• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে এনবিআর-অর্থমন্ত্রীর টানাপোড়েন


সোনালীনিউজ রিপোর্ট মে ২, ২০১৬, ১২:২১ পিএম
রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে এনবিআর-অর্থমন্ত্রীর টানাপোড়েন

আসন্ন বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ নিয়ে অর্থমন্ত্রী ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মধ্যে চলছে টানাপোড়েন। এনবিআর চাচ্ছে আগামী বাজেটে রাজস্ব আয়ের সহনশীর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হোক। কিন্তু অর্থমন্ত্রী চাচ্ছে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ আরো বাড়াতে।

এ ব্যাপারে এনবিআরের পক্ষ থেকে সরকারের উচ্চমহলের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। তবে অর্থমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুসরণে রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণে এনবিআরের রাজস্ব বাজেট প্রস্তুতির কর্মকর্তারা কাজ করলেও তারা লক্ষ্যমাত্রা মানতে রাজি নন। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছর সামনে রেখে রাজস্ব আয়ের আকাশছোঁয়া লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু এনবিআর তা মানতে রাজি নয়। ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা নির্ধারণ করে এনবিআর কর্মকর্তাদের রাজস্ব বাজেট প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এনবিআরের রাজস্ব বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তারা ওই লক্ষ্যমাত্রা কমাতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।

অর্থমন্ত্রী ইতিমধ্যে মোট বাজেটের আকার নির্ধারণে একটি খসড়া হিসাব কষে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়েছেন। তবে বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত করার সময় ওই হিসাবে পরিবর্তন হতে পারে। বিশেষভাবে এনবিআর কর্মকর্তারা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমাতে অর্থমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেছেন। এনবিআর থেকে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মতামতও চাওয়া হবে।
সূত্র জানায়, এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আগামী অর্থবছরে মোট বাজেটের আকার ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করে বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। তাতে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। তার মধ্যে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি, এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার ২৫০ কোটি এবং করবহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩২ হাজার ২৫০ কোটি টাকা আদায়ের হিসাব কষা হয়েছে।

তবে এনবিআর রাজস্ব আদায়ের ওই লক্ষ্যমাত্রা কমাতে জোরালো অবস্থান নিলেও রাজস্ব বাজেট প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে। সে লক্ষ্যে রাজস্ব বাজেটে আয়কর, মূসক ও শুল্কসংক্রান্ত কাজের জন্য পৃথক তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং ওই তিন কমিটির আহ্বায়ক তিন শাখার এনবিআর সদস্য। আর তিন কমিটির সমন্বয়ের কাজ করছেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
সূত্র আরো জানায়, এনবিআরকে দেয়া অর্থমন্ত্রীর রাজস্ব বাজেট প্রস্তুতির দিকনির্দেশনায় বলা হয়েছে─বাজেটের আকার বাড়ছে। ফলে বাড়ছে এনবিআরের দায়িত্বও। কারণ আগামী দিনে আয়কর আদায়ের আওতা বাড়াতে হবে। আশা করা যায় অনলাইনে ভ্যাট বা মূসক আদায়ের ফলে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের জাম্প হবে। পাশাপাশি আয়কর ও ভ্যাটে নির্ভরশীলতা বাড়লেও শুল্কে নির্ভরশীলতা কমাতে হবে।

কারণ বিশ্ববাণিজ্যে এক দেশের প্রতি অন্য দেশের নির্ভরশীলতায় শুল্ক আদায়ে ছাড় দেয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকবে। আর ওই ধারা থেকে বাংলাদেশও বের হতে পারবে না। এর বিপরীতে এনবিআর জানিয়েছে- রাজস্ব আদায়ের তিনটি আইন পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে রাজস্ব আয় কয়েক গুণ বাড়বে। আগামী অর্থবছরে ভ্যাট আইন সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং নতুন আয়কর ও শুল্ক আইন চূড়ান্ত করা হবে। ওই দুই আইন ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হবে।

তাছাড়া আগামী অর্থবছরের মধ্যে এনবিআরের রাজস্ব আদায় ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ অটোমেশনে কাজ চলছে। এভাবে এনবিআর প্রতিদিনই আরো আধুনিক একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে। আশা করা যায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরের আগেই এনবিআর সম্পূর্ণ আধুূনিক প্রযুক্তিনির্ভর একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। ফলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সহজেই এনবিআর বর্তমান সময়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি রাজস্ব আদায়ে সক্ষম হবে।
তবে ২ লাখ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের প্রস্তুতিতে আরো একটি অর্থবছর প্রয়োজন। এ ব্যাপারে বিশ্লেষকরাও মনে করেন─এনবিআরের সক্ষমতা বাড়িয়েই রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াতে হবে। তা না হলে এনবিআরের রাজস্ব ঘাটতিতে পুরো অর্থনীতির ভারসাম্যই নষ্ট হবে।

এদিকে গত দুই অর্থবছর এবং চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণকালেই এনবিআর অর্থমন্ত্রীর কাছে সহনশীল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী নিজের সিদ্ধান্তে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েই চলেছেন। চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা।

যা গত অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৮ কোটি টাকার চেয়ে প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা এবং এর আগের অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার চেয়ে প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকা বেশি। কিন্তু রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী লক্ষ্যমাত্রা চাপিয়ে দিলেও শেষরক্ষা হচ্ছে না। ফলে গত দুই অর্থবছরেই মাঝামাঝিতে ঘাটতির মুখে লক্ষ্যমাত্রা সংশোধনে বাধ্য হয়েছে। আর চলতি অর্থবছরেও প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেও লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ কোটিতে ওঠানো হলো।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা চাচ্ছেন আগামী অর্থবছরের জন্য এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা বা এর কিছু কম নির্ধারণ করা হোক। আর অর্থনীতিবিদরা মনে করেন─এনবিআর চেষ্টা করলেও এখনো পুরনো ধ্যান-ধারণা থেকে সম্পূর্ণ বেরিয়ে আসতে পারেনি। ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে এখনো ১১ লাখের কিছু বেশি মানুষ রিটার্ন দাখিল করে এবং রিটার্ন দাখিলে এখনো ম্যানুয়াল পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।

শুল্কসংক্রান্ত কাজেও সেই পুরনো পদ্ধতি রয়েছে। ভ্যাট আদায়ে এখনো অটোমেশন হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে এনবিআরের ওপর বড় অঙ্কের লক্ষ্যমাত্রা চাপিয়ে দেয়া হলে রাজস্ব ঘাটতি হবে। আর ব্যয়ের লম্বা ফর্দে আয়ের কোনো ব্যবস্থা না থাকলে পুরো অর্থনীতির ভারসাম্য নষ্ট হবে। কারণ বাজেট অর্থায়নে কর আহরণই প্রধান খাত। কিন্তু ৪৩ শতাংশ মানুষ কর দিলেও বাকি ৫৭ শতাংশ মানুষ এখনো করের আওতার বাইরে।

আগামী অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, বাজেটে মূল অর্থায়নের দায়িত্ব এনবিআরের ওপর। বাজেটের আকার বাড়ছে, স্বাভাবিকভাবে এনবিআরের ওপর চাপও বাড়বে। আশা করি, আগামী অর্থবছরে এনবিআরের কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আমা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!