন দেয়। বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচন বর্জনের কারণে অর্ধেকেরও বেশি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। বিএনপিকে নিয়ে আবার নির্বাচন হবে তাদের এমন আশা এক বছরেও পূর্ণ না হওয়ায় ওই নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে বিএনপি লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে।

দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দিয়ে নিজ কার্যালয়ে অবস্থান নেন। সেই সঙ্গে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবেন না বলে ঘোষণা দেন। এদিকে ওই বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি দুটি দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির এক মাস ১০ দিন পর ৫ এপ্রিল তিনি অফিস থেকে আদালতে গিয়ে জামিন নেন এবং সেখান থেকে বাসায় ফিরে যান। এর মধ্য দিয়ে তিন মাস ধরে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থানের পরিসমাপ্তি হয়। রাজনৈতিক অঙ্গনে ফিরে আসে স্বস্তির পরিবেশ। তবে বিএনপি নেত্রীর বাড়ি ফেরার আগে অবরোধ কর্মসূচির প্রথম তিন মাসে যানবাহনে আগুন ও পেট্রলবোমা হামলায় শতাধিক সাধারণ নারী, পুরুষ ও শিশু মারা যায়।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ সালের  জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত রাজনৈতিক সংঘাতে ১২২ জন মানুষ প্রাণ হারায়। এর মধ্যে ৬৯ জন মারা যান পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয়ে। নিহত ১২২ জনের মধ্যে ৯০ জনই সাধারণ মানুষ। বিপুলসংখ্যক মানুষ নিহত হওয়া ছাড়াও ওই সময়ের রাজনৈতিক সংঘাতে তিন হাজার ৫১ জন গুরুতর আহত হন।

অন্যদিকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের অর্থনীতি। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) করা এক হিসাব অনুযায়ী বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের প্রথম ৫০ দিনে দেশের  আর্থিক ক্ষতি হয় প্রায় এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। সংগঠনটির হিসাবে এক দিনের হরতালে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দুই হাজার ২৭৭ কোটি টাকা।

বিএনপি-জামায়াতের ওই নাশকতামূলক আন্দোলনের জেরে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের হুকুমের আসামি হয়ে দাঁড়াতে হয় কাঠগড়ায়। হামলা-মামলায় কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত জর্জরিত বিএনপি এরপর থেকে বিভিন্ন সময় আন্দোলনের কথা বলে এলেও ঘর গুছিয়ে আর মাঠে নামতে পারেনি। গত বছর ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বিতীয় বছর পূর্তির দিনটিতে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস হিসেবে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ও রাসেল স্কয়ারে দুটি সমাবেশ করে।

একই দিনে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে বিএনপি নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পালন করে গণতন্ত্র হত্যা দিবস। এ বছর এরই মধ্যে ঢাকার দুই জায়গায় সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আর একই দিন রাজধানীর বাইরে সারা দেশে কালো পতাকা মিছিল এবং ৭ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বছরের প্রথম দিনই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চাওয়া হয়েছে কিন্তু এখনো অনুমতি পায়নি বলে জানিয়েছে বিএনপি। বিগত একটি বছর কোনো প্রকার আন্দোলন জমাতে না পারা বিএনপিকে এরই মধ্যে অনেকেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বন্দি সংবাদ সম্মেলননির্ভর দল বলে আখ্যা দিয়েছেন।

অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবীরা দলটিকে জনসাধারণের ইস্যুতে আন্দোলন গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু বিএনপির নীতিনির্ধারকরা ওই দিকে না তাকিয়ে আবারও ইস্যু হিসেবে সামানে এনেছে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন, বিএনপিকে জনগণ পথে নামতে দেবে না। এদিকে এ দিন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশেষ আদালতে হাজিরা দিতে যাবেন। তার এই আদালতে যাওয়াকে নিয়ে আদালত চত্বর ও এর আশপাশে ব্যাপক শোডাউনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। ফলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

 

Wordbridge School
Link copied!