• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
বন্ধু দিবস

রাজ্জাক ভাই আমরা উত্তম বন্ধু: ববিতা


বাবুল হৃদয় আগস্ট ৬, ২০১৭, ০৩:০০ পিএম
রাজ্জাক ভাই আমরা উত্তম বন্ধু: ববিতা

ঢাকা: ১৯৭৭ সালে ‘অনন্ত প্রেম’ মুক্তি পেলে এই জুটি দর্শকের কাছে রীতিমতো ক্রেজে পরিণত হয়। এ ছবির মাধ্যমে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মতো চুম্বন দৃশ্যের ব্যবহার করে চরম সাহসিকতার পরিচয় দেওয়া হয়। ‘অনন্ত প্রেম’ রাজ্জাক পরিচালিত প্রথম ছবি।

ছবির শেষ দৃশ্যে নায়ক-নায়িকার গভীর চুম্বনের দৃশ্য ছিল। ছবির গল্পকাঠামোতেও ছিল নতুনত্ব। নানা ঘটনার এক পর্যায়ে দেখা যায় শৈশবে মাতৃহীন ববিতা সৎ মায়ের অত্যাচার মুখবুজে সহ্য করে আসছিলেন। এক লম্পট ব্যক্তির সঙ্গে তার বিয়ে দিতে চাইলে বিয়ের আসর থেকে তিনি পালান। ট্রেনে রাজ্জাক ও ববিতার দেখা হয়ে যায়।

দুজনই পালিয়ে চলে যান পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম অরণ্যে। সেখানে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে তারা একে অপরের প্রেমে পড়ে যান। পুলিশ তাদের খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে তাদের সন্ধান পায়। অরণ্যের মধ্যে তাদের ধাওয়া করে পুলিশ। পালিয়ে বাঁচার জন্য সীমান্ত পাড়ি দিতে যায় তারা। একটি ঝরনা পার হওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় দুজনের।

মৃত্যুর সময় পরস্পরকে চুম্বন করেন তারা। শেষ পর্যন্ত ঝরনার তীরে পড়ে থাকে প্রেমিক-প্রেমিকার আলিঙ্গনাবদ্ধ প্রাণহীন দেহ। শেষ দৃশ্যটি ছাড়াও ববিতা-রাজ্জাকের প্রেমের বেশকিছু সাহসী দৃশ্য ছিল এতে। অভিনয় এতটাই প্রাণবন্ত ও স্বাভাবিক হয়েছিল যে, দুজনের মধ্যে বাস্তব জীবনেও প্রেম চলছে—এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে ছবিটি মুক্তির পর।

এ নিয়ে নায়করাজ স্মৃতিচারণে বলেন, ববিতা দৃশ্যটি করার পর খুব নার্ভাস হয়ে পড়েন। তিনি তখনো অবিবাহিত ছিলেন। ভয় পেয়েছিলেন এমন একটি দৃশ্যে অভিনয় করার পর তার হয়তো আর বিয়েই হবে না। পরবর্তীতে তিনি দৃশ্যটির শিল্পরূপ দেখে মুগ্ধ হন। ছবির প্রেমের দৃশ্যে দর্শক যেমন আবেগাপ্লুত হয়েছে তেমনি শেষ দৃশ্যে বিয়োগান্তক পরিণতি দেখে চোখ মুছতে মুছতে সিনেমা হল থেকে বেরিয়েছে।

ঢালিউডে এখন পর্যন্ত নির্মিত প্রেমের ছবির মধ্যে নিঃসন্দেহে অন্যতম সেরা রাজ্জাক-ববিতা জুটির ‘অনন্ত প্রেম’। ববিতা বলেন, রাজ্জাক ভাই আমাকে পপি বলে ডাকেন। আমার ডাক নাম পপি। তার সঙ্গে আমার প্রথম ছবি ছিল ‘সংসার’। ওই ছবিতে আমরা ছিলাম বাবা-মেয়ে।

এর পরের ছবি ‘শেষ পর্যন্ত’। সেখানে আমরা প্রেমিক-প্রেমিকা। আগের ছবির বাবার সঙ্গে এ ছবিতে প্রেম করব। আমি স্বাভাবিক হতে পারছিলাম না। রাজ্জাক ভাই আমাকে বললেন, আরে পাগল এটি তো সত্যি নয়, অভিনয়। তারপর স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করলাম।

‘অনন্ত প্রেম’ ছবির চুম্বন দৃশ্যের কথা বলতে গিয়ে ববিতা বলেন, তিনি আমাকে এমনভাবে দৃশ্যটির বর্ণনা দিলেন আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনলাম, এই দৃশ্যে কাজ করলাম। পরে ভাবলাম হায়, এ কী করলাম, এই দৃশ্য দেখলে আমাকে তো আর কেউ বিয়ে করবে না। কান্নাকাটি শুরু করলাম। রাজ্জাক ভাই সান্ত্বনা, দিলেন, আশ্বস্ত করে বললেন, তুমি আগে দৃশ্যটি দেখ, যদি ভালো না লাগে এটি বাদ দিয়ে দেব। পর্দায় দেখার পর আসলেই মনে হয়েছে এটি একটি শিল্পরূপ। দৃশ্যটি বাদ দিতে বারণ করার পরও রাজ্জাক ভাই আমার ভবিষ্যৎ জীবনের কথা ভেবে ছবিতে আর তা রাখেননি।

আসলে রাজ্জাক ভাই শুধু ভালো সহশিল্পী নন, একজন উত্তম বন্ধু আমার। রাজ্জাক বলেন, ববিতা তো আমার পরিবারেরই সদস্য। সে তার যে কোনো বিষয় আমার আর লক্ষ্মীর (নায়করাজের সহধর্মিণী) সঙ্গে শেয়ার করে। তার বিয়ের সময়ের ঘটনাই বলি, বিয়ের দিন সে এসে আমার বাসায় লুকিয়ে ছিল। কোনোভাবেই বিয়ে করবে না। শেষ পর্যন্ত আমি আর লক্ষ্মী অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে তাকে রাজি করালাম। আসলে আমরা চিরদিনের ভালো বন্ধু।।

সোনালীনিউজ/বিএইচ

Wordbridge School
Link copied!