• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাণীনগরে দম ফেলার সময় নেই কামারদের


রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধ সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৬, ০৫:০৭ পিএম
রাণীনগরে দম ফেলার সময় নেই কামারদের

ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে নওগাঁর রাণীনগরের বিভিন্ন এলাকায় কামাররা দেশী প্রযুক্তির দা, কুরাল, বেকি, খুন্তা ও কাটারী বানাতে বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। দম ফেলবারও সময় নেই তাদের। একদিকে হাপরে আগুনে শিখা, অন্যদিকে হাতুড়ি পিঠানোর টুংটাং শব্দে তৈরি হচ্ছে দা, বটি ছুরি ও চাপাতি। আর কদির পর মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। হাট-বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় ইতিমধ্যেই গ্রামের লোকজন গরু, মহিষ, ছাগল জবাই ও মাংস তৈরির কাজের জন্য কামারীদের কাছে প্রয়োজনীয় ধারালো দেশী তৈরি চাকু, বটি, কাটারি ও ছুরি তৈরির আগাম অর্ডার দেয়া শুরু করায় কামার পল্লীগুলোতে টুংটুং শব্দে এখন মুখরিত।

গ্রামীণ প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী কামার শিল্প নানা সংকটে আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, কারিগরদের মজুরী বৃদ্ধি, তৈরি পণ্যসামগ্রী বিক্রয় মূল্য কম, কয়লার মূল্য বৃদ্ধি, বিদেশ থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীদের স্টীল সামগ্রী আমদানিসহ চরম আর্থিক সংকট ও উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা কম থাকায় বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে রাণীনগর উপজেলার কামার শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। 

আধুনিকতার উৎকর্ষ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নানা সমস্যার কারণে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে হাজার বছরের গ্রাম-বাংলার মানুষের প্রিয় কামার শিল্প। এক সময় রাণীনগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মকার পরিবার থাকলেও তাদের তৈরি পণ্যসামগ্রী প্রযুক্তির ছোঁয়ার কাছে টিকে থাকতে না পারাই বেশকিছু পরিবার তাদের পৈতিক পেশা ছেড়ে পরিবারের অভাব-অনাটন ও চাহিদার তাগিদে লাভজনক অন্য পেশায় চলে গেছে। 

বর্তমানে উপজেলার খট্টেশ্বর, রাজাপুর, ত্রীমোহনী, বেলঘড়িয়া, করজগ্রাম, কাঞ্চনপুর, নগর সহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৩০টি পরিবারের কর্মকাররা তাদের পৈতিক পেশা অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে হলেও দু’বেলা ভাতের আশায় তারা এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। যতটুকু লাভ হোক না কেন, কোন রকম দিন চললেই তারা বেজাই খুশি অন্য পেশায় যেতে তারা নারাজ। 

রাণীনগর বাজার, ত্রিমহনীর হাট, কুবরাতলীর মোড়, রেলগেট, কুজাইল বাজার, বেতগাড়ী বাজার, আবাদপুকুর হাট, কাটরাশিন বাজার, লোহাচূড়া হাটসহ প্রতিটি হাট-বাজারে ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে কামার কারিগররা সারা বছরের তুলনায় বর্তমানে রাতদিন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। এখানকার কামারদের নিপুন হাতে তৈরি বটি, ছুরি, কাটারি, দা, বেকি, কুঠার, খুন্তা ও লাঙ্গলের ফলাসহ বিভিন্ন ধরণের যাবতীয় প্রয়োজনীয় লৌহজাত দ্রব্য তৈরি করেন। 

রাণীনগর উপজেলার খট্টেশ্বর গ্রামের সদয় কর্মকার ও রাজাপুর গ্রামের আসলাম কারিগর জানান, লোহা পিটিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা আমার পেশা, বাপ-দাদার পৈতিক সূত্রে আমি এই পেশায় জড়িত। একটি মাঝারি ধরণের দা ও কাটারি তৈরি করে ওজন অনুযায়ী ২শ’ ৮০টাকা থেকে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়। সাড়া দিন হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যে কয়টি জিনিস তৈরি করি তা বিক্রয় করে খুব বেশি লাভ না হলেও পরিবার-পরিজন নিয়ে ডাল-ভাত খেয়ে বেচে থাকার স্বার্থে আদি এই পেশা আমি ধরে রেখেছি। তবে সাড়া বছর কাজ-কর্মের ব্যস্ততা তেমন না থাকলেও কুরবানী ঈদকে সামনে রেখে আমার কর্ম ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। সাড়া বছর এই রকম কাজ থাকলে ভালই হত।

ত্রীমোহনী গ্রামের নারায়ন চন্দ্র কর্মকার (৬৫) জানান, আমার বাপ-দাদার মূল পেশা ছিল এটা। তারা গত হওয়ার পর ওই সূত্রে ধরে আমার জীবনেরও শেষ মূহুর্তে এই পেশা ধরে রেখেছি। সাড়া দিন চাকু, বটি তৈরি করে যা আয় হয় তা দিয়েই পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে বাচি। কেন না এই পেশা ছেড়ে অন্য কোন ভাল পেশায় যাব এই রকম আর্থিক সংগতি আমার নেই। তবে সরকারিভাবে এবং এনজিওর মাধ্যমে আমাদের রাণীনগরের কামাদেরকে সুদ মুক্ত ঋন দিলে পাইকারি মূল্যে উপকরণ কিনতে পারলে অবশ্যই এই দেশীয় কামার শিল্প পূর্বের ন্যায় ঘুড়ে দাড়াবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!