• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
জিজ্ঞাসাবাদে নানা তথ্য

রাজীব গান্ধীর পথচলা বাংলাভাইয়ের হাত ধরে


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৭, ২০১৭, ১১:০৬ এএম
রাজীব গান্ধীর পথচলা বাংলাভাইয়ের হাত ধরে

ঢাকা: গুলশান হামলার পরিকল্পনাকারী জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধী নিজ বুদ্ধিমত্তায় নব্য জেএমবির অন্যতম শীর্ষ নেতায় পরিণত হন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সংগঠিত জেএমবির শীর্ষ নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইয়ের হাত ধরেই মূলত রাজীব গান্ধীর জঙ্গি জীবনের পথচলা শুরু হয়।

ত্বরিত বুদ্ধি ও সামরিক কৌশল পছন্দ হওয়ায় বাংলাভাই রাজীব গান্ধীকে জেএমবি সদস্যদের সামরিক ও শারীরিক প্রশিক্ষণের দায়িত্ব দেয়। সেই পথ ধরে হেঁটেই সে পরবর্তীকালে নব্য জেএমবির প্রথম সারির নেতা ও অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। আট দিনের রিমান্ডে থাকা রাজীব গান্ধী গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব কথা স্বীকার করেছে। 
গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত রাজীব গান্ধী নব্য জেএমবির ব্যাপারে তথ্য দিতে শুরু করেছে। গত তিন দিনে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের গোয়েন্দারা তাকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এ সময় রাজীব গান্ধী বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে বলে কর্মকর্তারা দাবি করেন। 

জিজ্ঞাসাবাদসংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, নব্য জেএমবির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীর গান্ধীকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ সময় সে তামিম চৌধুরী ও মারজানের সঙ্গে তার সম্পর্কের ব্যাপারে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছে। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টের হামলার পরিকল্পনার ব্যাপারে কী কী আলোচনা হয়েছে, তারা দুজন ছাড়া নব্য জেএমবির আর কোন কোন নেতা সেখানে উপস্থিত ছিল, আরো কোথায় কোথায় হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল- এসব ব্যাপারে রাজীব গান্ধীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। 

রাজীর গান্ধী গোয়েন্দাদের জানিয়েছে, হলি আর্টিজানের খোঁজ পাওয়ার পর মারজানের সঙ্গে তার কথা হয়। মারজান তখন তামিম চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী দিকনির্দেশনা দেয়ার কথা জানায়। এর কিছুদিন পর মারজান আর্টিজানে হামলা চালানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়। হলি আর্টিজানে হামলার ব্যাপারে মারজানের যুক্তি ছিল, সেখানে অনেক বিদেশি নাগরিক যাতায়াত করে। একসঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের পাওয়া যাবে। একসঙ্গে অনেক বিদেশিকে হত্যা করা সম্ভব হলে তাদের হামলার মূল উদ্দেশ্য সফল হবে। এরপর হামলার পরিকল্পনা নিয়ে তার মারজানের সঙ্গে অনেকবার আলোচনা হয়েছে। হলি আর্টিজানের খোঁজ পাওয়ার আগে আরো তিনটি স্থান নির্বাচন করা হয়েছিল। মারজানের পরামর্শেই টার্গেট বদল করা হয়। মারজান হলি আর্টিজানে হামলার পরিকল্পনার পাশাপাশি অপারেশন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে বলে রাজীব গান্ধী গোয়েন্দাদের জানায়। 

কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) এক কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারকৃত নব্য জেএমবির সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধীর নাম বেরিয়ে আসে। মারজানের পরেই বিভিন্ন পরিকল্পনায় রাজীব গান্ধী প্রধান ভূমিকা পালন করত। গুলশান হামলার সঙ্গে জড়িত অপর নব্য জেএমবি নেতা বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ওরফে রাহুলের ব্যাপারেও জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে রাজীব গান্ধী বলেছে, সে বাংলাভাইয়ের একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল। বাংলাভাইয়ের নির্দেশে ওই সময় সে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জে জেএমবির কার্যক্রম পরিচালনা করত। গোবিন্দগঞ্জের চরাঞ্চলে জেএমবির সদস্যদের সামরিক ও শারীরিক প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ শুরু করে। পরে বাংলাভাই তাকে পুরো গাইবান্ধা জেলার জেএমবির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়। বাংলাভাইসহ জেএমবির শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার ও ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পরেও রাজীব গান্ধী সক্রিয় ছিলেন। অবশ্য তখন পর্যন্ত সে জাহাঙ্গীর নামেই পরিচিত ছিল। গাইবান্ধায় তার একটি আস্তানা ছিল। পরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার আস্তানায় অভিযান চালায়। রাজীব গান্ধী তখন গাইবান্ধা থেকে পালিয়ে রংপুর-দিনাজপুর এলাকায় চলে যায়।

গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে ২০১৬ সালে তার পরিকল্পনায় উত্তরাঞ্চলে তরুণ দত্ত ও দেবেশ চন্দ্রকে নব্য জেএমবির সদস্যরা খুন করেছে বলে স্বীকার করেছে রাজীব। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!